খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তার বেহাল দশা, ভোগান্তিতে টিকাটুলিবাসী

, জাতীয়

খন্দকার আসিফুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-05-23 06:39:28

শহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা খুঁড়ে চলছে ঢাকা ওয়াসা, ডেসকো, ডিপিডিসি ও নগর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম। তবে উন্নয়ন কার্যক্রমের এই খোঁড়াখুঁড়িতে চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী।

নগরবাসীর স্বার্থে ভূগর্ভস্থ পানির সংযোগ, গ্যাসের সংযোগ, বৈদ্যুতিক সংযোগ কিংবা ড্রেনেজ ব্যবস্থা- এ সমস্ত সংযোগের রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়নে রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি হবে এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু জনগণের প্রশ্ন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নতুন রাস্তা কেটে ফেলতে সময় না নিলেও মেরামত করতে কেন এত সময় নেয়া হয়, আর কেনই বা একই রাস্তা বছরে কয়েকবার করে কাটতে হয়? জনসাধারণের এত ভোগান্তির পরও বছরের পর বছর ধরে এইসব সংস্থাগুলোর মধ্যে কেন হয়না সমন্বয়?

রাজধানী ঢাকার টিকাটুলি এলাকায় রয়েছে জনপ্রিয় শপিংমল রাজধানী সুপারমার্কেট, চৌধুরী শপিংমল ও সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটিসহ বেশকটি স্থাপনা ও মন্দির। এর ফলে উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত- সব শ্রেণির মানুষের আনাগোনায় জমজমাট থাকে পুরো এলাকা। চৌধুরী শপিংমল, রাজধানী সুপার মার্কেট ও সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির মাঝের সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষসহ, রিকশা, ভ্যান ও ব্যক্তিগত যানবাহনের যাতায়াত। এ কারণে মার্কেটগুলোতেও ক্রেতা উপস্থিতি হতো বেশ। কিন্তু গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ডিপিডিসি ও ওয়াসা'র উন্নয়ন কার্যক্রমের খোঁড়াখুঁড়িতে টিকাটুলির এই সড়কটির বেহাল দশার কারণে ভোগান্তির শেষ নেই বলে জানিয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ী ও জনসাধারণ।

সড়কটির বেহাল দশার কারণে ভোগান্তির শেষ নেই

বুধবার (২২ মে) টিকেটটুলি এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চৌধুরী শপিং মল ও রাজধানী সুপারমার্কেটের সামনের সড়কটি যেন একটি বিধ্বস্ত সড়কের রূপ নিয়েছে। টিকাটুলি মোড় থেকে রাজধানী মার্কেটের দিকে ঢোকার শুরুতেই চোখে পড়বে রাস্তার বেশিরভাগ জায়গাজুড়ে বিশাল এক গর্ত। সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে চলছে ওয়াসার কাজ। তিন-চারদিন ধরে এখানে কাজ চলছে বলে জানান শ্রমিকরা। 

বিশাল এই গর্তের পাশ দিয়েই ভাঙা রাস্তায় খুব কষ্টে প্যাডেল ছেড়ে শরিরের সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে রিকশা টেনে নিয়ে যাচ্ছেন চালকরা। এখানেই শেষ নয়। একটু সামনে এগিয়ে গেলেই দেখা যায়, আরও একটি লম্বা বিশাল গর্ত। সেখানে কাজ করছে ডিপিডিসি। গর্তের উপরে এবং আশপাশে রাখা আছে বিশাল বিশাল ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক ক্যাবল। রাস্তার ভালো অংশটুকুতে রাখা হয়েছে গর্তের মাটি, বালি ও শুরকি। বন্ধ হয়ে গেছে রাস্তা। পুরো রাস্তাজুড়েই এই একই অবস্থা। খুব কষ্টে রাস্তায় চলতে হচ্ছে পথচারীদের। 

উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়িতে এই সড়কের বেহাল দশা কবে থেকে এমন প্রশ্নে সেখানকার ব্যবসায়ী মো. শুক্কুর আলম বার্তা২৪. কমকে জানান, রোজার ঈদের পর থেকেই শুরু হয়েছে এই খোঁড়াখুড়ি।

তিনি বলেন, ‘এতদিনের এই খোঁড়াখুঁড়িতে আমাদের ব্যবসা শেষ। কাস্টমার দোকানে আসতে পারে না ব্যবসা হবে কোথা থেকে। রাস্তা এমনভাবে কাটছে যে, গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, মানুষের হাঁটাচলাই অনেক কষ্ট হয়ে যায়। অবস্থা দেথে আমার মনে হচ্ছে কোরবানি ঈদের আগে এই কাজ শেষ হবে না। সরকার উন্নয়ন করুক, উন্নয়নের দরকার আছে কিন্তু সময়ের কাজ সময়ে শেষ করুক। আমাদের এই কষ্টের কথা কার কাছে বলব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘কারে বলব দুঃখের কথা। না পারি কইতে, না পারি সইতে। দোকানে একদম বেচাকেনা নাই। সারাদিন বইসা বিক্রি হয় ২০০, ২৫০, ৩০০ টাকা। এই টাকা দিয়া কি করমু, দোকানের স্টাফের বেতন দিমু না নিজে চলমু?। আজকে এক মাসের উপরে হইছে রাস্তাটার এই অবস্থা। কাটা ছেঁড়া কইরা কিচ্ছু রাখে নাই। না চলতে পারে গাড়ি-ঘোড়া, আর মানুষের চলার তো কষ্টের শেষ নাই। মানুষ না আসলে আমরা বিক্রি করব কার কাছে?। সরকারের প্রতি অনুরোধ, রাস্তাটা যেন খুব তাড়াতাড়ি মেরামত করে দেয়।

রাস্তার বেশিরভাগ জায়গাজুড়ে চলছে নির্মাণ কাজ

এই রাস্তা ধরেই প্রতিদিন যাতায়াত করেন ব্যবসায়ী মো. মনিরুল ইসলাম। প্রতিবেদককে তথ্য সংগ্রহ করতে দেখে নিজে এসেই কথা বলেন তিনি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, এই রাস্তাটা কাটা থাকার কারণে গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে অনেকদূর ঘুরে আমার কর্মস্থলে যেতে হয়। এই রাস্তাটি প্রতি বছর কমপক্ষে ৩/৪ বার কাটা হয়। যেখানে একবারে করলে হয়ে যায় সেখানে এক এক কোম্পানি একেকবার এসে কাটাকুটি করে। দুই মাস আগেই রাস্তাটি কেটেছিল। এখন আবার কেটেছে। আমাদের সাধারণের বলার কিছু নাই। বিভিন্ন সংস্থার গাফিলতির কারণে আমাদের জনসাধারণের এই ভোগান্তি। এই কাজের সাথে সংযুক্ত কর্তৃপক্ষের উচিত এদিকে সুষ্ঠু নজর দেয়া। 

পথচারীরা আরও জানান, ঢাকা ওয়াসা, ডেসকো, ডিপিডিসি ও নগর কর্তৃপক্ষসহ এসব পরিষেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়িতে বৃষ্টি নামলেই কাদা-পানিতে আরও বেশি নাজেহাল হতে হচ্ছে নগরবাসিকে। ভোগান্তির বোঝা কাধে নিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই এই সড়কে আসা-যাওয়া করেন শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণ। তাদের দাবি, জনসাধারণের ভোগান্তি এড়াতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব পরিষেবা সংস্থার কাজ শেষ করে সড়কটি যেন মেরামত করে দেওয়া হয়। 

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে টিকাটুলির এ সড়কের খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসা'র উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ও এন্ড এম) প্রকৌ. এ.কে.এম সহিদ উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমিতো বলতে পারব না ফিল্ডের অবস্থা। হয়ত কয়েকদিন হয়েছে কেটেছে।’ 

বার্তা২৪.কমের প্রতিবেদকের কাছে সড়কের ঠিকানা চেয়ে এ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘কোথায় সমস্যাটা বলেন, আপনি আমাকে ঠিকানাটা দেন আমি দায়িত্বরতদের বলে দিচ্ছি। তারা রেক্টিফাই করে ঠিক করে দিবে। অথবা আমাকে জানালে আমি আপনাকে বিস্তারিত জানিয়ে দিব এবং সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারব।’

এর আগে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে গণমাধ্যমে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, এসব প্রকল্প আগে থেকেই নেওয়া হয়ে থাকে, জুনের আগেই এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাড়া থাকে। ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে কাজগুলো করতে দেরি হয়ে যায়। তবে যেসব এলাকায় জনদুর্ভোগ বেশি হচ্ছে সেসব এলাকার কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। নগরের উন্নয়ন কাজের জন্য নগরবাসীকে সাময়িক একটু ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর