খুশির দিনে ভালো নেই সিলেট

, জাতীয়

মশাহিদ আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম,সিলেট | 2024-06-17 21:34:08

সারাদেশে যখন ঈদের আনন্দে মেতেছে মানুষ, ঠিক তখন অঝোর বৃষ্টির পানিতে ভাসছেন সিলেটবাসী। এতে ম্লান হয়ে গেছে মানুষের ঈদ আনন্দ। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে অনেক-বাসা বাড়িতে কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। এতে অনেক স্থানে কোরবানি দিতে পারছেন না স্থানীয়রা।

সোমবার (১৭ জুন) ঈদের দিন কোনো কোনো এলাকায় কোরবানি দেয়া সম্ভব না হওয়ায় মঙ্গলবার কোরবানি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

রোববার (১৬জুন) মধ্যরাত থেকে ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ঈদের দিন ভোরেই সিলেট নগরীর অধিকাংশ এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়ক তলিয়েছে পানিতে। এ অবস্থায় বেশিরভাগ ঈদগাহে ঈদুল আজহার জামাত বাতিল করে স্থানীয় মসজিদগুলোতে নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। সেখানেও মুসল্লিদের উপস্থিতি কম দেখা যায়।

সিলেটে প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় শাহী ঈদগাহ ময়দানে। সেখানে বৃষ্টিতে ভিজে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের জামাত আদায় করেন সিলেট সিটি করপোরেশেনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এই ঈদগাহে প্রতি বছর ১ থেকে দেড় লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটলেও এবার বৃষ্টির কারণে মুসল্লি ছিলেন মাত্র কয়েক হাজার।

এদিকে, ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বাসবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ে। ফলে সিলেট নগরীর কোরবানিদাতারা পড়েছেন বেশ বিপাকে। অনেকে পশু বাড়ির দোতলায় উঠিয়ে রেখেছেন। পানি না নামলে কোরবানি দিতে পারছেন না। আবার কেউ কেউ এক বাসা থেকে অন্য বাসায় নিয়ে রাখছেন তাদের কোরবানির পশু। তারা বলছেন, পানি না কমলে এক-দুই দিন পরে কোরবানি দিতে হবে।

সরেজমিনে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ নিচু এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর এলাকায় পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচ তলায় কোমর পর্যন্ত পানি। লালাদীঘিরপাড়, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও এয়ারপোর্ট সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো স্থানে কোমর পর্যন্ত পানি দেখা গেছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোবার সকাল ছয়টা থেকে সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত) সিলেটে ১৭৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর সোমবার সকাল ছয়টা থেকে ৯টা পর্যন্ত হয়েছে ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানিয়েছে, ঈদের দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেটে তিনটি নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ও সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সিলেটের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, রোববার রাত ১১টা পর্যন্ত সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৯টিতে বন্যা দেখা দিয়েছে। পুরো জেলায় ১ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ জন মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলা। এই উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের ১ লাখ ১৪ হাজার ৬০০ জন। জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট ৫৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে জেলা প্রশাসন। আশ্রয় নিয়েছেন ৬৮ জন। এরমধ্যে ওসমানী নগরে ৪৩ জন, বালাগঞ্জে ১০জন ও বিয়ানীবাজারে ১৫জন আশ্রয় নিয়েছেন।

নগরীতে জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে পাশাপাশি সিলেটেও বৃষ্টি হচ্ছে ফলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ছড়াগুলো উপচে নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে পানি প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি থামলেই এসব পানি নেমে যাবে।

তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন। আমাদের লোকজন ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে প্রতিদিন। কিন্তু বাসা-বাড়ি ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে ড্রেনে ফেলে দেন অনেকেই। ফলে পানি নিষ্কাশন সঠিকভাবে হতে বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টির কারণে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় কয়েকটি এলাকায় নতুন করে পানি প্রবেশ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আমরা সার্বক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।

তিনি বলেন, আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। এখন পর্যন্ত যারা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন তাদের প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রত্যেক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর