ঈদে বান্দরবানে নেই পর্যটক, হতাশ ব্যবসায়ীরা

, জাতীয়

আমিনুল ইসলাম খন্দকার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বান্দরবান | 2024-06-18 10:06:21

ঈদ মানে খুশি। কিন্তু বান্দরবানের ব্যবসায়ীদের কাছে এবারের ঈদ মানে হতাশা। ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল-মোটেল ও অবকাশযাপন কেন্দ্রগুলো। তবে গত ঈদের তুলনায় এবার পর্যটক তেমন নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রতিবছর ঈদ ও সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকতো পাহাড়ি কন্যা খ্যাত পার্বত্য জেলা বান্দরবান। সরকারী যেকোন বন্ধে তাই বান্দরবানের হোটেল-মোটেল আর পর্যটকবাহী যানবাহনগুলো বুকিং হয়ে যেত কয়েকদিন আগে থেকে। তবে এবারে ভিন্ন চিত্র বান্দরবানে।

এবারের ঈদে আশানুরূপ পর্যটকের দেখা মিলছে না কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ও পরবর্তী পরিস্থিতিতে। নিরাপত্তা নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা ।

সাধারণত ঈদের ছুটিতে বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এ বছর জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলো প্রায় ফাঁকা বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও পর্যটন খাতের ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই।

বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান থাকায় ওইসব পর্যটনকেন্দ্র এড়িয়ে চলার কথা বলেছে প্রশাসন। তবে বান্দরবান সদরে নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণ মন্দির, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত ও প্রান্তিক লেক ভ্রমণে সমস্যা নেই। এ ছাড়া আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র। এসব পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণে  বাধানিষেধ নেই। তারপরও ঈদের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক সাড়া না পাওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কায় হোটেল মোটেল আর রিসোর্টের ব্যবসায়ীরা।

পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পাহাড়ের নানা সমস্যার কারণে হোটেল-মোটেল প্রায় শূন্য। গত বছর কিছুটা বুকিং থাকলেও এবার ঈদে তেমন অগ্রীম বুকিং নেই। অর্থ উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মচারীদের ছাঁটাই করেছেন হোটেল মালিকরা। বিপাকে পড়েছেন টুরিস্ট গাইড, চাঁদের গাড়ির চালক, আবাসিক হোটেলের কর্মচারীসহ অনেকেই। তারা পাহাড়ে সন্ত্রাস নির্মূল করে দ্রুত জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন।

বান্দরবান আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জসীম

উদ্দিন বলেন, গতবছর থেকে পর্যটক কমে গেছে। পর্যটক কমে যাওয়ায় আমাদের আবাসিক হোটেলগুলো ক্ষতির মুখে পড়ে গেছে। আমরা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েও পর্যটক পাচ্ছি না।

বান্দরবান সদরের আবাসিক হোটেল হিলটন এর ম্যানেজার মো. আক্কাস বলেন, হোটেল হিলটন এর ৮৫টি রুমের মধ্যে এবারের ঈদে কোন রুম বুকিং হয়নি। প্রতিবছর ঈদ উল ফিতর ও ঈদ উল আযহার বন্ধে হোটেল মোটেলে রুম পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়তো তবে এবার চিত্র ভিন্ন, পাহাড়ের অবস্থা ভালো না থাকায় পর্যটকরা আসতে ভয় পাচ্ছে।

এদিকে হোটেল মোটেল আর রিসোর্টের পাশাপাশি বুকিং নেই পর্যটকবাহী যানবাহন গুলোতে। ঈদের বন্ধে এমন হাহাকার অবস্থায় হতাশ পর্যটকবাহী যানবাহনের মালিক আর শ্রমিকেরা।

বান্দরবানের চাঁদের গাড়ীর চালক মো. উসমান বলেন, বান্দরবানের রুমা,থানচি ও রোয়াংছড়িতে সন্ত্রাসীদের আনাগোনার সংবাদে অনেক পর্যটক বান্দরবানে আসতে চাইছে না। পর্যটক না থাকায় অনেকে পর্যটকবাহী গাড়িগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে।

বান্দরবানের পরিবহন শ্রমিক নেতা মো. বাহাদুর বলেন, পর্যটক পরিবহনের জন্য চার শতাধিক চাঁদের গাড়ি রয়েছে। কিন্তু পর্যটক না আসায় গাড়িচালকরা সবাই বেকার হয়ে পড়েছেন। গত দুই ঈদের মতো এবারও তেমন একটা বুকিং নেই, পর্যটকও আসছে না। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে পেশাও পরিবর্তন করেছেন।

বান্দরবান টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মঞ্জিল মোরশেদ বলেন, বান্দরবানের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে দুর্গম এলাকার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটক যেতে না পারলেও, জেলা সদরের আশপাশের মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক, চিম্বুক ও নীলগিরি ভ্রমণে যেতে কোনো বাধা নেই।

তিনি আরও বলেন,বান্দরবান টুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত। এছাড়া বিভিন্ন হোটেল, কটেজ ও রিসোর্টগুলোতে পর্যটকদের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য জেলা টুরিস্ট পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, পাহাড়ে যেসব এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান আছে, সেসব এলাকা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। তবে রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি এ তিন উপজেলা ছাড়া অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তা স্বার্থে প্রত্যেকটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে আছেন।

বান্দরবানে গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, মসজিদে হামলা, টাকা-অস্ত্র লুটের ঘটনায়  মামলায় অভিযুক্ত  ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)’র  সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে বান্দরবানে  যৌথ বাহিনীর চিরুনি অভিযান চলমান রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর