২০ টাকায় এসি বাসে চড়বেন বন্দরনগরীর মানুষ 

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2024-07-01 12:45:50

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। এই নগরীতে দিন দিন মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও সে পরিমাণ পরিবহন নেই। ফলে দাঁড়িয়ে বা ঠাসাঠাসি করে লোকাল বাসগুলোতে করে গন্তব্যে যেতে হয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। নগরীতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস সার্ভিসের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। সেই দাবি ও চাহিদার কথা ভেবে আট বছর পর নগরীতে আবারও নামনো হচ্ছে এসি বাস।

‘চট্টলা চাকা এক্সপ্রেস’ নামে বাসগুলো পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় পরিবহন সংস্থা শান্তি এক্সপ্রেস লিমিটেড। ৩৫ আসনের হলুদ রঙের বাসগুলো কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত প্রতিদিন যাতায়াত করবে। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত। এসব বাস সড়কে নামলে যাত্রীরা উন্নত সেবা পাবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাস মালিক পক্ষ।

সোমবাব (১ জুলাই) বিকেল চারটার দিকে নগরীর হোটেল আগ্রাবাদে এই এসি বাস সার্ভিসের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়ের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়াও অতিথি হিসেবে থাকবেন বিআরটিএ চট্টগ্রামের পরিচালক মো. মাসুদ আলম।

শান্তি এক্সপ্রেস লিমিটেড সূত্র জানায়, শুরুতে ২০টি বাস নামনোর কথা থাকলেও প্রথম পর্যায়ে ১০টি বাস চলাচল করবে সড়কে। উদ্বোধনের পর আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা নির্দিষ্ট কাউন্টারের মাধ্যমে বাসগুলো চলাচল করবে। শহরের দুই প্রান্ত থেকে প্রতিটি ৩০ মিনিট পর পর ৫টি করে মোট ১০টি বাস চলাচল করবে।

নগরীর চান্দগাঁও-কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত ১৪ নম্বর রুটে এসব এসি বাস চলাচল করবে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত প্রতিদিন বহু লোক যাতায়াত করেন। এর মধ্যে গণপরিবহন হিসেবে যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত আছে ২৫০টি নন কাউন্টারভিত্তিক ও ৫০টি কাউন্টারভিত্তিক বাস সার্ভিস। ওই রুটে উন্নত যাত্রীসেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নামছে এসি বাস।

উদ্বোধনের পর প্রাথমিকভাবে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত ৫০ টাকা, আগ্রাবাদ থেকে কাঠগড় পর্যন্ত ৫০ টাকা এবং সরাসরি কাঠগড় থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত ১০০ টাকা ভাড়ায় চলাচল করবে এই বাস। তবে পুরোদমে শুরু হলে এই সড়কের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তৈরি হবে কাউন্টার, সর্বনিম্ন ভাড়া রাখা হয়েছে ২০ টাকা।

এসি বাস সার্ভিস চট্টলা চাকা এক্সপ্রেসের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমরা এই এসি বাস সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছি। আশা করছি, যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক সেবা দিতে পারব। আমরা শুরুতে ১০টি বাস নামাচ্ছি সড়কে, পরে চাহিদা অনুযায়ী আরও ১০টি বাস নামানো হবে।'

তিনি আরও বলেন, এই সার্ভিসের আওতায় শুরুতে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতি ত্রিশ মিনিট পর পর নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বহদ্দারহাট, জিইসি, ইপিজেড ও কাটগড় মোড় পর্যন্ত চলাচল করবে এই বাস। প্রাথমিকভাবে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, জিইসি, আগ্রাবাদ এবং নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় দুটি করে ১০টি কাউন্টার তৈরি করা হয়েছে।'

মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, 'চট্টলা চাকা' নামের কাউন্টারভিত্তিক এই এসি বাস বন্দরনগরীতে চলবে মূলত রাজধানীর গুলশানে চলাচলরত 'ঢাকা চাকা' এসি বাস সার্ভিসের আদলে। বাসটির আসন ব্যবস্থাপনা হবে অনেকটা দূরপাল্লার বাসের আসন ব্যবস্থাপনার মতো। স্বয়ংক্রিয় বুকিং সিস্টেমের কারণে নির্ধারিত ৩৫টি আসনের অতিরিক্ত যাত্রী ওঠার সুযোগ থাকবে না বাসে।

এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা। তিনি বলেন, 'যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের জন্য কাউন্টারভিত্তিক পরিষেবা চালু করতে উৎসাহিত করে আসছি আমরা। চট্টগ্রামের সড়কে বর্তমানে কোনও এসি বাস নেই। এসি বাস চালু হলে গরমের মধ্যে যাত্রীরা স্বস্তিতে গন্তব্যে যেতে পারবেন। এটি ভালো উদ্যোগ।'

নগর পুলিশের (সিএমপির) ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপকমিশনার জয়নুল আবেদীন বলেন, 'কাউন্টারভিত্তিক বাস সার্ভিস চালু হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে এবং যানজট কমবে। যাত্রীরা ভালো সেবা পাবেন বলে আশা করছি। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতিও নিয়েছে পরিবহন সংস্থাটি।'

২০১৬ সালে প্রিমিয়ার ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি নগরীর ১৪ নম্বর রুটে ছয়টি পরিবহন নিয়ে এসি বাস সার্ভিস চালু করেছিল। সেটি স্থায়ী হয়নি। কয়েক মাসের মধ্যে সড়ক থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নগরীর তিনটি রুটে এসি বাস চালুর উদ্যোগ নেন। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এসব বাস চালুর জন্য করপোরেশনের ৫২তম সাধারণ সভায় সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। প্রথম দিকে তিনটি রুটে ১০০টি বাস নামানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এর মধ্যে কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা, ভাটিয়ারী থেকে লালদিঘী এবং নিউমার্কেট থেকে ফতেয়াবাদ রুটে নামানোর কথা ছিল। পরে এই উদ্যোগ সফল হয়নি। আট বছর পর আবারও নতুন করে এসি বাস নামানোর উদ্যোগ নেয় শান্তি এক্সপ্রেস লিমিটেড।

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীতে বাসের জন্য ১৭টি, হিউম্যান হলারের জন্য ১৮টি ও অটো টেম্পোর জন্য ২০টি রুট রয়েছে। এর মধ্যে নির্ধারিত রুটগুলো দিয়ে দৈনিক এক হাজার দুই শতাধিক বাস চলাচল করে। দুই হাজারের বেশি হিউম্যান হলার এবং অটো টেম্পো চলাচল করে। তবে চট্টগ্রামে ঠিক কত সংখ্যক গণপরিবহন রয়েছে এবং কত যাত্রী এগুলো ব্যবহার করেন, তার তথ্য নেই বিআরটিএর কাছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর