মশারি ছাড়াই চলছে মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসা

, জাতীয়

জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-07-05 16:17:04

বৃষ্টি বর্ষায় জমা পানিতে এডিস মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়ে রাজধানী ঢাকায় বাড়ছে ডেঙ্গু মশার উৎপাত। সেই উৎপাতে মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছুটছে ঢাকায় বসবাস করা মানুষ। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও সচেতনতার ঘাটতি সেখানেও। কোনোরকম মশারি ছাড়াই চলছে তাদের চিকিৎসা। এতে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক থেকে শুরু করে ঝুঁকিতে পড়ছে অন্য রোগীরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, শুক্রবার (৫ জুলাই) পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৩২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারমধ্য রাজধানীতে ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। আর রাজধানীর বাইরে আক্রান্ত হয়েছে ২০ জন।

মুগদা মেডিকেল কলেজের ডেঙ্গু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর চাপ নেই। যে কয়জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এসেছেন তাদের সবাইকে মশারি ছাড়াই থাকতে দেখা গেছে। হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীদের বারবার বলা হলেও তারা মশারি ব্যবহার করছেননা। আর রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে তাদের মশারি দেয় না বলে তারা ব্যবহার করছেননা। কিন্তু রোগীদের হাসপাতাল থেকে মশারি দেওয়ার বরাদ্ধ নেই।

মুগদা হাসপাতাল সূত্রে জানা যা, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সাতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর শুরু থেকে আজকে পর্যন্ত মোট ৩০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯ জন মারা গিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৬৯ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২২ জন।

খিলগাঁও মাদারটেক এলাকায় লেগুনা চালায় বশির হোসেন (২৮)। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেলে জ্বর শরীর ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছে মুগদা হাসপাতালে। পরে  রক্তের পরীক্ষা করা শেষে জানতে পারেন ডেঙ্গু আক্রান্ত তিনি।

বার্তা২৪.কমকে বশির হোসেনের মা বলেন, বৃহস্পতিবার এখানে ডাক্তার দেখানোর পরেই ভর্তি দিয়ে দেয়। পরে পরীক্ষা শেষে জানতে পারি আমার ছেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত। হাসপাতাল থেকে সব ধরনের ওষুধ দিলেও মশারি দেয় নাই আমাদের। তাই মশারি ছাড়াই আমরা চিকিৎসা নিচ্ছি।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারেক আজিজ। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। জ্বর, মাথাব্যথা, ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ ছিল তার। সাধারণ ভাইরাস জ্বর ভেবে শুরুতে বাসাতেই চিকিৎসা নিয়েছিলেন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ভোলা থেকে ঢাকায় এসে ডাক্তার দেখান। এখন এই হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

মুগদা হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তার আসমা আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, গতবারের চেয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগী কম আসছে। গতবার এসময় হাসপাতালে রোগীর চাপে আমাদের হিম শিম খেতে হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়লে চিকিৎসায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগীদের মশারির বিষয়ে আসমা আক্তার বলেন, ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনদের বার বলা হচ্ছে আপনারা মশারি ব্যবহার করেন। কিন্তু তারা কিছুতেই শুনছেনা আমাদের কথা। তারা বলছে হাসপাতাল থেকে আমরা মশারি ব্যবস্থা করে দিতে। কিন্তু মশারি জন্য এখানে কোনো বরাদ্ধ নেই।

ডেঙ্গু চিকিৎসা ও আক্রান্ত নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঢাকায় বসবাসরত নাগরিকরাও মশার ব্যাপারে সচেতন নন। ঢাকার বাসা-বাড়িতে ছাদবাগান প্রথা চালু হয়েছে। বাড়ির ছাদে নানা ফুল-ফলের বাগান করা হচ্ছে। অথচ ওই সব বাগানের টবে পানি জমে এডিসের লার্ভার প্রজনন ক্ষেত্র গড়ে তোলা হয়েছে। এসব বিষয়ে নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

ডা. লেলিন চৌধুরী আরও বলেন, এডিস মশা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এবার জুন মাস থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। এবার সিটি কর্পোরেশন ও সাধারণ মানুষ যদি এডিস মশার বিরুদ্ধে সচেতন না হয় তাহলে গতবারের চেয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি হবে এবার।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ও প্রস্তুতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসায় এবার ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে আলাদা করে ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলার কথা বলা হয়েছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার বিষয়টি জোরালোভাবে তদারকি করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সর্বাধিক লোক আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছে। সেসময় সারাদেশে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো, আর মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় এক হাজার ৭০৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মত গত বছর আক্রান্ত ও মৃত্যু দেশের ২৪ বছরের ডেঙ্গুর ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে গিয়েছিলো। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর