কটিয়াদীতে যুগ যুগ ধরে পঞ্চায়েতে গোশত বণ্টনে সম্প্রীতির বন্ধন

, জাতীয়

ছাইদুর রহমান নাঈম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কিশোরগঞ্জ | 2024-06-18 08:59:59

সামাজিক রীতি ও সম্প্রীতির বন্ধন এখনো অমলিন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে। ঈদুল আজহার নামাজ শেষ করে সমাজের সবাই একসাথে কোরবানি দেন৷ সেখান থেকে সবাই সমাজের নিন্মবিত্ত ও সামর্থ্যহীন মানুষের জন্য একটি অংশ রেখে দেন৷ এগুলো সংগ্রহ করে পাশেই সরকারি প্রাথমিক স্কুলের মাঠে জমা করা হয়৷ একের পর এক আসতে থাকে বিভিন্ন কুরবানির গোসত।

একসময় তা বিশাল স্তুপ হয়৷ সবগুলো সংগ্রহ শেষ হলে মেপে মেপে রাখা হয়৷ পরে একসময় তালিকায় থাকা নাম ধরে ধরে বণ্টন করা হয়৷ কেউ উপস্থিত না হলেও তার বাড়িতে পৌঁছে যায় গোশত। এমনি এক সামজিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতির বন্ধন দেখা গিয়েছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে।

কটিয়াদী পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের পূর্বপাড়া মহল্লায় প্রায় আড়াই শতাধিক বছরের পুরনো এই রেওয়াজ চলে আসছে যুগের পর যুগ ধরে৷ বর্তমান প্রজন্মও এই রীতি ধরে রেখেছে৷

আধুনিক সমাজে পঞ্চায়েত সমাজ ব্যবস্থা এখন আর দেখা যায় না। তবে পঞ্চায়েত হলো সামাজিক ব্যবস্থার এক অন্যতম ধারক ও বাহকের সমষ্টি। পঞ্চায়েত বলতে পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত পর্ষদকে বোঝায়। বাংলার ইতিহাসের মতোই প্রাচীন প্রথা হলো পঞ্চায়েত। কোরবানি ঈদে এ পঞ্চায়েত ব্যবস্থার কিছু কার্যক্রম দেখা যায়। বিশেষ করে গ্রামে এখনও পঞ্চায়েতের ধারা কিছুটা চলমান রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পূর্বপাড়া মহল্লার এই পঞ্চায়েত প্রথা অনেক পুরনো৷ সমাজে বৈষম্য দুর করে ঐক্য সৃষ্টি ও ধনী-গরিব বৈষম্য কমিয়ে আনতে এটির প্রচলন শুরু হয়েছিলো৷ যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। পাঁচশো বাড়ির তালিকা তৈরি করে বণ্টন হয়৷

এলাকার প্রবীণ ব্যাক্তি মেরাজ মিয়া (৭৫) বলেন, আমি ছোট থেকে এই বণ্টন দেখে আসছি৷ আমাদের বাপ দাদারাও এভাবেই পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বণ্টন করেন। বৃটিশ আমলের পর থেকে এটি চলে আসছে।'

বণ্টনের দায়িত্ব পালন করা এলাকার শরিফ, মিজান ও আব্দুল্লাহ বলেন, পাঁচ শতাধিক মানুষের তালিকা করে বণ্টন করা হয়েছে। পাঁচ হাজার কেজিরও অধিক গোসত জমা হয়েছে। আড়াই কেজি করে দেওয়া হয়েছে৷ কেউ না আসলেও বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি৷ সমাজিক ঐক্য ও ধনী-গরিব বৈষম্য দুর করাই আমাদের লক্ষ্য। এটি চলতেই থাকবে৷ '

স্থানীয়রা আরো জানান, বর্তমানে এই পঞ্চায়েতের সদস্য বা 'ঘর' সংখ্যা হল প্রায় ৫০০। প্রতি কোরবানির ঈদে এদের মধ্যে গড়ে ৪০/৪৬ টি পরিবার কোরবানি দিয়ে থাকে। আর বাকি বড় অংশ কোনো না কোনো কারণে কোরবানি দিতে পারে না। ঈদের আনন্দে যেন ভাটা না পড়ে তাই তাদেরকেও পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমবণ্টন করে কোরবানির মাংস দেয়া হয়ে থাকে।

ঈদের দিন সকালে তারা তাদের জবাইকৃত পশুর এক-তৃতীয়াংশ পঞ্চায়েতের মাঠে দিয়ে যাবেন। আর বাকি অর্ধেক রাখবেন তাদের নিজেদের জন্য। এছাড়া সে জবাইকৃত পশুর চামড়াও পঞ্চায়েতে জমা দেবেন। মাংস জমা হওয়ার পর নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে তা কেটে ভাগ করা হয়।

এ পঞ্চায়েতের বা সমাজের যিনি কোরবানি দিয়েছেন তিনিও মাংস পান এবং যিনি কোরবানি দেননি তিনিও মাংস পান। অর্থাৎ এ পঞ্চায়েতের সব ঘরেই কোরবানির মাংস পৌঁছায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর