দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে গড়ে ১২ জন

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 18:00:49

প্রতিনিয়তই সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। কোনোভাবেই যেন রোধ করা যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসাব বলছে, প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২ জন করে প্রাণ হারাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক মনিটরিংয়ের অভাব, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোসহ বেশ কয়েকটি কারণেই ঘটছে এমন দুর্ঘটনা।

তবে সড়কে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চালক বা মালিকদের উপযুক্ত শাস্তি হচ্ছে না। গাড়ির চালক-মালিক, সংশ্লিষ্ট পুলিশ আর সাধারণ মানুষ সচেতন হলেই এ দুর্ঘটনা কমতে পারে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

অন্যদিকে বেহাল সড়কে চলার অযোগ্য লক্কর-ঝক্কর যানবাহনগুলো অবাধে চলাচল করছে। চলমান দেশজুড়ে ট্রাফিক পক্ষ অনুষ্ঠিত হলেও সড়কের শৃঙ্খলা এখনো ফিরছে না তাই মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে না।

সর্বশেষ বুধবার (২৩ জানুয়ারি) লক্ষীপুরের ট্রাক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৬ জন সহ ৭ জন নিহত হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কাতারে প্রতিনিয়ত এমন অসংখ্য মানুষের নাম যুক্ত হচ্ছে। তবুও মৃত্যুর পর দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ফল মিলছে না।

এদিকে সারা বছরের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, বিগত এক দশকের মধ্যে ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সে বছর ৩ হাজার ৫১২টি দুর্ঘটনায় মোট প্রাণ হারায় ৪ হাজার ৭৬ জন মানুষ। যা দিনে গড়ে ১২ জন করে পথচারী বা যাত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে।

যেখানে ২০১৭ সালে ২ হাজার ৯১৬ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৬৭২ জন। ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৩০ দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৯৩১ জন। ২০১৫ সালে ১ হাজার ৬৯০ টি দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৭২৫ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়।

জানতে চাইলে বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালক যতটা দায়ী ঠিক ততটাই পরিবহন ব্যবস্থাপনা দায়ী। পরিবহন অব্যবস্থাপনার জন্যই দুর্ঘটনা গুলো সংগঠিত হয়ে থাকে।

সুশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থাপনা হলে সড়কে নিহতের ঘটনা কমে আসবে। পাশাপাশি মানুষের সচেতনতার একটা বিষয় তো থাকবেই।

একই বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাপরিচালক মোজাম্মেল হক চৌধুরীও পরিবহন ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, সড়ক চরম পর্যায়ে বিশৃঙ্খল যে যার মত করে পারছে সেভাবে চলছে। রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছে আর ব্যবসা করছে। যার ফলে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতাদের কারণে অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালক ও মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। এসব ঘটনার পিছনে প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তিরা থাকেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

সড়ক দুর্ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট একদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার মামলা গুলোর খুব একটা সাজা হয়েছে এমন নজির নেই বললেই চলে।

সড়ক দুর্ঘটনার মামলার সম্পর্কে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রহমান স্মিতা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আইনের মারপ্যাঁচে আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনার মামলা গুলোর সাজা নিশ্চিত করা যায় না। যে কারণে বছরের পর বছর সড়ক দুর্ঘটনার মামলা গুলো ঝুলে থাকে।

মামলার দীর্ঘসূত্রীতায় হতাশ হয়ে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া পরিবার গুলো। আইন প্রয়োগ বাস্তবায়ন ও নাগরিক সচেতনতা না তৈরি হলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না বলে মনে করেন এই আইনজীবী।

এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিনা লাইসেন্স কিংবা ভুয়া লাইসেন্স নিয়ে কোন চালক দুর্ঘটনা ঘটালে অবশ্যই সেই চালকের বিরুদ্ধে সঠিক বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবতা সেটা হচ্ছে না। যার ফলে চালকদের মাঝে কোন ভয় কাজ করছে না। তারা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছে।

পাশাপাশি মানুষের অসচেতনতার জন্যও দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে যার যার জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। ট্রাফিক আইন মানতে হবে তবেই সড়কের মৃত্যুর হার কমবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর