ঈদের দিনও রিকশার প্যাডেল চালাতে হয় তাদের!

, জাতীয়

অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-06-17 12:50:36

ঈদের খুশি-আনন্দ পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করতে পারে না সবাই। কেউ কেউ পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বাড়িতে যান। আবার কেউ বাড়তি রোজগারের আশায় ঘর ও পরিবার ছেড়ে পড়ে থাকেন কংক্রিটের এই মায়াহীন শহরের বুকে। অন্যের আনন্দে রোজগার বাড়ে তাদের।

এমনই একজন রহিম মিয়া। বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও। তিন ছেলে মেয়েসহ পাঁচ জনের সংসার। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মাত্র তিনি নিজেই। রাজধানী শ্যমলী এলাকার একটি রিকশা গ্যরেজে থাকেন তিনি। পরিবেশের জন্য সদস্যরা থাকেন বাড়িতে।

রহিম মিয়া পেশায় একজন রিকশাচালক। রিকশা চালিয়ে উপার্জিত টাকায় পরিবার চলে তার। ধর্মীয় বড় উৎসব ঈদুল আজহা হলেও পরিবারের কাছে ফেরেননি তিনি। ঈদের দিন সড়কে বের হলেই ভালো রোজগারের আশায় পরিবার ছেড়ে রাজধানীতেই থেকে গেছেন। শুধু রহিম মিয়াই নয়, নিম্নবিত্ত পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারের খেটে খাওয়া শত শত মানুষ বাড়তি রোজগারের আশায় পরিবার রেখে ঈদ করছেন ইট-কংক্রিটের এই নগরীর রাস্তায়।


রহিম মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, রিকশা চালিয়ে খাই মামা। ময়মনসিংহের গফরগাঁও এ আমার বাড়ি। বাড়িতে দুই ছেলে এক মেয়ে ও আপনাগো মামি থাকে। আমি রিকশা চালিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাই মামা, সেই টাকাই সংসার চলে।

ঈদ করতে বাড়িতে যান নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাগো কি আর ঈদ আছে। একদিন বসে থাকলেই লস। এক বেলা না খেয়ে থাকলে কেউ খাবার দিবে না। ঈদের দিন রাস্তায় খুব বেশি গাড়ি থাকে না। অনেকের রিকশায় ঘুরতে বের হয়। ভাড়াও একটু বেশি হয়। তাই আর বাড়িতে যাইনি।

রহিমের আশা, নগরীর উচ্চবিত্তরা ঈদ আনন্দে ঘুরতে বের হলে কিছু বাড়তি রোজগার হবে তাদের। নগরীর মানুষ যত বেশি আনন্দ উপভোগ করতে রাস্তায় বের হবে, ঘুরতে যাবে এত বেশি রোজগার হবে তাদের।

এখন পর্যন্ত কত টাকা রোজগার হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকালে নামাজের আগে ও পরে কয়েকজন যাত্রী পেয়েছি। এখন পর্যন্ত ২০০ থেকে ২৫০ টাকা মতো ভাড়া হয়েছে।


টাঙ্গাইলের বাসিন্দা আমান। রাজধানীর বুকে দীর্ঘদিন রিকশা চালান তিনি। আমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঈদের দিন রিকশা চালালে বেশি ভাড়া হয়। অনেকে বকশিসও দেন। সবাই ঘুরতে বের হয়। রাস্তায় গাড়ি কম থাকে তাই আমাদের ভালো হয়। বেশি টাকা ইনকামের আশায় সময় বাড়িতে যায় না।

আরেক রিকশাচালক জীবন। এক মেয়ে ও বৌকে নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের একটি বস্তিতে থাকেন তিনি। রিকশা চালিয়ে পরিবার চালান জীবন। পরিবারের একটু স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপনের জন্য জীবনের স্ত্রী করেন অন্যের বাসায় গৃহিণীর কাজ।

জীবন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বউ মেয়ে নিয়ে ঢাকায় থাকি। ঈদ করতে বাড়িতে গিয়ে আর কি হবে। ঢাকায় থাকলে ঈদের দিনও রিকশা চালালে ভালো উপার্জন হয়। আর আপনাগো মামি যে বাসায় কাজ করে সেখান থেকে আমাদের কোরবানির গোস্ত দেয়। আমরা সেগুলো রান্না করে খেতে পারি। কিনে খাওয়ার সামর্থ্য তো আমাদের নেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর