হাড্ডিগুড্ডি ভাঙি ফেলাইয়্যম, গুঁড়ি গরি ফেলাইয়্যম: আ. লীগ নেতাকে সাবেক এমপি

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো | 2024-07-02 19:48:04

হাড্ডিগুড্ডি ভাঙি ফেলাইয়্যম, গুঁড়ি গরি ফেলাইয়্যম-চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এভাবেই মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুরকে। বরাবরের মতো মোস্তাফিজের সেই গালিগালাজের অডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।

ঘটনার সূত্রপাত ২৯ জুন (শনিবার) উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় আবদুল গফুরের একটি বক্তব্যকে ঘিরে। ওই বক্তব্যে দলীয় কার্যালয় নির্মাণে সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বিভিন্ন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে চাঁদা নেন বলে অভিযোগ করেন। গফুরের এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। পরদিন ৩০ জুন গফুরকে ফোন করে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান মোস্তাফিজুর।

ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনের শুরুতে গফুর মোস্তাফিজুর রহমানকে সালাম ও নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমার ওই ফোনে চার্জ নেই। এরপর মোস্তাফিজুর রহমান সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ করে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলতে থাকেন ‘কাল (২৯ জুন) এগুলো কী বলেছিস? আমি কার থেকে চাঁদা নিয়েছি পার্টি অফিস বানানোর জন্য?

জবাবে গফুর বলেন, ওগুলো তো চেয়ারম্যানরা বলছেন। উত্তেজিত হয়ে গালি দিয়ে মোস্তাফিজুর বলেন, চেয়ারম্যানরা বলছে, আমার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করবি না, প্রমাণ দে না।’ গফুর আবারও বলেন, চেয়ারম্যানরা সবাই বলছেন তো। তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। আমি এত দিন আপনাকে বলিনি।

তখন গালিগালাজ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোন... (ছাপার অযোগ্য) কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তার (ছাপার অযোগ্য) প্রমাণ দেখাতে বল। নইলে তোকে এসে হাড্ডি (হাড়) ভেঙে ফেলব আমি। গফুর আবার বলেন, চেয়ারম্যানরা সবাই এখন বলছেন তো।

মোস্তাফিজুর রহমান উত্তেজিত হয়ে আবার গালিগালাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, যে বলেছে তাকে আমার সামনে নিয়ে আয়। চাঁদা নিয়েছি এটা প্রমাণ দিতে হবে।

একপর্যায়ে মোস্তাফিজুর বলেন, তুই এখনো আমাকে চিনস নাই। আমি এলে তোর হাড় গুঁড়ো করে ফেলব। এরপর গফুরের মাকে জড়িয়ে প্রকাশ অযোগ্য গালি দেন মোস্তাফিজুর। জবাবে গফুর বলেন, গালি দিলে আমাকে দেবেন, আমার মা-বাবাকে নিয়ে কথা বলেন। এটা তো ভালো না। তখন মোস্তাফিজুর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, মা-বাবা এরকম ছেলে জন্ম দিসে কেন?

এখানেই থামেননি মোস্তাফিজুর রহমান। গালি দিয়ে আবার মোস্তাফিজুর বলেন, তোকে বাঁশখালী কলেজে ঢুকিয়েছি আমি। হয় কি না, তুই কোরআন ধরে শপথ করে বল না। আমি আগে চট্টগ্রাম আসি। সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। ২৯ জুন অনুষ্ঠিত দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর যে সভায় গফুর বক্তব্য দেন, সেখানে বর্তমান সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান প্রধান অতিথি ছিলেন।

ওই সভায় আবদুল গফুর বলেন, সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বুঝাতে চেষ্টা করেছেন নিজের বাড়ি না করে তিনি দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করেছেন। অথচ এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভণ্ডামি।

মিথ্যার উপরই সাবেক এমপির জন্ম আখ্যা দিয়ে আবদুল গফুর সেদিন আরও বলেন, দলীয় কার্যালয় নির্মাণে সাবেক এমপি ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছেন। খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দারের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা, সাবেক চেয়ারম্যান বদরুদ্দীন চৌধুরীর কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা, কাথরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইবনে আমিনের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা, পুকুরিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা মাহবু্ব আলীর কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালীব সাদলীর কাছ থেকে ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে অফিস সংলগ্ন ছড়ায় গাইড ওয়াল নির্মাণ করেন মোস্তাফিজ। এভাবে আরও বহু মানুষের কাছে টাকা নিয়েছেন সাবেক এমপি মোস্তাফিজ।

মোস্তাফিজের এমন ব্যবহারে মর্মাহত হয়েছেন আবদুল গফুর। তিনি বলেন, আমি সেদিন চেয়ারম্যানদের অভিযোগের বিষয়টি সভায় তুলে ধরেছিলাম। সেজন্য আমার মা-বাবাকে জড়িয়ে গালিগালাজ করেছেন আমার সভাপতি। আমি তার এমন আচরণে খুবই মর্মাহত হয়েছি।

সাধারণ সম্পাদককে গালি দেওয়ার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি মোস্তাফিজুর রহমান।

অবশ্য এর আগেও বিভিন্ন নেতাকে গালিগালাজ করে ভাইরাল হয়েছিলেন মোস্তাফিজুর। একবার গাড়িতে চড়তে চড়তে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জড়িয়ে বিভিন্ন অপ্রীতিকর কথা বলেন মোস্তাফিজুর। পেছন থেকে সেটি একজন ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন। তখনও মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরে প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে মিছিল করেও সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। এরপরও সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তবে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ করায় ভোটগ্রহণের শেষ মুহূর্তে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। এই আসনে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর