নিপীড়ক দুই শিক্ষকের ‘পক্ষ’ নেওয়ায় অধ্যক্ষেরও শাস্তি চান অভিভাবকেরা

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো | 2024-07-05 20:16:48

ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নে অভিযোগ ওঠা চট্টগ্রামের সেন্ট স্কলাসটিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে মাঠে নেমেছেন অভিভাবকেরা। এই দুই শিক্ষকের ‘পক্ষ’ নেওয়ায় অধ্যক্ষের শাস্তিও চান তাঁরা।

শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে এই দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানবন্ধন করেন শতাধিক অভিভাবক। সেন্ট স্কলাস্টিকাস্ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সচেতন অভিভাবকদের ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন ছাত্রীর অভিভাবক দুই শিক্ষক সুরজিৎ পাল ও রাকিব উদ্দিনের নামে মামলা করেন। সেই মামলার পর পুলিশ রাকিব উদ্দিনকে গ্রেফতারও করে। এই ঘটনা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে পক্ষে বিপক্ষ তৈরি হয়। কলেজের অধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষক অভিযুক্ত দুজন শিক্ষকের পক্ষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেছেন অভিভাবকেরা। সর্বশেষ গত ৩০ জুন প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী সেলিন কস্তা তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে নগরীর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। অভিযোগে তিনি কয়েকজন শিক্ষক তার কক্ষে ঢুকে তাকে হত্যার হুমকি দেন বলে উল্লেখ করেছেন। তবে ওই শিক্ষকদের ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি করছেন অভিভাবকরা।

মানববন্ধনে অভিভাবকেরা বিভিন্ন দাবি সংবলিত প্লেকার্ড তুলে ধরেন। অভিভাবকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সেখানে বক্তব্য দেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক কর্তৃক এক ছাত্রীর সঙ্গে ঘটা নিপীড়নের ব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্ন। অভিযুক্ত দুইজন শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ও মুঠোফোনের মাধ্যমে ছাত্রীটিকে উত্যক্ত করতেন। তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সায় না দিলে হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। এরপর ওই ছাত্রীর মা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট মৌখিকভাবে জানান। কিন্তু বিচার পাননি। পরে বাধ্য হয়ে তিনি মহামান্য আদালতে মামলা করেন।’

কিছু নরপিশাচ শিক্ষকের কারণে সন্তানেরা স্কুলেও নিরাপদ নন বলে অভিযোগ করেন সানজিদা মুনতাহা নামে এক অভিভাবক। তিনি বলেন, ‘নরপিশাচদের আমরা দৃষ্টান্ত শাস্তি চাই। আমরা অভিভাবকরা যদি এগিয়ে না আসি তাহলে এরকম ঘটনা বারবার দেখতে পাব। বারবার এসব ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। ফলে যারা অন্যায় করছে তারাও পার পেয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের সুরক্ষার জন্য এ কর্মসূচি। ওই দুজন নরপিশাচকে স্কুলের ভেতর থেকে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে।'

যেসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষিকা জিডি করেছেন তারা সত্য উদঘাটন করেছিলেন বলে জানান আলী ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘এখন ওই শিক্ষকদের শায়েস্তা করতেই তাদের বিরুদ্ধে এ জিডি করা হয়েছে। তারা নিরপরাধ। আমাদের কন্যারা আজ স্কুলে নিরাপদ নন। প্রধান শিক্ষক ও ওমর ফারুক ওই যৌন নিপীড়নকারী স্যারদের ইন্ধনদাতা। আমাদের বাচ্চারা যাতে নিরাপদে স্কুলে যেতে পারে সেজন্য তাদের আগে বহিষ্কার করতে হবে। তাহলেই স্কুলের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে।'

স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা ব্রিজেট ডায়েসও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘সত্যের পক্ষে আমার দৃঢ় অবস্থান সবসময় ছিল এবং থাকবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ যা করছে ভালো করছে না। যে ঘটনা স্কুলে ঘটছে এজন্য আমি পুরো দায়ী করবো প্রধান শিক্ষিকাকে। ২০২২ সালেও এরকম অভিযোগ সুরজিৎ এর বিরুদ্ধে উঠেছিল। কিছুদিন সাসপেন্ডও হয়েছিল সে। পরে তাকে আবার ফিরিয়ে আনেন প্রধান শিক্ষিকা। তিনি এখনও আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তাকে বাঁচাতে।'

প্রাক্তন এই শিক্ষক প্রধান শিক্ষিকাসহ ওই শিক্ষকদের একেবারে সাসপেন্ড করার দাবি জানান। প্রধান শিক্ষিকা যদি আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিতেন ওই শিক্ষকরা এতকিছু করতে পারতেন না। মো. মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন জানে আলম, অঞ্জন শিকদার ও রতন দাশ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর