‘সিএমপির দরজা সবার জন্য খোলা, কোনো ব্যারিয়ার থাকবে না’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2024-07-08 18:16:23

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) নবনিযুক্ত কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, আমার কার্যালয়ের দরজা সব মানুষের জন্য খোলা থাকবে, কোনো ব্যারিয়ার থাকবে না। আমি চেষ্টা করব আমার কার্যালয়ে যেন সবাই  এসে তাদের মনের কথা বলতে পারে।

সোমবার (৮ জুলাই) বেলা ১১ টার দিকে নগরীর দামপাড়া পুলিশ সাইন্সের মাল্টিপারপাস শেডে 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানের সাংবাদিকদের এসব কথা জানান নতুন এই পুলিশ কমিশনার।

সিএমপির নতুন কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, আপনারা আমাকে গাইড দেবেন। আমার প্রথম কোন কাজটা করা উচিত। আর কি কি সমস্যা রয়েছে সেটিও জানাবেন। প্রত্যেকটা জায়গায় অপরাধের ধরণ আলাদা আলাদা। চট্টগ্রামেও আলাদা হবে। যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবেন। আমি সেটি সমাধান করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আমি চট্টগ্রামে আগেও দায়িত্ব পালন করেছি তাই এই এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার একটা আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি এইটুকু নিশ্চিত করতে চাই আপনাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হবে অন্যরকম। আপনাদের আর আমাদের কাজ একই রকম। যদি আপনারা কোনো তথ্য থানা থেকে না পান সরাসরি আমাকে ফোন দেবেন। জানাবেন যে, এই তথ্যটা পাচ্ছি না, এখানে লুকানোর কিছু নেই। আমি কখন কোন থানায় যাব, আমার বডিগার্ডও বলতে পারবেনা। আমি কোন থানা কোথায় এবং কার বাড়ি কোথায় সব জানি। সুতরাং আপনাদের সঙ্গে আমার কোনো গ্যাপ থাকবে না। অনেকে আননোন নম্বর ধরে না, আমি ধরি। একটা মার্ডার হয়েছে বা ডাকাতি। এটা লুকাবো কেন, যদি আমি লুকাই তাহলে যারা ওই কাজ করেছে তারা পার পাবে। আমি যখন ডিসি বা এসপি ছিলাম তখন বলতাম, একজন মানুষ খুন হয়েছে সেই আত্মাটা আমাকে তাড়া দেয়। যখন কোনো খুন হত, আমি আসামি ধরতে না পারলে রাতে ঘুম হতো না, অন্য কোনো কাজ করতে পারতাম না। অপরাধটা যে লেভেলের হোক না কেন। 

এরপর উপস্থিত সাংবাদিকরা নতুন কমিশনারকে বিভিন্ন প্রসঙ্গে পরামর্শ ও প্রশ্ন করেন। পরে তিনি প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন।

কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে এসে প্রথমে থানার জিডি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আমি থানার সব ধরনের জিডি নিয়ে এসেছি। বিশেষ করে মানুষ নিখোঁজ এবং মোবাইল ছিনতাই। এইগুলো নিয়ে আমি কাজ শুরু করেছি। ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলো যদি উদ্ধার না হয়ে থাকে তাহলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে আমি এটা জানতে চেয়েছি।

সম্প্রতি মানুষ নিখোঁজের একটি খবর বেরিয়েছে, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আমি আসার আগে আমার অ্যাডিশনাল কমিশনার কাজ করছে। পুলিশ হেড কোয়াটার থেকেও এটা বলা হয়েছে। গতকাল আমার এক ব্যাচমেট ফোন দিয়েছে, তার ভাই অথবা বোনের ছেলে মাদ্রাসায় গিয়েছে তারপর আর ফেরেনি। ১৪ বছর বয়স তার। পরে আমি ইন্টারফেয়ার করে জানতে পারছি বাসার আশেপাশে ঘুরতেছে। আমার কাছে যে স্টেটমেন্ট রয়েছে এর মধ্যে ৮ জন প্রেম গঠিত। সবগুলো খুঁজে পেয়েছে। পারিবারিকভাবেও রাগ করে কয়েকজন চলে গিয়েছে পরে তাদেরকে পাওয়া গেছে। কেন জানি মনে হচ্ছে এই জিনিসটাকে ফলা করে একটি পক্ষ প্রচার করছে। যারা এটি প্রচার করেছে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ তাদের থেকে আমরা স্টেটমেন্ট নিয়েছি, থানায় না গিয়ে এটা ফেসবুকে দিয়েছে, পরে তাদের কাছ থেকে আমরা জেনেছি। সবগুলোকে তারা খোঁজে পেয়েছে। এটা সম্পূর্ণ গুজব।

কিশোর গ্যাং নেতাদেরকে বিট পুলিশিং কমিটিতে রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এসেই সবাইকে বলেছি বিট পুলিশিংয়ের যে কমিটি রয়েছে বা যারা রয়েছে, আমাদের যে পিসিপিআর বলে সেগুলা যাচাইয়ের জন্য কয়েকজনকে দিয়েছি। আমি ভালো মানুষগুলোকে ওখানে নিয়ে আসতে চাই। আমাদের যে ওপেন হাউস বা উঠান বৈঠক হয়। আমি আজকে বলে দিচ্ছি, আমার ওপেন হাউস ডে থানায় হবে না। এক থানায় চারটা ওয়ার্ড রয়েছে, আমি সব ওয়ার্ডে নিয়ে যাব। থানায় কেন মানুষ এসে তার অভিযোগগুলো জানাবে, আমি যাব মানুষের কাছে। সেই ওপেন হাউসগুলোতে আমার অনেক লোক দরকার নেই। ১০ জন লোক আসলেই যথেষ্ট। যাদের আসলেই সেবার জন্য প্রয়োজন। ওপেন হাউসে ডেতে যে মানুষগুলো আসবে তারা যেন সরাসরি আমার সঙ্গে কথা বলতে পারে এবং আইনি সহায়তা পাই।

ফুটপাতে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, ফুটপাত যদি পুলিশের সংশ্লিষ্টতা না থাকে তাহলে ফুটপাতের কথা আসতে পারে না। আমার ঘাড়ে বন্দুক রেখে ২০০ টাকা নিয়ে আমাকে দুই টাকা দেবে এটা দরকার নেই। 

সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি চট্টগ্রামে এসে শুনেছি কিশোর গ্যাংয়ের কথা। এটা নিয়ে আমি এসেই কাজ শুরু করেছি এবং আমার একটা ওয়ে তৈরি করব, আমি প্রথমে কলেজ ইউনিভার্সিটি গুলোতে প্রোগ্রাম করব। আমার ধারণা দু একটা প্রোগ্রাম করার পরে কলেজ বা ভার্সিটির সঙ্গে থাকে, তারা আর থাকবে না। অভিভাবকদের প্রতি এমন একটা অনুরোধ থাকবে, আপনার সন্তান কোথায় যায় না যায় তা দেখেন। যদি আমি তাকে থানায় নিয়ে আসি তাহলে তার ক্যারিয়ারটা নষ্ট হয়ে যাবে। মানুষ বলবে, তিনি একজন খারাপ মানুষ। আমি চাইনা তার গায়ে একটা কালিমা লাগুক।

তিনি আরও বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। এ কয়দিন আমরা যে পরিমাণ মাদক উদ্ধার করতে পেরেছি, এটাকে আমি একটা নেগেটিভভাবে দেখি। মাদক উদ্ধার বেশি মানে এখানে মাদক শিবির সংখ্যা বেশি। মাদক উদ্ধার বেশি হলে এটা অনেকে পজিটিভভাবে দেখে আমি কিন্তু নেগেটিভ ভাবে দেখি। মাদক উদ্ধার মানেই মাদকের এখানে ডিমান্ড রয়েছে। এটি নিয়েও আমরা কাজ করব।

থানায় মামলা বা জিডির প্রসঙ্গে কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি চাই মামলা বাড়ুক। না হলে কিন্তু আমি আইডেন্টিফাই করতে পারব না। মামলা না হলে কিন্তু রেকর্ড তৈরি হয় না। যে একটা ছিনতাই হয়েছে বা খুন হয়েছে। যখন প্রতিমাসে মামলা আসবে তখন আমরা খবর নিতে পারব এটার কি অবস্থা। আমি শুধুমাত্র মামলা না প্রতিটা বিষয়ে লায়াবিলিটি নিয়ে আসতেছি। একটা ছোট্ট জিডি একটা মানুষ হারিয়ে গিয়েছে, সেটিও আমি কোয়ারি করব। যখন আমি জিডি নিয়ে কাজ শুরু করছি তখন নিখোঁজ লোকগুলো পেয়ে গেছি এবং মোবাইল উদ্ধারের যে জিডি, সেগুলো এখনো পাইনি। একটা দুটো না কয়েকশো মোবাইলের জিডি হয়েছে। 

অনুষ্ঠানে সিএমপির বিভিন্ন জোনের ডিসি ও সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর