সত্যিই কী রাসেলস ভাইপার আতঙ্কের নাম? চেনার উপায় ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
রাসেলস ভাইপার। ছবি: বার্তা২৪.কম

রাসেলস ভাইপার। ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

গত কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাপের একটি প্রজাতি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বলা চলে দেশে এখন আতঙ্কের নাম এই প্রজাতির সাপ। সাপটির নাম রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ। যাকে বাংলাদেশ থেকে অনেক বছর আগেই বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে সম্প্রতি এই সরিসৃপের বরেন্দ্র অঞ্চলে আনাগোণা থাকলেও বর্তমানে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে এর উৎপাত। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুর এমনকি ঢাকার উপকণ্ঠের গ্রামগুলোতেও দেখা মিলছে বিষধর এই সাপের।

এমন পরিস্থিতিকে গবেষকরা বলছেন, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে স্বভাব পরিবর্তন করছে রাসেলস ভাইপার।

এদিকে ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে অনেকে নানাভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। বিষয়টিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যে এই সাপের কামড়ে শেষ পরিণতি নিশ্চিত মৃত্যু। তবে এ প্রজাতির সাপ কামড়ালে তারও চিকিৎসা আছে এবং সময়মত চিকিৎসা নিতে পারলে মৃত্যু ঝুঁকিও কমে আসে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি জেলায় রাসেল’স ভাইপারের কামড়ে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।

এই প্রজাতির সাপ নিয়ে বেশি আতঙ্কের কারণ হচ্ছে খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করতে পারে। যার ফলে খুব সহজেই বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এই সাপের আধিক্য মানুষের জন্য হুমকি তৈরি মতো সম্ভাবনার দেখা দিয়েছে।

কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে রাসেল’স ভাইপার নিয়ে যে মাত্রায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তা আসলে কতটা যৌক্তিক? যদি তাই হয় তাহলে এর থেকে নিরাপদে থাকারই বা উপায় কী?

চলুন, রাসেলস ভাইপার থেকে নিরাপদে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

রাসেলস ভাইপার কতটা ভয়ঙ্কর

বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সাপগুলোর মধ্যে অন্যতম এই রাসেলস ভাইপার। একটি পূর্ণাঙ্গ রাসেলস ভাইপারের কামড়ে প্রায় ১৩০ থেকে ২৫০ মিলিগ্রাম বিষ থাকে। ছোট সাপগুলোর মধ্যে থাকে প্রায় ৮ থেকে ৭৯ মিলিগ্রাম। এছাড়া অন্যান্য যে কোনো বিষাক্ত প্রাণীর তুলনায় এগুলো অনেক বেশি পরিমাণে বিষ নিঃসরণ করতে সক্ষম।

বিভিন্ন প্রজাতিতে এই বিষ মূলত ২ ধরনের হয়ে থাকে; নিউরোটক্সিন ও হেমোটক্সিন।

১। নিউরোটক্সিন: এই বিষ স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং এর মাধ্যমে শরীরের প্রধান অঙ্গগুলোকে পর্যায়ক্রমে নিষ্ক্রিয় করে দিতে থাকে। একসঙ্গে অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের এই অবনতি বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দ্রুত ঘটে।

কামড়ের জায়গায় ব্যথার সঙ্গে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। তারপর আক্রান্ত স্থান থেকে ধীরে ধীরে তা ছড়াতে থাকে সারা দেহে। কামড়ের ২০ মিনিটের মধ্যে মুখ থেকে থুথুর সঙ্গে রক্ত বের হওয়া শুরু করে। রক্তচাপের পাশাপাশি হৃদস্পন্দন কমে যেতে থাকে। চূড়ান্ত অবস্থায় বমি হতে পারে এবং মুখ ফুলে যেতে পারে। কামড়ের ক্ষত চিহ্নের চারপাশের জায়গা বিবর্ণ হয়ে যায় এবং ফুলে ওঠে। ১ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে বমির সঙ্গে ডায়রিয়া যুক্ত হয়ে সারা শরীর নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকে। সর্বপরি, অবিলম্বে চিকিৎসা না করা হলে এই দংশন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু ঘটাতে পারে।

২। হেমোটক্সিক: এই বিষ প্রকৃতির হলে রক্ত জমাট বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। এতে শরীরের প্রধান অঙ্গগুলোতে রক্তের পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার ফলে অঙ্গগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে থাকে। 

এই সরিসৃপটির সবচেয়ে ভয়ানক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর গায়ের রঙ ও রেখা, যেগুলো যে কোনো পরিবেশের সঙ্গে একদম মিশে যায়। এতে করে কাছাকাছি কোনো শিকার এর অবস্থান টেরই পায় না। এছাড়াও শিকারকে পরিপূর্ণভাবে ধরাশায়ী করার জন্য এটি দীর্ঘক্ষণ যাবৎ ঘাপটি মেরে পড়ে থাকতে পারে। অতঃপর ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগিয়ে সুযোগ বুঝে ক্ষীপ্র গতিতে ঝাপিয়ে পড়ে শিকারের উপর।

শিকার ধরার জন্য এদের সেরা সময় হচ্ছে রাতের বেলা। কিন্তু শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দিনের আলোতেও এদেরকে শনাক্ত করা মুশকিল।

রাসেলস ভাইপার সাপ চেনার উপায়

ভারতীয় উপমহাদেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোরা নামে পরিচিত এই সাপ ৫ দশমিক ৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ত্রিভুজাকার আকৃতির চ্যাপ্টা মাথা ঘাড় থেকে বেশ আলাদা। মুখের সামনের অংশটি গোলাকার, ভোঁতা ও উপরের দিকে বাকানো।

নাকের ছিদ্র বড় এবং মাথার শীর্ষবিন্দু স্বতন্ত্রভাবে খণ্ডিত আবরণে আচ্ছাদিত। মাথা আকারে বেশ বড় এবং রঙ হলুদ বা সোনালি হলুদ। আর এর চারপাশে থাকে ১০ থেকে ১৫টি বৃত্তাকার আঁশের বেষ্টনী। দুই জোড়া চোয়ালের ঢালের মধ্যে সামনের জোড়াটি একটু বেশি প্রসারিত। মুখের ভেতর দুটি ম্যাক্সিলারি হাড়ের সঙ্গে এক জোড়া করে মোট ৬টি বিষদাঁত। তবে একদম সামনের জোড়া দাঁতগুলো বেশ প্রকাণ্ড এবং সক্রিয় থাকে। দেহের পেছনে ছোট লেজের দৈর্ঘ্য গোটা দেহের মাত্র ১৪ শতাংশ।

এদের শরীরের রঙের প্যাটার্নে রয়েছে গভীর হলুদ এবং বাদামী মাটির রঙ। শরীরের দৈর্ঘ্য বরাবর ৩ সারি গাঢ় বাদামী দাগ। এই দাগগুলোর প্রত্যেকটির চারপাশে রয়েছে একটি করে কালো বলয়। এর বাইরের সীমানা সাদা বা হলুদ হয়ে প্রান্তের দিকে গাঢ় হয়ে গেছে। মাথায় রয়েছে এক জোড়া গাঢ় ছোপ, যার প্রত্যেকটি একটি করে গোলাপী বা বাদামী রঙের ‘ভি’ বা ‘এক্স’ আকৃতি হয়ে মাথার শীর্ষবিন্দুতে যেয়ে মিলেছে। চোখের পিছনে অন্ধকার স্তরটি সাদা বা গোলাপী প্রান্তরেখায় পরিবেষ্টিত। শরীরের সামনে ও পিছনে সর্বাঙ্গ জুড়ে সাদা, হলুদ বা গোলাপী রঙের সঙ্গে কালো দাগের অনিয়মিত ও বিক্ষিপ্ত নকশা।

রাসেলস ভাইপারের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এরা যে কোনো স্থানের সঙ্গে অবিকল ভাবে মিশে যেতে পারে। কোনো শত্রুর কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এরা একটি ‘এস’ আকৃতি গঠন করে। অতঃপর শরীরের উপরের এক-তৃতীয়াংশকে উত্থাপন করে উচ্চ শব্দে আক্রমণের ঘোষণা দিতে থাকে। এইভাবে শরীরের নির্দিষ্ট অংশকে উপরে তুলে ধরাটা প্রতিটি সাপেরই আক্রমণের একটি সাধারণ ভঙ্গিমা। তবে অন্যান্য সাপের তুলনায় রাসেলস ভাইপার তার শরীরের বেশির ভাগ অংশ মাটি থেকে তুলতে পারে।

রাসেলস ভাইপার থেকে বাঁচার উপায়: প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

প্রতিরক্ষামূলক পরিধেয়

সবচেয়ে বিপজ্জনক অঞ্চলগুলোর অধিবাসীদের লম্বা ও মোটা চামড়ার বা রাবারের বুট পরিধান করা উচিৎ। এছাড়া মোটা গ্লাভ্সও অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিতে পারে। রাসেলস ভাইপারের বিষদাঁত যে কোনো সাপের থেকে বেশ লম্বা, কিন্তু সেগুলো গামবুট ভেদ করতে পারে না।

অন্ধকার এলাকা এড়িয়ে চলা

এই সাপগুলো শিকার ধরার জন্য রাতের বেলা এবং অন্যান্য সময় অপেক্ষাকৃত অন্ধকার জায়গা বেঁছে নেয়। তাই রাতসহ দিনের অন্যান্য সময়ে পথ চলার সময় সঙ্গে একটি টর্চলাইট রাখা ভালো।

শিশু-কিশোরদের সাবধান করা

এসব বিষাক্ত প্রাণীদের এড়িয়ে গেলে সাধারণত এরা বিপদের কারণ হয় না। কিন্তু দুর্ঘটনা সহ মানুষের কোনো আচরণকে হুমকি ভেবে এরা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। গ্রামে-গঞ্জে অনেক ক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের এরকম বিভিন্ন প্রাণী নিয়ে খেলতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে কোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতির উপক্রম হওয়ার আগেই তাদেরকে সাবধান করা দরকার। এমনকি সাপ মরে পড়ে আছে ভেবে সেটা সরানোর সময়ও সাবধান থাকা উচিৎ।

রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি

দেশের যে এলাকাগুলোতে এই সাপের উপদ্রব বেশি, সেখানে অবিলম্বে যথাযথ সাবধানতা জোরদার করা উচিৎ। এর জন্য কৃষক, জেলেসহ প্রতিটি মানুষকে এই সরিসৃপের প্রজাতি ও তাদের আবাসস্থল সম্বন্ধে সহজ ভাষায় জানাতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নিরাপত্তামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সেই সঙ্গে উপজেলা পর্যায়সহ দেশের অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে যত দ্রুত সম্ভব অ্যান্টি-ভেনম বিতরণ করা উচিৎ।

রাসেলস ভাইপার কামড়ালে করণীয়

এই সাপের দংশনের শিকার হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য অ্যান্টি-ভেনমের কোনো বিকল্প নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। দক্ষ সেবা পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাৎক্ষণিক ভাবে প্রাথমিক যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া যেতে পারে তা হলো:

১। আক্রান্ত ব্যক্তির পরিহিত যে কোনো আঁটসাঁট অলঙ্কার বা পোশাক খুলে আরামদায়ক অবস্থানে তাকে বসিয়ে বা শুইয়ে রাখা

২। সাবান এবং পানি দিয়ে ক্ষত স্থান পরিষ্কার করে দেওয়া

৩। কামড়ের স্থান এবং তার চারপাশের জায়গায় ব্যান্ডেজ লাগানো। তবে ব্যান্ডেজ যেন খুব বেশি শক্ত না হয়। নড়াচড়া এড়াতে ব্যান্ডেজের সঙ্গে একটি ছোট লম্বা বাঁশজুড়ে দিতে হবে। হাতে কামড়ের ক্ষেত্রে হাত ব্যান্ডেজ করে তা কাঁধের সঙ্গে গুলতির মতো করে ঝুলিয়ে যুক্ত করে দেওয়া যায়।

৪। আক্রান্ত ব্যক্তির এ অবস্থায় কোনোভাবেই দ্রুত হাঁটা বা দৌড়ানো ঠিক নয়

৫। ক্ষতস্থানসহ দেহের অন্যত্রে কোনো রকম কাটাছেঁড়া বা আঁচড় দেওয়া যাবে না

৬। ক্ষত স্থানে মুখ দিয়ে রক্ত টানার চেষ্টা করা একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা। এটি কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়

৭। কামড়ানো জায়গায় বরফ লাগানো যাবে না

৮।আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যথা উপশমের জন্য অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন বা নেপ্রোক্সেন সোডিয়ামের মতো কোনো ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া যাবে না। এতে ব্যক্তির রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

সর্বোপরি বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার থেকে নিরাপদে থাকার সর্বোত্তম উপায় অগ্রীম সতর্কতা অবলম্বন করা। বিপজ্জনক অঞ্চলগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা বুট এবং রাতের বেলা টর্চ লাইট ব্যবহার করা উচিৎ। সাপ শনাক্তকরণের ব্যাপারে এগুলোর দৈহিক বৈশিষ্ট্য যতটা সম্ভব সুক্ষ্ম ভাবে জেনে রাখা ভালো।

আর সাপের কামড়ের পর অ্যান্টি-ভেনম দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। উপরন্তু, তাৎক্ষণিক চিকিৎসার সময় প্রচলিত কুসংস্কার এড়াতে আগে থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান থাকা অতীব জরুরি।

সূত্র: ইউএনবি

মদপানের টাকার জন্য নিজ সন্তান বিক্রি করলেন বাবা



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বান্দরবান
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বান্দরবানে রুমা সদর ইউনিয়নের নিজ শিশু সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে বাবা। মদপানের টাকা দিতে না পারায় নিজের আড়াই বছরের শিশু সন্তানকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে চাইসিংনু মারমা (৪০)। শিশু সন্তানকে ফিরে পেতে ক্রেতার কাছে বারবার গেলেও বিক্রির অর্থ ফেরত দিতে না পারায় নিজ সন্তানকে ফেরত আনতে পারেনি অসহায় মা উসাংচিং মারমা (৩০)। 

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে রুমা সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের রুমাচড় পাড়া বাসিন্দা ক্যহ্লাচিং এর ছেলে চাইসিংনু মারমা (৪০) ও পাইন্দু ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পড়ুয়া পাড়ার বাসিন্দা ক্যইমংউ মারমার বড় মেয়ে উসাংচিং মারমা এর মধ্যে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক ছেলে এক মেয়ে। তবে স্বামী প্রায় সময় মদপান করে স্ত্রীকে মারধর করত। ছয় মাস আগে পরিবার ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যায় স্বামী। পরে ঘরে ফিরে এসে প্রায় ১৫ দিন আগে মাতাল অবস্থায় স্ত্রীকে বেঁধড়ক পিটিয়ে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়। ওই সময় আড়াই বছরের শিশু ছেলে নিজের কাছে রেখে দেয় মাতাল চাইসিংনু মারমা।

বুধবার (২৬ জুন) শিশুটির মা উসাংচিং মারমা বলেন, পিটিয়ে তাড়িয়ে দেয়ার পর থেকে রুমা সদর ইউনিয়নের পলিপাড়ার পার্শ্ববর্তী মায়ের খামার ঘরে মেয়ে সন্তানকে নিয়ে অবস্থান করেন। তিনি এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, গত ২২ জুন তার শিশু ছেলেকে তার বাবা বিক্রি করে দিয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, তার শিশু সন্তান সদর উপজেলায় লাইমি পাড়ার এক মারমা পরিবারের কাছে আছে।

লাইমি পাড়ার অবস্থান হচ্ছে বান্দরবান সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে। গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে সেখানে গিয়ে তার ছেলে সন্তানকে দেখতে পায় এবং ছেলেও মাকে দেখে দৌড়ে চলে আসে। কিন্তু বিক্রির সময় বাবার নেওয়া তিন হাজার টাকা ফেরত দিতে না পারায় শিশুকে নিজ ঘরে নিয়ে যেতে পারেনি এই অসহায় মা।

শিশুটির মা উসাংচিং মারমা আরও বলেন, মদ্যপানের জন্য নিজের সন্তানকে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে শিশুটির বাবা। একথা বলে তার চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারেনি শিশুটির মা। ঘটনা জানাজানির পর শিশুটির পিতা চাইসিংনু মারমা অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে যায়।

খবরটি পৌঁছায় প্রশাসনের কর্মকর্তারাদের নিকট। তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন নির্দেশ দিলে রুমার ইউএনওকে শিশুটি উদ্ধার করতে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মার কোলে তুলে দেওয়া হয়।

এই বিষয়ে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, শিশুটিকে আমরা উদ্ধার করে তার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রুমা সদর ইউপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অংসিংনু মারমা বলেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে পরামর্শ করে ছেলেটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

;

পাহাড়ে প্রথমবারের মতো ড্রোন দিয়ে দুর্নীতির অনুসন্ধান চালাল দুদক



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রথমবারের মতো ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে রাঙামাটিতে জেলা পরিষদের বিরুদ্ধের দায়ের করা চারটি দুর্নীতির মামলার তদন্ত কার্যক্রম চালিয়েছে দুদক কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাঙামাটির বরকল উপজেলাধীন সুবলং, ভূষণছড়া ও ঠেগামুখ এলাকায় গিয়ে ড্রোন উড়িয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবেদককে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন রাঙামাটিস্থ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

দুদক কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, অস্তিত্বহীন ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে রাঙামাটি জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে একই দিনে চারটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।

দুদক রাঙামাটিস্থ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক আহামদ ফরহাদ হোসেন নিজেই উক্ত চারটি মামলা দায়ের করেছিলেন। এই চার মামলায় রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য, নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, ঠিকাদার, ইউপি চেয়ারম্যান, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সর্বমোট ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

রাঙামাাটি জেলা পরিষদের সদস্য সবির কুমার চাকমা, জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া, সহকারী প্রকৌশলী জ্যোর্তিময় চাকমা, উপসহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা, ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে সিলেট এলজিইডিতে কর্মরত) কাজী আবদুস সামাদ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স অমলেন্দু চাকমার স্বত্তাধিকারী অমলেন্দু চাকমা, মেসার্স নাংচিং এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্তাধিকারী চিংহেন রাখাইন, মেসার্স সম্মৃদ্ধি এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্তাধিকারী মিলন তালুকদার’কে আসামি করে এই চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক রাঙামাটিস্থ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক।

দুদক সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বরকলের ৪নং ভূষণছড়া ইউনিয়নের অর্ন্তগত কামিনী চাকমার জমির উপর মৎস্য বাধঁ ও পাকা সেচ ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৩ টাকা, বরকল উপজেলাধীন সুবলং বাজারে পানীয় জলের ব্যবস্থাকরণসহ গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা, বরকল উপজেলাধীন সুবলং ইউনিয়নে সুবলং কমিউনিটি সেন্টার ঘর ও পাকা সিড়ি নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, বরকল উপজেলাধীন পূর্ব এরাবুনিয়া মৎস্য বাঁধ হইতে হারুন টিলা এলাকার আহাদ এর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার নামক ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৩ টাকা পরস্পর যোগসাজসে অপরাধমূলক অসদাচরণ এবং অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে উপরোক্ত টাকাগুলো আত্মসাৎ করে দণ্ড বিধির ৪০৯/১০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে মামলার গুলোর এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন।

রাঙামাটিস্থ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবেদককে মুঠোফোনে উপরোক্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ৭৫ কার্যদিবস সময়কালে উপরোক্ত মামলাগুলোর সার্বিক বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে মামলা দায়ের করে তদন্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করে ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্ত করেছে। দায়িত্বশীল এই কর্মকর্তা জানান, আমরা তদন্ত কার্যক্রমে অনেক দূর এগিয়েছি। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সবকিছু মিলিয়ে এরপরের পদক্ষেপ চার্জশীট প্রদান করা।

;

বান্দরবানে কেএনএফ'র আরও এক সদস্য গ্রেফতার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বান্দরবান
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বান্দরবানে রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, মসজিদে হামলা, টাকা-অস্ত্র লুটের ঘটনায় যৌথবাহিনীর অভিযানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্দেহে আরও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতার হওয়া কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্য হলেন তোয়াং থান বম (৪৫)। সে সদর উপজেলার স্যারণ পাড়ার বাসিন্দা মৃত নুয়াং থাং বমের ছেলে।

বুধবার (২৬ জুন) তাকে বান্দরবানে যৌথবাহিনীর অভিযানে সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের স্যারণ পাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেলে গ্রেফতার আসামিকে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজনভ্যানে করে বান্দরবান সদরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরুল হক আসামিকে জেলে পাঠানোর আদেশ দেন।

বান্দরবান আদালতের জিআরও বিশ্বজিৎ সিংহ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আসামি তোয়াং থান বমকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে।

এপর্যন্ত মোট ১০৯ কেএনএফ সদস্য ও একজন চাঁদের গাড়ির চালকসহ মোট ১১০ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫ জন নারী রয়েছেন। যৌথ বাহিনীর টহলের ওপর হামলা করতে গিয়ে কেএনএফের মোট ১৫ জন নিহত হয়েছে।

বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে প্রকাশ্যে ব্যাংক লুটের পর বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ ও সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ এর বিভিন্ন ধারায় এ পর্যন্ত রুমা থানায় ১৩টি ও থানচি থানায় চারটি, বান্দরবান সদর থানায় একটি এবং রোয়াংছড়ি থানায় তিনটি সহ সর্বমোট ২১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বান্দরবানে গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, মসজিদে হামলা, টাকা-অস্ত্র লুটের ঘটনায় মামলায় অভিযুক্ত ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)’র সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে সমগ্র বান্দরবান জুড়ে যৌথ বাহিনীর চিরুনি অভিযান চলমান রয়েছে।

;

চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ভ্যান চালক নিহত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চুয়াডাঙ্গা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চুয়াডাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় আব্দুল জব্বার (৬০) নামের এক বৃদ্ধ পাখিভ্যান চালক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে দামুড়হুদা-কার্পাসডাঙ্গা সড়কের দেউলী মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুল জব্বার দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের দেওলী গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দামুড়হুদার দেওলী মোড়ে একটি চায়ের দোকানের পাশে প্যাখিভ্যান রেখে অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হচ্ছিলেন বৃদ্ধ আব্দুল জব্বার। এসময় একটি দ্রুতগতির মোটরসাইকেল বৃদ্ধকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি মারাত্মক জখম হন। স্থানীয়ারা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তারা আরও জানান, মোটরসাইকেলে দুজন আরোহী ছিলেন। তারাও সড়কের ওপর ছিটকে পড়েছিল। এর মধ্যে একজন আহত হয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোর্শেদ আলম বলেন, ‘আমরা বৃদ্ধ আব্দুল জব্বারকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তিনি মারা গেছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে অবগত করা হয়েছে।’

দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিয়াজুল ইসলাম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘এক বৃদ্ধ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব। পরবর্তী আইনানুগ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’

;