আজ নড়াইলের ইতনা গণহত্যা দিবস

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নড়াইল | 2024-05-23 10:53:29

ইতনা নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার একটি গ্রাম। ২৩ মে এ গ্রামের জন্য একটি ভয়াল দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী লোহাগড়া উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ইতনা গ্রামে একের পর এক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শিশুসহ ৩৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। নিহতদের মরদেহ ঘর-বাড়ির জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দিয়ে উল্লাস করে।

চর-ভাটপাড়া গ্রামের কৃষক অনিল কাপালী। তিনি মা-বোনদের ওপর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে খালি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক পাক-সেনার ওপর।

বীর বাঙ্গালী অনিল কাপালী পাক-সেনার কাছ থেকে তার রাইফেল কেড়ে নিয়ে দৌঁড়ে যায় নদীর দিকে। মধুমতি নদীতে অস্ত্র ফেলে নিজে সাঁতার কেটে চলে আসে এপারে ইতনা গ্রামে। পরের দিন পাক-সেনারা অনিল কাপালীকে ধরতে চর-ভাটপাড়া গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আত্মরক্ষার জন্য চর-ভাটপাড়া বাসীরা বলে কাপালীর বাড়ি ইতনায়।

পরের দিন ইতনায় গণহত্যার পরিকল্পনা করে ৫টি নৌবহর ধারা পাক-সেনারা পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলে কাক ডাকা ভোরে। তারা ৫ ভাগে ভাগ হয়ে ঢুকে পড়ে গ্রামের ভিতর। মানুষ তখন ঘুমন্ত। কেউ কেউ ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে উঠেছে। পাক সেনারা প্রথমেই হিমায়েত মিনাকে গুলি করে। তখন সে গুলি অবস্থায় বীর দর্পনে “জয়বাংলা” বলে চিৎকার দেয়। এভাবে সে চিৎকার দিয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে। যতক্ষণ সে জয়বাংলা বলেছে ততবার পাক-সেনারা তাকে গুলি করেছে। এরপর আব্দুর রাজ্জাক ফজরের নামাজ পড়ে কোরান শরীফ পড়ছে এসময় তাকে গুলি করে।

বানছারাম মন্ডলকে গুলি করতে উদ্যোগ নিলে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যান,বজলার রহমান, আ. জলিল, হারুন শেখসহ অনেকে। ইতনা হয়ে পড়ে ভুতুড়ে গ্রাম। লাশ আর লাশ। দাফন করার মত মানুষ নেই। গ্রামবাসীরা ধর্মীয় সকল নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে কোনো মতে শহীদদের দাফন করে গ্রাম ছাড়া হয়। এ আতঙ্ক সবার মধ্যে। ওইদিন কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ গ্রামবাসীকে পাক-সেনারা হত্যা করে।

এ উপলক্ষে ইতনা স্কুল এন্ড কলেজের পক্ষ থেকে শহীদদের স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, ইতনায় শহীদদের স্মরণে বিকালে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

মুক্তিযুদ্ধে লোহাগড়া উপজেলার মধুমতী নদী তীরবর্তী পাশাপাশি দুই গ্রাম ইতনা ও চরভাট পাড়া। এই দুই গ্রামে বসেই মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণের নানা পরিকল্পনা করত। ভৌগোলিক ও কৌশলগত কারণে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা এই দুই গ্রামে অবস্থান করে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাতেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর