ক্রেতাশূন্য পশুর হাট, লোকসানে ব্যবসায়ীরা

, জাতীয়

মেহেদী হাছান মাহীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪. কম, ঢাকা | 2024-06-16 20:11:46

রাত পোহালেই মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় উৎসবের দিন পবিত্র ঈদুল আজহা। আর এ মুহূর্তে আসন্ন এই ঈদকে কেন্দ্র করে হাটগুলোতে চলছে গবাদি পশু বিক্রি। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর হাটসহ বিভিন্ন হাটে পশু বিক্রি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে কোরবানি পশুর হাট। ক্রেতারা কোরবানির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন পছন্দের গরু-ছাগল ও ভেড়া। ক্রেতারা তাদের সাধ্যের মধ্যে বড়, মাঝারি এবং ছোট সাইজের পশু কিনছেন। কিন্তু, পশু বিক্রি করলেও তেমন লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন খামারিরা। ক্রেতা কম থাকায় অনেক ব্যবসায়ী লোকসানেও বিক্রি করেছেন পশু। 

মাতুয়াইল থেকে বাবা মো. শাহজাহানের সাথে যাত্রাবাড়ী হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছেন মো: রাকিব। চারদিন ধরে দুইটি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন তিনি। ঈদের আগের দিনেও গরু বিক্রি না হওয়ায় চোখে-মুখে হতাশার ছাপ ফুটে উঠেছে রাকিবের। রাকিব নিজ বাড়িতে গরু দুইটি পালন করে আসছেন। শখের দুটি গরুকে বিক্রি করতে না পারায় মন খারাপ তার।

গরু বিক্রি না হওয়া প্রসঙ্গে রাকিব বার্তা২৪.কমকে বলেন, এবারের হাটে অন্যান্য বছরের তুলনায় আশানুরূপ ক্রেতা আসেনি, যারা এসেছেন তারাও গরুর দাম একেবারেই কম বলেন। এর চাইতে কসাইয়ের কাছে গরু বিক্রি করলে আরও ভালো দাম পাবো। ক্রেতার কাছে গরু দুইটির মূল্য চেয়েছে ৩ লাখ টাকা। কিন্তু, কোনো রকমের সাড়া না পেয়ে গরুগুলোকে পুনরায় বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাকিব।

রাকিব আরও বলেন, দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে গরু দুইটাকে লালন-পালন করে আসছি।


এ-পর্যন্ত গরু দুইটির পেছনে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো খরচ করেছি। কিন্তু, হাটে নিয়ে আসার পর ক্রেতারা একেবারেই কম দাম বলছে।

একইরকম অভিজ্ঞতা কিশোরগঞ্জ থেকে আসা মো. রুবেল মিয়ার। টানা তিন বছর যাত্রাবাড়ী হাটে তিনি তার গরু নিয়ে আসেন। এবারের বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টানা তিনবছর পশুর হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছি আমি। তবে, গত দুই বছরের তুলনায় এবারের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে খারাপ। গো-খাদ্যের প্রচুর দাম হওয়ার কারণে এবারে গরুর দাম বিগত কয়েকবছরের তুলনায় অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেন, মাত্র দুইদিন হয়েছে আমি এখানে এসেছি। এই হাটে মোট ১২ টা গরু নিয়ে এসেছি। তারমধ্যে একেবারেই সীমিত লাভে মাত্র ৪ টি গরু বিক্রি করেছি। খামার থেকে যাত্রাবাড়ী পশুর হাটে আসতে এপর্যন্ত আমার ২৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।    

কমলাপুর হাটেও দেখা যায় একই চিত্র। হাট ফাকা তবে ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে নেই আনন্দের ছাপ। এই হাট ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয় মো. আনোয়ারুল হোসেনের সাথে। জামালপুর থেকে ১২টি গরু নিয়ে ৪ দিন আগে এসেছেন কমলাপুর পশুর হাটে। মোট ২৫ লাখ টাকার গরু নিয়ে এসেছেন। ১২ টি গরুর মধ্যে গতকাল রাতে তিনি ৪টি গরু সীমিত লাভে বিক্রি করে দিয়েছেন। ঈদের আগের দিনও হাটে ক্রেতা কম দেখে ৫ টি গরু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লসের মধ্যেই বিক্রি করে দিয়েছেন।

লোকসানে গরু বিক্রি করে হতাশায় ভুগছেন আনোয়ার। তিনি বলেন, যে পরিমাণ আশা করেছি তার কিছুই হয়নি। যা লাভ হয়েছে তা দিয়ে কিছুই হবে না। এখনও ৩টি গরু বাকি আছে। বিক্রি না হলে আবার নিয়ে যেতেও খরচ। এবারে ঈদ আর ঈদ রইল না।


কেন লোকসান?

যাত্রাবাড়ী হাটের গরু বিক্রেতা মো: রাকিব বলেন, ২০২৩ সালে গো খাদ্যের দামের তুলনায় এই বছর গো খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। আগে এক বস্তা ভুসির দাম ছিল ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকা। কিন্তু, এখন তা প্রায় ২৩০০ থেকে ২৫০০ টাকা। ভালো স্বাস্থ্যের জন্য গরুকে বিভিন্ন ধরণের সবজি-ফলমূল খাওয়াতে হয়। সেই খাবারের দামও আগের থেকে অনেকগুন বেড়েছে।

একই বিষয়ে কমলাপুর হাটের গরু বিক্রেতা মো: আনোয়ার বলেন, দিন যত যাচ্ছে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। সবাই বলে খামারিরা বাড়তি দাম বলে কিন্তু কেন বাড়ায় এটা জিজ্ঞেস করে না! আগে মাসে কারেন্ট বিল আসতো ৩০০ টাকা এখন তা বাইড়া আসে ৫০০ টাকা।

ক্রেতারা খুশি

গেন্ডারিয়ার এলাকাবাসী মুফিদুল ইসলাম। গত দুদিন ধরে হাট ঘুরছিলেন। আজ একটি ষাড় গরু নিলেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে।

বার্তা২৪.কমকে তিনি জানান, সাধ্যের মধ্যে আজকে গরুটি কিনতে পারলাম। গত দুদিনের চেয়ে আজ দাম অনেকটাই কম। দামের তারতম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে তাতে গরুর দাম খামারিরা বেশি চায়নি। কিন্তু আমাদেরওতো আর বেতন বাড়ে না। সারাবছর টাকা জমাই কোরবানির জন্য। তবে দিন দিন নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়লে এই খামারিরা আরও মাঠে মারা যাবে। এর প্রভাব আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের উপরেই পড়বে। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের আরও যত্নবান হওয়া উচিত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর