ফেনী শহরের ৮ কিলোমিটার রাস্তার প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করল স্বেচ্ছাসেবকরা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবিঃ বার্তা২৪.কম

ছবিঃ বার্তা২৪.কম

বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্স (বিএসএ), ব্র্যাক ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর যৌথ উদ্যোগে ফেনীতে “প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় যুবসমাজের করণীয়” শীর্ষক কর্মশালা, বন্যা-পরবর্তী প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ এবং দিনব্যাপী মেডিক্যাল ক্যাম্প কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্জ্য অপসারণ কর্মসূচিতে শহরের উত্তরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে লালপোল পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার রাস্তার প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করেছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে, ফেনীর যুব স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্স (বিএসএ), ব্র্যাক ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর যৌথ উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সাম্প্রতিক বন্যা ও ত্রাণ কার্যক্রমের ফলে ফেনী জেলায় প্লাস্টিক পণ্যের (বিশেষত একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক) ব্যবহার বেড়েছে, যার ফলে প্লাস্টিক বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

আয়োজকরা জানান, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে চারটি দলে ভাগ হয়ে ফেনীর ২৫টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে। এসময় তারা প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য অপসারণ করে তার ব্যবহার কমানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবকরা ও জনসাধারণ এ কাজের প্রশংসা করে নিয়মিত পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবি জানান।

দিনব্যাপী এই আয়োজনে, সকাল ৯টায় “প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় যুবসমাজের করণীয়” শীর্ষক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে পরিবেশ সংরক্ষণে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা এবং যুবসমাজের করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্স (বিএসএ) এর প্রধান সমন্বয়ক, সংকলিতা সোম,পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ আনোয়ার ইকবাল,ব্র্যাক লারনিং এন্ড লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট, ব্র্যাক ইয়ুথ প্লাটফর্ম, এবং ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রামের এর প্রতিনিধি দল,দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এর প্রতিনিধিদল এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনসমূহ।

বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্স (বিএসএ) এর প্রধান সমন্বয়ক সংকলিতা সোম বলেন, ফেনীতে এই কর্মসূচি সাম্প্রতিক বন্যার পর শুধু পরিবেশ পুনরুদ্ধার ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে করতে সাহায্য করবে না বরং পরিবেশগত পরিবর্তনের জন্য তরুণদের সম্মিলিত শক্তির প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।

এ বিষয়ে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ আনোয়ার ইকবাল বলেন, “অব্যবস্থাপিত প্লাস্টিক বর্জ্য এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য আমাদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি, এগুলো মাটির ও পানির গুণগত মান নষ্ট করে, জলাবদ্ধতা তৈরি করে এবং প্রাণী ও মানুষের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই সংকট সমাধানে আমাদের সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে। প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতনতা ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি, এবং টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। একটি সবুজ ও টেকসই বাংলাদেশ গঠনে আমাদের সমন্বিত ভাবে কাজ করতে হবে।“

ফেনীর সেচ্ছাসেবক এস জেড অপু বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় ফেনী মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।আমরা স্থানীয় যুবকরা মনে করি প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া জরুরি। আজকের এই কার্যক্রম প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণের এই ধরনের উদ্যোগকে ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ফেনীসহ পুরো বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।"

এছাড়াও উক্ত আয়োজনের অংশ হিসেবে, ফেনী জেলার বন্যাক্রান্তদের জন্য দিনব্যাপী একটি ফ্রী মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়, যেখানে সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা, চিকিৎসকদের পরামর্শ, এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা হয়েছে। দিনব্যাপী এই কর্মসূচি জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ফেনীর পরিবেশ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে এবং টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণকে আরও সহজ করবে।