৪০ বছর পর দেশে ফিরলেন নেপালী নাগরিক 

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বগুড়া | 2024-05-23 16:26:35

৪০ বছর আগে কাজের সন্ধানে বাংলাদেশে এসে আটকে পড়েন নেপালী নাগরিক বীর কা বাহাদুর রায়। বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের একটি চাতালে আশ্রয় মেলে তার। ৪০ বছরের বেশি সময় তিনি সেখানে থেকে কখনো চাতাল শ্রমিক, কখনো হোটেল শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এখন বয়স এতটাই বেড়েছে যে সব কাজ আর ঠিক মতো করতে পারেন না। ৭০ বছরের বৃদ্ধ বীর কা বাহাদুর অন্যের করুণায় দিন কাটান। এমন খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাকে দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয় স্থানীয় প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) নেপাল দূতাবাসের উদ্যোগে বাংলাবান্ধা সীমান্ত হয়ে নিজ দেশে ফিরে যান বীর কা বাহাদুর রায়।

দীর্ঘদিন দুপচাঁচিয়ায় অবস্থান করা বীর কা বাহাদুর যখন এলাকা ছাড়েন সেসময় এলাকায় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একদিকে তাকে বিদায় দেওয়ার বেদনা, অন্যদিকে স্বজনদের কাছে তিনি ফিরতে পারছেন সেই আনন্দের মিশ্রন দেখা দেয় এলাকাবাসীর মধ্যে। এদিকে দীর্ঘদিন পর নিজ দেশে ফিরতে গিয়ে নিজেরও মন খারাপ বীর কা বাহাদুরের। তিনি আবার ফিরে আসবেন বলে জানান স্থানীয়দেরকে।

শুধু যে দেশেই ফিরলেন বীর কা বাহাদুর তা নয়, সাথে যেমন নিয়ে গেলেন এলাকাবাসীর ভালোবাসা; তেমনি যে চাতালে তিনি আশ্রয় নিয়ে ছিলেন সেই চাতাল মালিক অলোক কুমার বসাক ও পুলক কুমার বসাক এবং তাকে দেশে ফেরানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণকারী স্থানীয় ফার্মেসী ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান খান ফরেন এই তিনজন তার হাতে তুলে দেন নগদ ৭৫ হাজার টাকা। 

গত বুধবার সন্ধ্যায় বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গিয়ে বীর কা বাহাদুরকে দেশে ফেরানোর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন নেপাল দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি উজানা বামজান। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন নেপাল দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন ললিতা শিলওয়াল ও একই দূতাবাসের অ্যাম্বাসিডরের সেক্রেটারি রিয়া ছৈত্রী। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ছিলেন দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাত আরা তিথি ও দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সনাতন চন্দ্র সরকার।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকাল ৯ টার দিকে বগুড়া সার্কিট হাউস থেকে বীর কা বাহাদুরকে নিয়ে দূতাবাস কর্মকর্তাগণ বাংলাবান্ধা সীমান্তের উদ্দেশে রওনা করেন।

দুপচাঁচিয়ার আনুষ্ঠানিকতা শেষে নেপাল দূতাবাসের অ্যাম্বাসেডরের সেক্রেটারি রিয়া ছৈত্রী জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বীর কা বাহাদুরের আটকে পড়ার খবর নজরে এলে উপজেলা প্রশাসন থেকে দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়। ওই খবরে যে এলাকার কথা বলা হচ্ছিলো তা পূর্ণাঙ্গ ছিল না। তারপরও নেপাল সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়। ওই জায়গার নামের সঙ্গে মিল খুঁজে বের করা হয় বীর কা বাহাদুরের নিজ জন্মস্থান। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত বাংলাবান্ধার কাছে নেপালের হিলাম নামক এক জেলা আছে; সেই জেলায় গোরখা বাঙ্গানা নামে একটি বাজারের সন্ধান মেলে। এরপর সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় তার বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে (ভাবী)। তিনি ছবি দেখে নিশ্চিত করেন এই বীর কা বাহাদুর-ই তার দেবর। বহুদিন আগে যিনি কাজের সন্ধানে বেরিয়ে আর ফেরেননি। এরই মাঝে তার বড়ভাইও মারা গেছেন। বাড়ির অন্য সদস্যদের বীর কা বাহাদুরের কথা তেমন মনে নেই। পরিবার তার পরিচয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হলে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে অনুমোদন পাওয়ার পর তাকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

তাকে ফিরিয়ে নিতে আসা নেপাল দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি উজানা বামজান বলেন, ‘বীর কা বাহাদুর রায় বাংলাদেশে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে আছেন। এখন তিনি নেপালে ফেরার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। নেপাল সরকারের উদ্যোগে তাকে বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সীমান্তে তার পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে গ্রহণ করবেন। তাকে দেশে ফেরার জন্য সহায়তা করায় আমি দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। সেইসঙ্গে নেপাল দূতাবাসের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ করার কারণে দুপচাঁচিয়ার বাসিন্দা মেহেদী হাসান খান ফরেনের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ।’

দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাত আরা তিথি বলেন, ‘বীর কা বাহাদুরের সংবাদ জানার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেসময় তিনি নেপালে ফেরার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। এবিষয়ে তিনি আবেদন করলে তা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তারই ধারাবাহিকতায় নেপাল দূতাবাস থেকে সেকেণ্ড সেক্রেটারিসহ একটি প্রতিনিধি দল বীর কা বাহাদুরকে নেওয়ার জন্য আসেন। তারা বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবেন।’

এদিকে দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে বীর কা বাহাদুর বলেন, ‘ওরা বললো আমি নেপালে গিয়ে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে দেখা করে আবার ফিরে আসব। এখান থেকে যেতে ভালো লাগছে না। নেপালে তো আমার কিছুই নেই। আমি আবার কয়দিন পর এখানে চলে আসব।’

বীর কা বাহাদুরের দেশে ফেরার কথা শুনে এলাকার অনেকেই ছুটে যান তার সঙ্গে বিদায় সাক্ষাৎ করতে। এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। দীর্ঘদিন এলাকায় থেকে স্থানীয়দের ভালোবাসা কুড়িয়েছেন বীর কা বাহাদুর। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর