সামনে এসএসসি পরীক্ষা, চ্যালেঞ্জে জয়ী হবেন শিক্ষামন্ত্রী?

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য,,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-10 11:00:20

পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও খবর বের হচ্ছে আবার না হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে ফাঁস হওয়ার। তাই ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ এই দুইটি শব্দ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি।

কিন্তু দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এই হুমকি থেকে বের করার জন্য নতুন উদ্যমে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে নতুন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন শিক্ষামন্ত্রী বেশ কয়েকটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়াও তিনি বলেছিলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা তার মন্ত্রণালয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি আরও বলেছিলেন, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা আমাদের জন্যও পরীক্ষা। সে পরীক্ষা যেন প্রশ্ন ফাঁসমুক্ত ও নকলমুক্ত হয়।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু শিক্ষামন্ত্রী কিংবা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের জন্য নয় নতুন সরকারের জন্যও প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি পরীক্ষা। কেননা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১তম অঙ্গীকারের মধ্যে শিক্ষার মান উন্নত করার কথাও অন্যতম ছিল।

তাই এই নতুন সরকার যে নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারকে সামনে নিয়ে কাজ করবে আগামী ৫ বছর তা আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করে ভোটারদের দেখিয়ে দিতে হবে।

তবে সর্বোপরি এখন সবার মাথায় প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের চ্যালেঞ্জে নতুন শিক্ষামন্ত্রী জয়ী হবেন কিনা। আর এই প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক। কেননা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নরুল ইসলাম নাহিদ প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতির কোনো সুফল ব্যাপক হারে দেখা যায়নি।

তবে আপাতত নতুন শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তি ইমেজের কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে তার প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস রাখতে চাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা কোনো কঠিন কাজ নয়। তবে এর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের স্বদিচ্ছা এবং সৎভাবে কাজ করার ইচ্ছা থাকলেই এ সমস্যা মোকাবেলা করা যাবে। তাছাড়া সংশ্লিষ্টদের মানসিকতার আমূল পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। যাতে করে তাদের মাথায় যেন এ চিন্তা না থাকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া তেমন খারাপ কিছু নয়।

তারা আরও বলছেন, যারা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মুদ্রণ, সংরক্ষণ ও বিতরণ করবেন তাদের বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে নতুন শিক্ষামন্ত্রীকে। কেননা তারা সৎভাবে কাজ না করলে সকল আয়োজনই ব্যর্থ হবে প্রশ্নপত্র ফাঁসমুক্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার। তাই তাদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়াসহ সৎভাবে তাদের কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং করতে হবে।

আর এসব দিকে নিশ্চিত করতে পারলে শতভাগ প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করার লক্ষ্যে নতুন শিক্ষামন্ত্রীরও ইচ্ছা রয়েছে। তিনি যখন এর আগেও বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন তখন তার সত্যতা ও কর্মদক্ষতার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তাই নতুন মন্ত্রণালয়েও তিনি ইচ্ছা নিয়েই কাজ করবেন। আর প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রশাসনিক স্বদিচ্ছা থাকাটা সব থেকে বেশি জরুরি।

তিনি বলেন, তবে শুধুমাত্র মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছা থাকলেই চলবে না। শিক্ষক মণ্ডলী, প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা বোর্ডের কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তাহলে এই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কোন কঠিন কাজ হবে না। কেননা অতীতে তো আমরা আরও অল্প লোকবল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি।

পরীক্ষার সময় কোচিং বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ঢাবির এই সাবেক ভিসি বলেন, কিছু কিছু কোচিং সেন্টারের মালিকরা শুধু প্রশ্নপত্র ফাঁস নয় পরীক্ষা হলে বসে রিটেন জালিয়াতিসহ নানা অপকর্ম তারা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রমাণও পেয়েছি।

তবে নতুন শিক্ষামন্ত্রী এই চ্যালেঞ্জে খুব সহজেই জয়ী হবেন না বলে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন। তারা বলছেন, সরকারের গত ১০ বছরের শাসন আমলে প্রশ্নপত্র ব্যাপক হারে ফাঁস হয়েছে। তাই চাইলেই এই সমস্যার সমাধান খুব দ্রুত সম্ভব সমাধান করা শিক্ষামন্ত্রীর জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

এ বিষয়ে ঢাবির শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত দশ বছরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় ব্যাপকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। আর এ প্রশ্নপত্র ফাঁস কমেনি, আগেরই মতো রয়েছে। আর এর দুইটি কারণ হতে পারে।

প্রথমত প্রভাবশালী লোকজনের সঙ্গে জড়িত, নয় তো সঠিক পলিসি সরকার এখনো নিতে পারেনি এ সমস্যা সমাধানে। তাই বিষয়টি এখনো চ্যালেঞ্জ নতুন শিক্ষামন্ত্রী ও দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর