সরকারের ততৃীয় মেয়াদের প্রথম বছরে ঘোষিত বাজেটে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা বেশি থাকলেও সরকারের জনপ্রিয়তা হারায় এমন কিছু থাকবে না বলে জানিয়েছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
তিনি বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষের যাতে ক্ষতি না হয়, এজন্য ভ্যাটের পরিমাণ কম রাখা হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের যেমন প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, তেমনি ক্রেতাদেরও। বাজেটে রাজস্ব টার্গেট বেশি হলেও আমরা এমন কিছু করব না, যাতে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন।’
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের দ্য ওয়াল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু হলে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। দ্য চিটাগং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডিাস্ট্রিজ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ছোটখাট একটি বিষয়কে অনেক সময় বড় করে দেখা হয়। পরিবহন সেক্টরের মালিকরা কর কম দেয়। তারা বড় গ্রুপ, আন্দোলনে যেতে পারে বা ভাড়া বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব কারণ চিন্তা করে তাদের কাছ থেকে কর তেমন নেই না। কিন্তু এখানে সুযোগ আছে। তাদের মধ্যে অনেকে বলেন, যে টাকা লাভ হয় তা কালো টাকা হয়ে যায়। আমাদের নীতি নির্ধারকরা বলেন, এখন রাজি হয়েছে ঠিকই। বাজেট ঘোষণার এক মাসের মধ্যে ভাড়া বাড়াই দিবে। তখন সাধারণ মানুষ বলবে, আর সরকারের ওপর বিরাগ হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাজেটের ৬৫ শতাংশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে দেশের অভ্যন্তরীণ খাত। অভ্যন্তরীণ সম্পদ যাতে বাজেটে আরও ভূমিকা রাখতে পারে, এজন্য ব্যাংকগুলো সচল রাখা হয়েছে। বিগত সময়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি আমাদের ঘাটতি বাজেটে যেতে হয় তাহলে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পায়। বৈদিশিক সহায়তার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।’
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘সরকারের দুই মেয়াদে বাজেটেরে আকার বড় ছিল। চলতি বছরে ৪ লাখ ৫৪ হাজার বাজেট প্রণয়ন হয়েছিল। আমরা ৫ শতাংশের বেশি ঘাটতি বাজেট প্রণয়ন করতে চাই না। আশা করছি এবার ৫ লাখ বা এর কাছাকাছি বাজেট প্রণয়ন করা হবে। সে অনুযায়ী রাজস্ব নির্ধারণ করা হবে।’
দেশীয় শিল্পের প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের দেশের লোকজন শিল্প কারখানা, ব্যবসা করছেন। বাংলাদেশের শ্রম বাজার সস্তা, ফলে শিল্পোন্নয়নও এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে ক্রয় করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা ইলেকট্রনিক, গৃহস্থালীর মতো পণ্য কিনছি। আমরা চাই না এসব পণ্য বেইরে থেকে ক্রয় করতে। চাই উৎপাদন করতে। এসব ক্ষেত্রে যোগ্যতার প্রমাণ ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান দিয়েছে। বর্তমানে ৮৫ শতাংশ রফতানির উপর নির্ভরশীল।’
কর আরোপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কর বৃদ্ধি করা হলে রাজনীতিবিদ এবং সরকারের অনেকেই আপত্তি জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যেনো মানুষের ওপর চাপ না দেয়।’
কর আহরণে ডিজিটালাইজেশনের কথা জানিয়ে মোশাররফ বলেন, ‘ব্যবসায়কে অন্যান্য দেশের মতো আধুনিয়কায়নের লক্ষ্যে প্রত্যেকটা দোকানে বা ব্যবসা কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক বিস্তার ডিভাইস (ইফডি) মেশিন দেবে, যার সঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের সংযোগ থাকবে। বিমানবন্দর এবং স্পিডবোটগুলাতে আবশ্যিকভাবে স্কেনার মেশিন ও অ্যাপস থাকবে। কোনটাতে কি রাজস্ব আদায় হবে তা যেনো স্পষ্ট করা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সহায়তা চাই।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চিটাগং চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্টিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম।