জরিমানায় সীমাবদ্ধ, থামছে না অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোর প্রতারণা

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 16:56:13

রাজধানীর অভিজাত পাড়া গুলশান-১। সামুদ্রিক মাছসহ মনোরম পরিবেশে অন্যান্য মাছের খাবার পরিবেশনকারী রেস্টুরেন্ট ফিস এন্ড কোং। ২০১৮ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ মাছ ও খাবার অনুপযোগী, পচা গন্ধ-বাসি কাঁচামাল সংরক্ষণ করার অপরাধে বিএসটিআই ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর প্রতিষ্ঠানটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে।

বছর ঘুরতে না ঘুরতেই, ওরিয়ন গ্রুপের এই রেস্টুরেন্টকে আবারও ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন র‍্যাব সদর-দফতরের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। আদালত বলছেন, '২ বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ৬৯৬ কেজি চিংড়ি বিক্রির উদ্দেশে হিমাগারে সংরক্ষণের অভিযোগে তাদের জরিমানা করা হয়েছে।'

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, 'শুধু জরিমানাতেই সীমাবদ্ধ থাকার কারণে, এ ধরনের রেস্টুরেন্টগুলো একই অপরাধ বারবার করার সুযোগ পাচ্ছে।'

জরিমানাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম এ বিষয়ে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'বেশ কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই রেস্টুরেন্টটিতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৬৯৬ কেজি চিংড়ি জব্দ করা হয়। যেগুলো তেজগাঁও প্যারামাউন্ট হিমাগারে সংরক্ষণ করেছিল তারা। মূলত ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে মেয়াদোত্তীর্ণ চিংড়ির প্যাকেটে ২০২০ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত বাড়িয়ে, বিক্রি করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।'

জব্দকৃত চিংড়ি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এগুলো ধ্বংস করার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের স্যানিটারি ল্যান্ড-ফিলে পাঠানো হয়েছে।'

এদিকে শুধু ফিস এন্ড কোং নয়। রাজধানীর বেশ কয়েকটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে মেয়াদোত্তীর্ণ মাছ-মাংস পরিবেশনের এই প্রতারণা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। চলতি মাসেই মাতুয়াইলে এসবি হিমাগার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ২৪৫ মণ সামুদ্রিক মাছ, ইলিশ ও ৩২০ মণ মহিষের মাংস জব্দ করা হয়েছে। এই অনিয়মের অভিযোগে একই আদালত প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেন।

যেসব প্রতিষ্ঠান একই অপরাধ বারবার করছে, জরিমানা ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না কেন? জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আমাদের আইনে আছে, প্রতারণাকারী কোন প্রতিষ্ঠানকে প্রথমবার যে পরিমাণ জরিমানা করা হবে। পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠান যদি ওই ধরনের অপরাধ আবার করে। সেই প্রতিষ্ঠান বা রেস্টুরেন্টকে আমরা তার দ্বিগুণ জরিমানা করতে পারি।'

যদি তৃতীয় বা চতুর্থ বার ওই রেস্টুরেন্ট বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের সাময়িক বন্ধ বা স্থায়ী সিলগালা করে থাকি। চলতি বছরেই আমরা বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট কে এভাবে স্থায়ী সিলগালা করে দিয়েছি।

প্রতারণাকারী ভেজাল সামুদ্রিক মাছ বিক্রির রেস্টুরেন্ট, ফিস এন্ড কোং সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আইন অনুযায়ী বলা যায়, ফিস এন্ড কোন রেস্টুরেন্ট এ অপরাধ বারবার করে আসছে। তাই তৃতীয়বার যে আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে, আমি নিশ্চিত তাদের সাময়িক বা স্থায়ীভাবে সিলগালা করে দেবে।'

অন্যদিকে অভিজাত এই রেস্টুরেন্ট শুধু প্রতারণারই করে আসছে না। এসব খাবার খেয়ে জীবন ঝুঁকির মত রোগের মুখোমুখি হচ্ছেন খাদ্য বিলাসী মানুষেরা।

সামুদ্রিক মাছের যদি দুই বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়। সেটা খাওয়ায় কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে জানতে চাইলে, পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'এটা শুধু মানুষ ঠকানো না, মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে খেলা। এ ধরনের সামুদ্রিক মেয়াদোত্তীর্ণ মাছ মানুষ খাওয়াতে মানুষের শরীরে নানা রকম রোগের বাসা বাঁধবে। এমন কি ক্যান্সারের মত ভয়াবহ রোগের কারণ এই ভেজাল মাছ।'

অন্যদিকে শুধু জরিমানাতেই সীমাবদ্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান বা রেস্টুরেন্টগুলো এখনো টিকে আছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন।

নূর খান লিটন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'যে প্রতিষ্ঠান মানুষ ঠকায়, জরিমানা হওয়ার পরও আবারও সেই পথ অবলম্বন করে। তাদেরকে শুধু জরিমানা করা উচিৎ না। স্থায়ীভাবে এসব প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করে দিতে পারলে ভেজাল খাদ্যে ব্যবসা থেকে বিরত থাকবে অন্য ব্যবসায়ীরা।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর