সৌন্দর্যের শহর গড়তে গাইবান্ধার ডিসির উদ্যোগ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা | 2024-09-20 18:26:21

উত্তরের জেলা গাইবান্ধাকে সৌন্দর্য্যের শহর হিসেবে গড়তে উদ্যোগ নিয়েছেন গাইবান্ধার নবাগত জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ। সংশ্লিষ্টরাসহ জেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা পেলে গাইবান্ধাকে একটি আধুনিক পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়তে চান তিনি। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই জেলার ঘাঘট লেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যার কার্যক্রম শুরুও করেছেন জেলা প্রশাসক। নেওয়া হচ্ছে পরিকল্পনাও।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলার একমাত্র লেক 'ঘাঘট লেকের' পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার এই উদ্বোধনী অভিযানের প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন নবাগত জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ। জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার আয়োজনে এই অভিযানে অতিথি হিসেবে ছিলেন জেলার নবাগত পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও গাইবান্ধার পৌর প্রশাসক শরিফুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ আল হাসানসহ পৌরসভাসহ বেশ কয়েকটি দফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

উদ্যোগ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'সম্প্রতি আমি গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পরেই শহরটি ঘুরতে বের হই। বেড়ানোর সময় গাইবান্ধা শহরের প্রাণ কেন্দ্র ঘাঘট লেকের ময়না-আবর্জনা আমার চোখে পড়ে। অথচ এটি একটি লেক। দেশের উন্নত শহরগগুলোর অনেক লেক আমি দেখেছি। যা দেখলেই যে কোনো মানুষের মন কাড়বে, ভাল লাগবে। কিন্তু বাহিরের জেলার মানুষ গাইবান্ধায় ঘুরতে বের হয়ে ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর লেক দেখলে প্রথমেই একটি নেতিবাচক ইম্প্যাক্ট পড়ে। সুযোগ রয়েছে, সকলের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে আমরা ঘাঘট লেককে একটি আধুনিক লেকে রুপান্তরিত করতে পারবো। ঘাঘট লেকে বেশ কিছু অবকাঠামোও রয়েছে।

এজন্য জেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা চেয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, নবনিযুক্ত পৌর প্রশাসক, নবনিযুক্ত উপজেলা প্রশাসক এবং আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে লেকের কচুরিপানার পরিষ্কারের মধ্য দিয়ে আমরা পরিষ্কার-পরিছন্নতা অভিযান শুরু করলাম। আপনারা সহযোগিতা করেন, আপনাদের সহযোগিতা পেলে আমরা গাইবান্ধা শহরেকে আগামীতে রাজশাহীর মতো এই গাইবান্ধাকেও একটি পরিচ্ছন্ন নগরি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবো।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গাইবান্ধা শহরের এই ঘাঘট লেক এক সময়কার শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা যৌবনা ঘাঘট নদী। যা ১৯৯০ সালের দিকে নদীটির গতিপথ পরিবর্তনে লুপ-কাটিং করে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরের দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর পরেই এর নাম দেওয়া হয় ঘাঘট লেক। কিন্তু নাম ধারণের পরেও দীর্ঘদিন মূল ঘাঘটের প্রায় ৬ কিলোমিটার নদীর অংশ একবারেই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ভরে যায় ময়লা-আবর্জনায়, হয়ে ওঠে পোকামাকড়ের অভয়ারণ্যে।

গাইবান্ধাবাসী এই ঘাঘট লেকটি দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার প্রাণের দাবি ছিল দীর্ঘ দিনের। ছোট্ট এই শহরে উম্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র বলতে শহরের ভিতরে ক্ষুদ্র একটি মাত্র পৌরপার্ক ছাড়া আর কিছুই না থাকায় সময়ের সাথে সাথে এ দাবী জোরালো হতে থাকে। পরে স্থানীয় লোকজন, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ‘ঘাঘট লেক উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ওই বছরই ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের লেকের নির্মাণ কাজ করু হয় ব্রিজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এক বছরের মাথায় এই কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

পরে ২০২১ সালের ৩০মে শহরের বিশিষ্টজন আমিনুল ইসলাম গোলাপ, মুক্তিযোদ্ধা এস কে মজিদ মুকুল, মিহির ঘোষসহ সচেতন নাগরিক সমাজের আয়োজনে ‘ঘাঘট লেক বাঁচাও, ঘাঘট বিনোদন কেন্দ্র বাঁচাও, পরিবেশ বাঁচাও’ স্লোগান নিয়ে মানববন্ধনও পালন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ভাবে প্রকল্পের কাজ চালুর দাবি জানায় গাইবান্ধাবাসী।


অবশেষে দীর্ঘ ৫ বছর পর ২০২২ সালে ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই লেকের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে দখল-উচ্ছেদ না হওয়ায় বাকি চার কিলোমিটার অংশে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে লেকের দুই পাশে ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণকাজ, ১ হাজার ১০৬ মিটার পাকা রাস্তা, ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার ফুটপাত, তিন ভেন্টের একটি ও এক ভেন্টের একটি স্লুইসগেট গেট, ২০টি বসার বেঞ্চ, একটি ওয়াশ ব্লক, দুটি ডাম্পিং স্টেশন, চারটি সিঁড়ি ও দৃষ্টিনন্দন দুটি সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। যার কাজ গেলো বছরের জুনে শেষ হলে নবরূপে প্রকাশ পায় ঘাঘট লেক।

আরও পড়ুন

ঘাঘট লেক যেন গরিবের হাতিরঝিল

এ সম্পর্কিত আরও খবর