উন্নয়নের নামে ভোগান্তি, দুর্ভোগ চরমে

, জাতীয়

মাসুম বিল্লাহ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা: | 2024-07-05 14:50:11

গাইবান্ধার সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের এসকেএসইন মোড় থেকে রাধাকৃষ্ণপুরগামী ১ কি.মি. রাস্তায় চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ। চলমান বৃষ্টিতে এই রাস্তায় প্রায় হাঁটু সমান কাদা হয়েছে। ফলে সেখানে হেঁটে চলাও দায় হয়ে পড়েছে পথচারীদের। জেলা শহরের সাথে দুই ইউনিয়নের মানুষের সহজে যোগাযোগের একমাত্র পথ হওয়ায় বাধ্য হয়ে জুতা হাতে, সাইকেল কাঁধে, মোটরসাইকেল স্টার্ট দিয়েও হেঁটে নিয়ে যেতে হচ্ছে মানুষদের। সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন ওই পথের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয়রা জানান, মাস দুয়েক আগে রাস্তাটির ওই অংশে মাটি দেওয়ায় এমন কাদার সৃষ্টি হয়েছে। এমন উন্নয়ন এখন ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় হতে গত অর্থ বছরের শেষের দিকে বিশেষ বরাদ্দে এসকেএসইন মোড় থেকে রাধাকৃষ্ণপুরগামী (ভেলাকোপা) এক কিলোমিটার রাস্তায় মাটি কাটা হয়। উন্নয়নের জন্য সেই মাটিই এখন ওই পথে চলাচলকারীদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কাদা রাস্তায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে/ ছবি: বার্তা২৪.কম

সরজমিনে বৃহস্পতিবার সকালে ওই রাস্তায় দেখা যায়, পথচারিরা হাঁটুর উপর কাপড় তুলে জুতা হাতে চলাচল করছেন। কাদা ভেদ করে হেঁটেই চলেছে বাইসাইকেল চালকরা। সাইকেলের চাকায় কাদা আটকে গিয়ে অনেক কষ্টে ঠেলে ঠেলে ওই পথ পার হচ্ছেন সাইকেল চালকরা। মোটরসাইকেল চালকরা গাড়ি চালু রেখেই ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন মোটরসাইকেল। এছাড়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকদেরকেও জুতা হাতে চলতে দেখা গেছে। কাদায় পিছলে পড়ে কাপড় নষ্ট হয়ে যাত্রাও ভঙ্গ হচ্ছে কারো কারো।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় বছরই স্থানীয়রা চাঁদা তুলে ভাঙা ইট, বালি, সুরকি ও রাবিশ ফেলে ওই রাস্তা মেরামত করে কিছুটা চলাচল উপযোগী করেছিলেন। কিন্তু পর পর দুই দফায় সেখানে মাটি কাটায় ইট ঢেকে পড়ে কাদার সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সবুর সরকার, শরিফুল ইসলাম , জহুরুল হক ও অষুধ ব্যবসায়ী এনামুল হকসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, 'রাস্তায় নতুন করে মাটি কাটার কারণেই আজকে এখানে হাঁটু পরিমাণ কাদা হয়েছে। মাটি কেটে উন্নয়ন করতে গিয়ে আমাদের ভোগান্তিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই রাস্তায় যে স্থানগুলো খারাপ ছিলো সেখানে আমরা ভাঙা ইট ফেলে চলাচল উপযোগী করেছিলাম। তখন এতটা কাদা বা ধুলা হয়নি। নতুন করে মাটি কেটে ইটগুলো ঢেকে দেওয়ার কারণে এখন বছর বছর বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান কাদা হচ্ছে।

এ সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, "শুধু মাত্র বিল তোলার জন্য এখানে যৎ সামান্য মাটি কাটা হয়েছে। এই রাস্তাটিতে মাটি কাটার কোনো প্রয়োজনেই ছিলনা। কাঁচা হলেও এতটা কাদা হতোনা। সরকারের টাকা লুটপাট করে আত্মসাৎ করতেই এখানে লোক দেখানো কাজ করে আমাদেরকে ভোগান্তিতে ফেলা হয়েছে।

কাদা রাস্তায় মোটরসাইকেল ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন পথচারী/ছবি: বার্তা২৪.কম

এ সময় ওই পথে জুতা হাতে নিয়ে হেঁটে চলা পথচারী স্থানীয় লাভলু মিয়া বলেন, 'রাস্তাটির এই দূরাবস্থা দীর্ঘদিনের। আমরা প্রত্যেক বছরই বর্ষায় কাদায় ভোগান্তিতে পড়ি, খরাতেও ধুলায় হেঁটে চলা দায় হয়েছে। রাস্তাটি দেখার কেউই নেই। মোটরসাইকেল স্ট্রার্ট দিয়ে হেঁটে নিয়ে চলা রওশন মিয়া বলেন, রাস্তার যে অবস্থা দেখতেই পারছেন। আসলে শহরে সহজে যাওয়ার রাস্তাটি এটি। এছাড়া অন্যদিকে যেতে চাইলে ৪-৫ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়।

কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ স্কুল থেকে ফিরে আসা এক নারী অভিভাবক বলেন, রাস্তাটি খুব দ্রুত পাকাকরণ জরুরি। শিশু বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেতে আমাদের অনেকটাই সমেস্যা হচ্ছে। স্কুলে যাওয়ার সময় অনেক বাচ্চা পড়ে কাপড় নষ্ট হয়ে সেদিন আর বিদ্যালয়ে যেতে পারছেনা। আমাদের এই রাস্তার কারণে বর্ষাকালে বেশিরভাগ দিনই স্কুলে যাওয়া হয়না এবং একই কারণে এই এলাকার বেশ কিছু অভিভাবক বাচ্চাকে স্কুলে নিয়েই যাচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে ৮ নং বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাবু বার্তা২৪.কমকে বলেন, রাস্তাটি বোয়ালী ইউনিয়নের অতি পুরাতন এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা। রাস্তাটি পাকাকরণ অতি জরুরি। এসময় রাস্তা পাকাকরণে স্থানীয় সাংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর