অতিবৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙে পানির নিচে সাতক্ষীরা

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা | 2024-09-23 22:39:24

অতিবৃষ্টিতে সাতক্ষীরার বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে তালা উপজেলা ও পাটকেলঘাটা থানার অন্তত ৪০টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অন্যদিকে শহরে পানির নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় সাতক্ষীরা পৌরসভার কামালনগর, ইটাগাছা, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দীপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজার বাগান, মুনজিতপুর, গদাইবিল ও পুরাতন সাতক্ষীরার অধিকাংশ এলাকায় এখন ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সব এলাকায় এখন হাটু সমান পানি। দুর্ভোগের শেষ নেই এখানকার এসব মানুষের।

প্রায় প্রতিটি এলাকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা হওয়ার মূল কারণ সেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। নদীনালা থাকলেও সেটা এখন খালে রূপ নিয়েছে। প্রায় নদ-নদী প্রাণ হারিয়েছে। তার মাঝে আবার কিছু কিছু দখল হয়ে আছে। এদিকে অনেক নদীতে জোয়ার ভাটায় হয় না। যার ফলে এলাকাগুলোর অবস্থা এখন অনেকটাই দুর্বিষহ।

তবে প্রায় এলাকা পানির নিচে থাকলে ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ না জানার ভান করে বসে আছে। পুরো তিন মাস সাতক্ষীরা শহর পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও নেওয়া হয়নি এখনো পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ। বসে বসে মজা দেখছেন আর পানিবন্দি এলাকার মানুষের আর্তনাদ শুনছেন কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে তা গড়িমড়ি করে বাঁধা হয়েছে। নামেমাত্র বাঁধ দিলেও পানি ঠিকই প্রবেশ করে লোকালয় যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেতনা খননের ১০ মাসের প্রকল্প সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি। শুধু বেতনা নয় শালিখা নদীর অবস্থা ও একই। নদী কাটার নামে করা হয়েছে খাল। নদী কাটা বছরের পর বছর গেলে ও শেষ হয়নি। যার ফলে নদীতে জোয়ার ভাটা বন্ধ হয়ে নদী মরে যাওয়ার পথে। নদী কাটার প্রকল্পটি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কও ছিল। ফলে সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলো সব নদীর মাঝামাঝি আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে কিছু কিছু অংশ খনন করলেও সেসব বাঁধ যেমন উচ্ছেদ করা হয়নি, তেমনি জোয়ার-ভাটার জন্য কোনো নদী উন্মুক্তও করে দেওয়া হয়নি। ফলে মরা নদীগুলো মরাই থেকে গেছে। যার তলদেশ পার্শ্ববর্তী বিলের চেয়েও উঁচু। তাই পানি নিষ্কাশনের কোনো ক্ষমতা বেতনার নেই।

অপরদিকে সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে জন্য ১১০ কোটি ব্যয়ে বেতনা নদী পুনর্খননের কাজ শুরু করে ২০২১ সালের জুনে। ১০ মাস মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি সাড়ে তিন বছরেও। ফলে বেতনা নদী চলতি মৌসুমেও পানি নিষ্কাশনে ন্যূনতম ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং জোয়ার-ভাটাহীন মরা বেতনায় জমে থাকা পানিতে ডুবেছে ৪০টিরও বেশি গ্রাম।

পানি উন্নয়ন র্বোড জানায়, স্থানীয়দের উদ্যোগে বাঁধ মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। বেতনার পানির চাপ খুব যার কারণে বাঁধ রাখা সেখানে সম্ভব হচ্ছে না। তাই সেখানে বড় বড় গাছের বেস্টনি দিয়ে বাঁশ দিয়ে বেধে সেখানে বস্তা ফেলা হচ্ছে। আমরা আমাদের থেকে সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে খুব দ্রুত আমরা সেটা মেরামত করতে সক্ষম হবো।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমরা এদিকে ভেসে মরে যাচ্ছি। কিন্তু বেড়িবাঁধ বাধা শেষ হচ্ছে না। বাঁধ দেওয়ায় অনেক গাফিলতি কাজ করছে। কোনো ভাবে ভালো মতো কাজ হচ্ছে না। আমাদের কথা কেউ চিন্তা করছে না। চার দিনেও ২০ হাত বাঁধ বেঁধে শেষ করতে পারিনি। বাঁধ বাঁধলে ও পানির চাপে ভাঙন আরো বড় রূপ নিচ্ছে। ভালো মতো কাজ হলে এক দিনেই হয়ে যায়। কিন্তু কারচুপি থাকায় সেটা গড়িমসি করে হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর