হারিয়ে যাচ্ছে ‘দণ্ডকলস’

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-31 04:45:51

ছোট ছোট সবুজ পাতা। গাছের ফাঁকে ফাঁকে সাদা ফুল। মধু ভরা ফুলে ভ্রমরের আনাগোনা। বাতাসের দোলে দোল খায় পথে-ঘাটে। তবে গাছটির জন্ম পতিত জমিতে।

প্রাকৃতিকভাবে জন্ম হয় গুল্ম জাতীয় ছোট এই উদ্ভিদটির। এর সাদা ফুল মুখে নিলে মিষ্টি স্বাদ অনুভূত হয়। তবে পাতা চিবালে মুখে তেতো স্বাদ লাগবে। এই গুল্ম উদ্ভিদটির নাম ‘দণ্ডকলস’।

এই গাছের উচ্চতা ১ থেকে দেড় মিটার হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কয়েকটি গাছ একত্রে জন্মে ঝোপালো ভাবে। সারা বছরই এ গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ফুল ফোটার আদর্শ সময় মার্চ ও মে মাস।

আঞ্চলিক ভাষায় বিভিন্ন নামে ডাকা হয় ছোট গুল্ম জাতীয় এই গাছটিকে। কোনো এলাকায় 'মধু গাছ', 'কানশিসা' আবার কোথাও 'কানশিকা' নামে পরিচিত। তবে এই গাছের আসল নাম 'দণ্ডকলস'।

সম্প্রতি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ ও রংপুর-গঙ্গাচড়া সড়ক সহ জেলার বিভিন্নস্থান ঘুরে দেখা গেছে দণ্ডকলসের বিচরণ।

কারমাইকেল কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র চন্দন সাহা বাপ্পী জানান, দিন দিন কমে যাচ্ছে এই উদ্ভিদটি। আগে ব্যাপক হারে সড়কের ধারে, মেঠো পথে, পতিত জমিতে আর বিভিন্ন ফসলের বাগানে এই গাছ দেখা যেত। কিন্তু এখন দণ্ডকলস আর তেমন দেখা যায় না।

শহুরে জনপদে দণ্ডকলস খুব বেশি পরিচিত না হলেও গ্রামের মানুষের কাছে এটি উপকারী উদ্ভিদ হিসেবে বেশ সমাদৃত। এই উদ্ভিদে রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। এর পাতার রস তেতো হলেও ফুলের মধু মিষ্টি স্বাদের।

সর্দি ও কাশি হলে এই গাছের পাতা সিদ্ধ করে কালোজিরা দিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া দণ্ডকলসের পাতা ও শিকড় রস করে আদাসহ গরম পানি দিয়ে খেলে কাশি কমে যায়।

শিশুদের যদি দীর্ঘ সময় সর্দি থাকে তাহলে এই গাছের ফুল তুলে তা রস করে মায়ের বুকের দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এতে দ্রুত সর্দি ভালো হয়ে যায়।

বাচ্চাদের কৃমি হলে দণ্ডকলসের পাতা রস করে ১ চামচ করে ৪-৫ দিন খাওয়ালে তা ভালো হয়ে যায়। চুলকানি রোগেও কাজ করে দণ্ডকলস। এর পাতার রস কাঁচা হলুদ ও নারকেলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে শরীরে মেখে রোদে শুকিয়ে গোসল করলে উপকার পাওয়া যায়।

শিশুদের পাতলা পায়খানা হলে এই পাতার রস করে খাঁটি মধু মিশিয়ে দুই তিন দিন খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।

রংপুর মহানগরীর দেশ হারবালের হাকীম শফিকুর রহমান চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে জানান, গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ দণ্ডকলস একসময় গ্রামীণ চিকিৎসায় ব্যাপক হারে ব্যবহার হতো। এখনো হারবাল ওষুধ তৈরিতে এগুলো ব্যবহার করা হয়। তবে নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই গাছগুলো সম্পর্কে জানে না।

ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ এই গাছগুলোর বংশবৃদ্ধি ও রক্ষা করা দরকার বলে মনে করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'দণ্ডকলসের গুণ না জানার কারণে আমাদের কাছে এর কদর নেই। কিন্তু গ্রামীণ জনপদে এখনো এই গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদটির ব্যবহার দেখা যায়।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর