বিচার চেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাদী, প্রকাশ্যে ঘুরছে আসামিরা

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম | 2024-09-23 21:57:14

আগের একটি মামলা নিয়েই চাপে ছিলেন বাদী। আসামীদের প্রাণনাশের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন খোদ ভুক্তভোগী নিজেই। এর আগে ভুক্তভোগী হারিয়েছেন স্বামীকে। এরমধ্যে আবারও ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা শিকার হন। আইনী সুরক্ষা পাওয়ার আশায় মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। ভেবেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে নতুন বাংলাদেশে এবার বিচার পাবেন, আসামীরা পাবে শাস্তি। তবে সেটি এখনো হয়নি, আসামীরাই রয়েছে বহাল তবিয়তে।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, আসামীরা প্রভাবশালী। বিশেষ করে এক আসামি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সলিমুল্লা সলুর প্রধান সহযোগী শ্যামল হাসান রুবেল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় সুজন নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলায় র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় সলু। কিন্তু থামেনি রুবেলের বেপরোয়া জীবন যাপন। মূলতঃ রুবেলের কারণেই পলাতক জীবন যাপন করছেন বাদী নারী।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ভুক্তভোগী নারীর দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, চলতি গত ৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টর দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করার জন্য যান ভুক্তভোগী। এসময় স্বামী মো. রানা হত্যা মামলার আসামী সবুজ, শাহ আলমের সঙ্গে আসে নতুন দায়ের করা মামলার ১ নং আসামী শ্যামল হাসান রুবেল, সাজ্জাদ, মল্লিক পারভেজ, পূর্ব পরিচিত পলাশ, মো. হীরা, চাঁন মিয়া বেশ কয়েকজন। যাদের সঙ্গে পূর্ব হতেই স্বামী হত্যা মামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল।


কেরানীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের সামনের রাস্তায় একা পেয়ে কথা আছে বলে ওই নারীর গতিরোধ করে। এক পর্যায় সবুজ ও শাহ আলমদের বিরুদ্ধে করা পিটিশন মামলা নং-৬২৪ তুলে নিতে বলে। তাতে রাজি না হওয়ায় জোরপূর্বক অপহরণ সিএনজিতে উঠিয়ে ঝিলমিল প্রজেক্টের ভেতর পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে সবাই মিলে ধর্ষণ চেষ্টা করে। শ্যামলের হাসান রুবেল হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যার চেষ্টা করে। গলা টার্গেট করে কোপ দিলে সরে যাওয়ায় বাম হাত কেটে যায়। ৮ হতে ১০ ইঞ্চির মতো কেটে যায়, ধস্তাধস্তি ও ব্যাপক মারধরের শিকার নারীকে জামা-কাপড় টেনে ছিড়ে বিবস্ত্র করার চেষ্টা করা হয়। তবে ভুক্তভোগীর চিতকারে পথচারী ও স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে সটকে পড়ে আসামীরা। যাওয়ার সময় বলে আজকে তুই কোনমতে বেঁচে গেলি, কিন্তু মামলা তুলে না নিলে পরবর্তীতে লাশ গুম করে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় এক নারীর সহযোগীতায় মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ভুক্তভোগী নারী।

পরবর্তীতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় উপস্থিত হয়ে চারদিন পর ৮ সেপ্টেম্বর ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন ওই নারী। মামলা নং ১৯/৫৮৩।

মামলা সূত্র মতে, মামলার আসামীরা বলেন, শ্যামল হাসান রুবেল, মো. সাজ্জাদ, মল্লিক পারভেজ, পলাশ, মো. হীরা, চাঁন মিয়া, সবুজ, শাহ আলম। ভুক্তভোগী নারীর বাড়ি নারায়ণগঞ্জ কুতুবপুরে।

ভুক্তভোগী বাদী বলেন, ''আমার স্বামী ভাঙ্গারির ব্যবসা করতেন। একবার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে থানা যাত্রাবাড়ী থানা হেফাজতে নিয়ে আমার স্বামীকে নির্যাতন করা হয়। পরে হত্যার শিকার হন। ওই ঘটনায় একটা মামলা করছিলাম। স্বামী হারায়া আমিই হুমকিতে ছিলাম। ওই মামলাটাই তুলে নিতে বার বার চাপ হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমি বিদেশ যাবার চেষ্টা করতেছিলাম। বাঁচতে তো হবে। সেজন্য গত ৪ সেপ্টেম্বর গিয়েছিলাম কেরানীগঞ্জে পাসপোর্ট অফিসে। সেখান থেকে আমাকে জিম্মি করে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করা হয়। সেদিন কোনোরকমে জখম নিয়ে বাঁইচ্চা আসছি।''


ভুক্তভোগী বলেন, ''আমি ভিকটিম, আমাকেই হুমকিতে রাখা হয়েছে। আমার এক মেয়ে দুই ছেলে। স্বামী হারায়া বিপাকে আছি। এখন তো স্থির হতে পারছি না, চাকরিও করতে পারতেছি না। স্বামী হত্যা মামলা তুলে নেবার চাপ তো আছেই। ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় আমার দায়ের করা মামলার ১নং আসামীসহ অন্যদের প্রাণনাশের হুমকির কারণে পলায়া পলায়া বেড়াইতে হচ্ছে।''

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দুই সাবেক কাউন্সিলরের সঙ্গে তাল দিয়ে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে ওই নারীর মামলার ১নং আসামী শ্যামল। ডিএনসিসির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সলিমুল্লা সলু ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্টনের সখ্যতার সুযোগে এলাকায় দাপট দেখিয়ে চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত। রয়েছে কিশোর গ্যাং গ্রুপ। যাদেরই হুমকি মনে করতেন লেলিয়ে দিতেন কিশোরদের। মুক্তিযোদ্ধাদের বরাদ্দকৃত জমি দখল, ফুটপাতের দোকান, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও আবাসিক হোটেল থেকে মাসে প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকা চাঁদাবাজিতে সাবেক কাউন্সিলর রাষ্টনের হয়ে কাজ করতো এই শ্যামল।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, মামলাটি আজই (রোববার) ঢাকা জেলা দক্ষিণ ডিবি পুলিশের হাতে মামলাটির তদন্ত ভার ন্যস্ত করা হয়েছে। ডিবি পুলিশ এখন মামলার অগ্রগতি ও আসামী গ্রেফতার সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবে।

যোগাযোগ করা হলে ডিবি ঢাকা জেলা দক্ষিণ ডিবির ইন্সপেক্টর সাইদুল ইসলাম বলেন, মাত্র মামলাটি হাতে পেয়েছি। মামলা হলেই তো আর আসামী ধরা যায় না। তদন্ত করার সময় তো দিতে হবে। আমরা মামলার ডকেট পাওয়া মাত্র তদন্তকারি কর্মকর্তা নিযুক্ত করেছি। সত্যতার ভিত্তিতে তদন্তকারি কর্মকর্তা আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

জানতে চাইলে ঢাকা জেলার এসপি আহম্মদ মুঈদ বলেন, ভুক্তভোগীর মামলার তদন্তের অগ্র্রগতি আমার জেনে নিচ্ছি। মামলায় আসামী যারাই হোক না কেন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। বিষয়টি গুরুত্বের দেখছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর