ফেনীতে চড়া নিত্যপণ্যের বাজার, ভোক্তার নাভিশ্বাস

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ফেনী | 2024-10-09 15:50:29

নিত্যপণ্যের ক্রমাগত উচ্চমূল্য ভোক্তার দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। আয় এবং ব্যয়ে অসামঞ্জস্য পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্রেতা। অভিযোগ রয়েছে, বাজার তদারকিতে সরকারি বিভাগগুলোর নিয়মিত অভিযান নেই। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে ভোক্তার ওপর চেপে বসেছে। এতে বাজারে গিয়েই নাভিশ্বাস ফেলছেন তারা।

৫ আগস্টের পর দেশের পরিবর্তীত পরিস্থিতি ও ফেনীর ভয়াবহ বন্যায় বাজার মনিটরিং কার্যক্রমে প্রভাব পড়ে। ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের দেয়া তথ্যানুযায়ী আগস্ট মাস থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত ১০ দিন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আগস্ট মাসে শুধুমাত্র ১ দিন অভিযান পরিচালনা করতে পারে ভোক্তা। জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য মতে, সেপ্টেম্বর মাসে ভোক্তা অধিকার আইনে ৯টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

আগস্টে অভিযানের সংখ্যা কম হলেও সেপ্টেম্বরে অভিযান বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে বর্তমানে অস্থিতিশীল কাঁচামালের বাজার। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিগত এক সপ্তাহে প্রতিটি সবজি দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি উত্তরবঙ্গে বন্যার কারণে সরবরাহ কমে গেছে তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে, শুরু হচ্ছে বিশেষ টাস্ক ফোর্সের অভিযান।

বুধবার (৯ অক্টোবর) ফেনী পৌর হকার্স মার্কেট ও বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শসা কেজিপ্রতি বর্তমানে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা আগে বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়। করলা বর্তমানে ১০০ টাকা বিক্রি হলেও আগে ছিল ৭০ টাকা। যথাক্রমে বেগুন ১২০ টাকা যা আগে ছিল ৪০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা যা আগে ছিল ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ বর্তমানে ৩২০ টাকা যা আগে ছিল ১৯০ টাকা, বরবটি বর্তমানে ১২০ টাকা যা আগে ছিল ৬০ টাকা, ঢেড়স বর্তমানে ১০০ টাকা যা আগে ছিল ৪০ টাকা, সসিন্দা কেজি প্রতি ৮০ টাকা যা আগে ছিল ৪০ টাকা, চাল কুমড়া কেজি ৬০ টাকা যা আগে ছিল ৪০ টাকা, পটল কেজি ৮০ টাকা যা আগে ৫০ টাকা, কাঁকরোল প্রতি কেজি ১২০ টাকা বিক্রি হলেও আগে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

পৌর হর্কাস মার্কেটের ওসমান গণি নামের এক তরকারি ব্যবসায়ী বলেন, ফেনীতে তেমন কোনো কাঁচামাল উৎপাদন করা হয় না। সব আসে উত্তরবঙ্গ থেকে সেখানে বর্তমানে বন্যা হওয়ায় মাল পাওয়া যাচ্ছে না। মাল পেতেও অনেক কষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও পরিবহন খরচও বেড়েছে দিগুণ তাই দামটা এখন বাড়তি।

জাহাঙ্গীর আলম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ফেনীতে এখন তরকারির সরবরাহ কম। আগে যেমন ১০ বস্তা আসতো সে জায়গায় ঠিক করে এখন ২ বস্তা আসে। উত্তরবঙ্গে বন্যা সংঘটিত হওয়ার কারণে তরকারির দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে অস্থিতিশীল বাজারে হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সবকিছুর দাম বাড়তি হওয়াতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

মুশফিক আহমেদ নামে এক ক্রেতা জানান, সকল সবজির দাম বেশি। বিগত ১ সপ্তাহ আগেও যেটা ৩০ টাকা ছিল এখন সেটি ৮০ টাকা। যে সবজিতে হাত দিবেন সেটিই ৮০ টাকার উপরে। ভরা মৌসুমে এমন দাম মানা যায়না। তারা বন্যার কথা বলে তবে বন্যার প্রভাব না পড়লেও তারা সুযোগ পেলেই দাম বাড়িয়ে দেয়।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ফেনীর সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. কাওছার মিয়া জানান, এখনকার পরিবর্তীত প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি যোগ হয়েছে বন্যা। একমাস আগে ফেনীসহ ১১টি জেলায় বন্যা হলো এরপর এখন আবার উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি। যেখানে সবজির আবাদ সবচাইতে বেশি। বন্যার কারণে উৎপাদন কমে গেছে তবে চাহিদা আগের মতোই আছে ফলে দাম কিছুটা বাড়তি। এক্ষেত্রে অভিযানের কোন প্রভাব পড়েনি বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আগস্টে কিছুটা কম হলেও সেপ্টেম্বরে অনেকগুলো অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ভোক্তা অধিকার না করলে জেলাপ্রশাসন করেছে। সেটি নিয়মিত ছিল তবে মাঠ পর্যায় থেকে দাম নির্ধারিত হওয়া জরুরি।

দাম মাঠ পর্যায় থেকে নির্ধারণ করা উচিত উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে একজন কৃষকের সবজির কেজি প্রতি কত খরচ হয় এবং সে অনুয়ায়ী একটা দাম নির্ধারণ করে দেয় সেক্ষেত্রে মধ্যস্ততাকারীরা বেশি সুযোগ নিতে পারবেনা। ভোক্তা অধিকার ও জেলাপ্রশাসন বাজার পর্যবেক্ষণ করে কিন্তু কৃষক পর্যায় থেকে দামটি নির্ধারিত থাকলে বাজার মনিটরিং এবং অভিযানের ভালো সুফল পাওয়া যাবে।

ফেনী জেলাপ্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বন্যা ও পরিবর্তীত পরিস্থিতির পরে বাজার মনিটরিং এর জন্য জেলাপ্রশাসনের পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাজার কর্মকর্তারা নিয়মিত কাজ করছে। তবে মন্ত্রণালয় থেকে বাজার মনিটরিং করার জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করে দেয়া হয়েছে। তারা আজ থেকে মাঠে কাজ শুরু করেছে। তাদের কিছু কর্মপরিধি ঠিক করে দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী বাজার পরিস্থিতি তদারকি করবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর