‘পানি বাড়লে রাতে ঘুমাতে পারি না, এই বুঝি বাড়ি গেল’

, জাতীয়

লেলিন আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, নীলফামারী | 2024-09-30 16:19:33

তিস্তা নদীর পানি বাড়লে রাতে ঘুমাতে পারি না। ভয় কখন জানি ভিটাবাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়। কথাগুলো বলছিলেন- নীলফামারীর ডিমলার পূর্ব ছানতাই চর এলাকার বাসিন্দা হালিমা বেগম।

তিনি বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কয়েকদিন আগেও বাড়িতে পানি উঠেছিলো। তখন খেয়ে না খেয়ে থেকেছি। সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি।

তিস্তা নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট এখনো খোলা রয়েছে।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ডিমলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তিস্তার পানি নেমে যাওয়ায় বাড়ির উঠানে ও ঘরের ভেতরে কাঁদা সৃষ্টি হয়েছে। এতে চলাচলসহ রান্নার সমস্যা দেখা দিয়েছে। সুপেয় পানির সংকট ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন তিস্তার চর অঞ্চলের বাসিন্দারা। পানি নেমে যাওয়ার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখরিবাড়ি, টেপাখরিবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে নদী ভাঙনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

 পানি নেমে যাওয়ার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ছবি/বার্তা২৪.কম

হালিমা বেগম বলেন, প্রতিবছর তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখে দেয়। তিস্তার চরে বাড়ি হওয়ায় দুইবার নদীগর্ভে সবকিছু বিলিন হয়ে গেছে। নিজের সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। অন্যের সহায়তায় আবার একটি বাড়ি করেছি সেটার উঠান গতকাল রাতে নদীতে ভেঙে গেছে। কখন যে আমাদের বাড়িভিটা ভেঙে যায়, এ নিয়ে খুব ভয়ে আছি। বাড়িঘর ভেঙে গেলে আমাদের সব হারিয়ে পথে বসতে হবে।

আরেক বাসিন্দা মিজান রহমান বলেন,গতবার তিস্তায় আমাদের সবকিছু ভেঙে গেছে। এখন নতুন করে কিছু বলার নাই, কান্না আর আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউই নাই। আমাদের বাড়িতে পানি উঠায় দুইদিন বাড়িতে চুলা জ্বলেনি, শুকনা মুড়ি খেয়ে ছিলাম। কখন যে তিস্তায় আমাদের বাড়িঘর ভেঙে যায় খুব ভয়ে আছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, উজানের ঢল আর গত তিনদিনের বৃষ্টিতে ডিমলার চর অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামের ঘর-বাড়িতে পানি উঠেছিলো। আজ সকালে অনেক ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। তবে তিস্তার পানি বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আপাতত বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। পানি নেমে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, তিস্তার পানিতে যেসব এলাকা পানিবন্দি হয়েছিলো সেগুলোতে আমরা খোঁজ খবর রাখছি। পানিবন্দি এলাকার ৫ ইউনিয়নে ৩০ মেট্রিক টন চাল ও ১৫৮০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ চলমান আছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর