ট্রাক চালকের ছদ্মবেশে মাদকের কারবার

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-07-05 14:09:58

ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার জাজিরা বোটঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া ট্রাংকের ভেতরে তোশক মোড়ানো এক যুবকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ঘাতককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

নিহত দিপু হাওলাদার ওরফে মো. সুমন (৩৪)। তিনি একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম। সুমনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আল-আমিনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব বলছে, দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক চালকের ছদ্মবেশে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মাদকের চালান সরবরাহ করতেন নিহত সুমন ও তার কয়েকজন বন্ধু। সম্প্রতি মাদকের টাকার দ্বন্দ্বে তিন বন্ধু মিলে সুমনকে হত্যা করা হয়। এরপর তোশক পেঁচিয়ে ট্রাংকের ভেতরে নিয়ে নদীর পাড়ে ফেলা হয়।

শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালে ট্রাংক থেকে উদ্ধার হওয়া যুবকের পরিচয় ও হত্যার ঘটনায় ঘাতককে গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-১০ এর সহকারী পুলিশ সুপার এম. জে সোহেল।

মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, গত ২৩ জুন সকাল ৮টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ স্থানীয়রা কল দিয়ে জানান, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কোন্ডা ইউনিয়নের জাজিরা বোট সংলগ্ন ব্রিজের নিচে একটি বড় ট্রাংক পড়ে আছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাংকটি উদ্ধার করে। এরপর ট্রাংক খুলে তোশকে মোড়ানো অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে থানা পুলিশ নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মরদেহ ময়নাতদন্তের স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

নিহতের পরিচয় শনাক্তের বিষয়ে র‌্যাব-১০ এর সহকারী মিডিয়া কর্মকর্তা বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধারের পরে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। নিহত দিপু হাওলাদার ওরফে মো. সুমন পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার মৃত দেবেন্দ্র হাওলাদারের ছেলে। সুমন আনুমানিক পাঁচ বছর আগে সনাতন ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে। দিপু হাওলাদার পরিবর্তন করে সুমন নাম ধারণ করে। এরপর তিনি সুবর্ণা ওরফে পারভিনকে ইসলামী শরীয়ত মতে বিয়ে করে। ইসলাম ধর্মগ্রহণ করায় পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে যায়।

এই ঘটনায় নিহতের মা মিনতি হাওলাদার বাদী হত্যা মামলা করেন। মামলায় নিহতের মা অভিযোগ করেন, ছেলের স্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পারেন যে, আরিফ ও বাবু নামে দুই ব্যক্তির সঙ্গে সুমনের পরিচয় হয়। তারা সুমনের বাসায় যাতায়াত করতেন। গত ১৮ জুন সুমন ও তার দুই বন্ধু আরিফ এবং বাবুর সঙ্গে ঢাকায় আসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর ঢাকায় আসার তথ্য স্ত্রীকে জানালেও পরবর্তীতে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

বাদীর মামলার অভিযোগ ও প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে র‌্যাব-১০ রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার রায়েরাবাজার পুলপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে আল আমিনকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল-আমিন হত্যার বিষয়ে র‌্যাবকে জানিয়েছে, নিহত সুমন, আরিফ, বাবু এবং আল-আমিন সবাই পেশায় ট্রাক চালক। এই পেশার আড়ালে তারা সবাই মাদক কারবারে জাড়িত। গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে তারা দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে মাদক পটুয়াখালী, ঢাকার কেরাণীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দিত। মাদক বিক্রির সিন্ডিকেট এবং টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সুমনের সঙ্গে আল-আমিন, আরিফ ও বাবু বিরোধের সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের জেরে তারা তিন বন্ধু মিলে সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলে সুমনকে পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর কেরানীগঞ্জে ঘাতক আল-আমিনের ভাড়া বাসায় নিয়ে তিন বন্ধু মিলে সুমনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর সুমনের লাশটি গুম করদে তোশক দিয়ে মুড়িয়ে একটি ট্রাংকে ভরে ট্রাকে করে নিয়ে গিয়েঘটনাস্থলে ফেলে সবাই আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামিকে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেকিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর