তেল বিক্রি করে লেখাপড়া করা ছেলেটি এখন চালকবিহীন বিমান আবিষ্কারক

, জাতীয়

ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) | 2024-05-25 16:57:48

সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম হয়নি বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবিরের। পৃথিবীর যত সফল ব্যক্তি রয়েছেন তাদের পিছনে রয়েছে দীর্ঘ কষ্টের গল্প। তেমনি কষ্ট আর অভাবকে জয় করে সফলতার ছোঁয়া পেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের অজ-পাড়াগাঁয়ের ছেলে হুমায়ুন কবির শুধু দারিদ্র্যই নয়, জয় করেছেন আকাশও। তাকে নিয়ে এখন গর্বিত এলাকার মানুষ।

দীর্ঘ ২০ বছর পর সুদূর আমেরিকা থেকে কিশোরগঞ্জে নিজের এলাকায় এক মাসের সফরে এসেছেন একাধিক বিমান আবিষ্কারক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. হুমায়ুন কবির। শুক্রবার (২৪ মে) পাকুন্দিয়ার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বড় আজলদী গ্রামে তার নানার বাড়িতে হেলিকপ্টারে আসেন। সঙ্গে ছিলেন তার সহধর্মিণী ফরিদা কবির।

গ্রামবাসী ও সহপাঠীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হুমায়ুন কবিরের জন্মস্থান কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের নাগেরগ্রামে। ওই গ্রামের আনন্দ কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার হাতেখড়ি তার। সহপাঠীরা জানান, ছোট থেকেই সকল ক্লাসে ফাস্ট ছিলেন তিনি। লেখাপড়ায় ছিলেন অপ্রতিরোধ্য ও মেধাবী। কটিয়াদী বাড়ি হলেও পার্শ্ববর্তী পাকুন্দিয়া উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বড় আজলদী গ্রামে তার নানার বাড়িতে থেকেই সময় কেটেছে বেশি।

মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি ব্রিটিশ সরকারের ভাতাপ্রাপ্ত সৈনিক শতবর্ষী আব্দুল মান্নান (১২৫) বলেন, হুমায়ুনকে ছোট থেকেই দেখেছি লেখাপড়ার প্রতি আকর্ষণ। তীব্র অভাবে তেল বিক্রি করে নিজের লেখাপড়া ও সংসারের হাল ধরেছে। সে আমাদের এলাকার তথা বাংলাদেশের জন্য গর্বের।

হুমায়ুন কবিরকে একদম কাছ থেকে দেখা আজলদী গ্রামের আমিনুল ইসলাম (৭০) বলেন, যে কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে বলে প্রকাশ করার মতো না। তার বাবা দুই টাকা দিলে এক টাকা জমিয়ে রাখতেন। একদিন তার মা বিছানা তুলে দেখেন টাকা জমানো। পরে হুমায়ুন কবির মাকে বলেন, অনেক সময় বাবার কাছে তাৎক্ষণিক টাকা থাকে না। জমিয়ে রাখি যাতে আমার জরুরি প্রয়োজনে খরচ করতে পারি।

চন্ডিপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শামসুদ্দিন বলেন, বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির দেশে আসায় আমাদের জন্য আনন্দের। উনি আমাদের এলাকা শুধু নয়, বাংলাদেশের অহংকার। এমন একজন মেধাবী মানুষের জন্ম আমাদের দেশে এটা গর্বের বিষয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির বলেন, দেশের মাটিতে আবারও আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। সবাইকে পেয়ে ভালো লাগছে। আমি কখনো কারো কাছ থেকে কিছু নিয়ে বড় হইনি। নিজের চেষ্টা এবং পরিশ্রমকে হাতিয়ার করে শূন্য থেকে এই অবস্থানে আসা। আমি বলব, নির্দিষ্ট লক্ষ্য পৌঁছাতে চেষ্টাকে প্রবল করতে হবে। আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে আমি পারব। সবারই মেধা আছে, এটাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। মেধাকে অপচয় না করে ভালো কাজে লাগাতে হবে।

বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির

বাংলাদেশি এই বিশিষ্ট রকেটবিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচডি, অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে গত ২৬ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানির বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন।

এরআগে, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির আবিষ্কার করেছেন ১৯৮৬ সালে রিমোট নিয়ন্ত্রিত এইচ-৫ হায়েন্স হেলিকপ্টার। বর্তমানে হুমায়ুন কবির যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বোয়িং কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত। এই দায়িত্ব থেকে তিনি আমেরিকার সরকারের প্রতিরক্ষা প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বিচিত্র সাময়িকী গ্রন্থে একক এবং যৌথ বিজ্ঞান বিচিত্রা নামে বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবিরের ৩৫টিরও বেশি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির আমেরিকার হেলিকপ্টার সোসাইটির একজন বিজ্ঞানী এবং আবিষ্কারক।

২০০৪ সালের ৫ মার্চ তিনি তার জন্মস্থান কটিয়াদীর বনগ্রাম নাগেরগ্রামে এসেছিলেন। পরে তাকে নাগরিক গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। এর ২০ বছর পর আবার আসেন দেশে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর