খুলনায় ধান সংগ্রহে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা

খুলনা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা | 2023-08-28 16:21:58

কৃষি বান্ধব সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী কৃষকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের লক্ষ্য নিয়ে খুলনায় আনুষ্ঠানিকভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। তবে খুলনায় সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত কৃষকরা।

মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুরে শুরু হওয়া এ ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। খুলনা মহানগরীসহ জেলার ৯টি উপজেলায় এক হাজার ৯১৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। একই সাথে মিলারদের কাছে থেকে সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন চালও সংগ্রহ করা হবে।

খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ‘কৃষকদের ক্ষতি লাঘবে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে তাদের ব্যাংক একাউন্টে অর্থ পরিশোধ করা হবে।’

ধান সংগ্রহ চলছে, ছবি: বার্তা২৪

 

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের তথ্য মতে, খুলনা মহানগরীসহ ৮টি উপজেলায় এক হাজার ৯১৩ মেট্রিক টন ধান, ১৬ হাজার ৩৪৩ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ১ হাজার ৪২৭ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে এ কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়বে।

সবচেয়ে বেশি ধান সংগ্রহ করা হবে জেলার কৃষি রাজধানীখ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলায়। ডুমুরিয়ায় ধান সংগ্রহ করা হবে ৬৯ মেট্রিক টন। এছাড়া ২ হাজার ১৮৮ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও ৩০৪ মেট্রিক টন আতপ চালও সংগ্রহ করা হবে উপজেলাটি থেকে।

দাকোপ উপজেলা থেকে ৬০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৪ মেট্রিক টন ধান, পাইকগাছায় ১৪৪ মেট্রিক টন ধান, ৪২ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও ১৩২ মেট্রিক টন আতপ, তেরখাদায় ২৬০ মেট্রিক টন ধান ও ৫৮১ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, বটিয়াঘাটায় ১৪৫ মেট্রিক টন ধান, ১ হাজার ২৪২ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও ১৮৪ মেট্রিক টন আতপ, ফুলতলায় ১৩ মেট্রিক টন ধান, ৪ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও ৭৩ মেট্রিক টন আতপ, কয়রায় ১৪৭ মেট্রিক টন ধান, ৩২৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও ১১৪ মেট্রিক টন আতপ, রূপসায় ২০১ মেট্রিক টন ধান, ২ হাজার ৫০১ মেট্রিক সিদ্ধ ও ৫৩৪ মেট্রিক টন আতপ এবং দিঘলিয়া উপজেলায় ১৬০ মেট্রিক টন ধান ও ৩৬৪ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হবে। মহানগরীতে সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৪ হাজার ১৫ মেট্রিক টন, আতপ ৮৬ মেট্রিক টন। এখানে ধান সংগ্রহ করা হবে ২৯ মেট্রিক টন।

তবে অভিযোগ করে কৃষকরা বলেন, ‘বেশি দামে ধান বিক্রির কথা শুনে ধান দিতে চাইলে শুরু হয় নানা ধরনের ছলচাতুরী। প্রতি এলাকায় স্থানীয় দালাল চক্র সিন্ডিকেট করে কৃষকদের কাছ থেকে ভর্তুকি কার্ড ও তালিকা হাতিয়ে নিয়ে নিজেরাই সরকারের গুদামে ধান দিচ্ছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার সাধারণ কৃষকরা।’

কৃষকের থেকে ধান কেনা হচ্ছে, ছবি: বার্তা২৪

ডুমুরিয়ার ধানচাষি আলম ঢালী বলেন, ‘কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্তে কৃষক লাভবান হবে। কিন্তু এক শ্রেণির কর্মকর্তারা অনেক সময় ভুয়া তালিকার মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে, এ বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে।’

রূপসা উপজেলার ধানচাষি কৃষ্ঞপদ বাছাড় বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এলাকার দালালরা আগে থেকে হাত করছে। ভর্তুকি কার্ড ও তালিকা বানিয়ে গুদামে ধান দেবে। আমরা কিছু পাবো না।’

অভিযোগের বিষয়ে খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রতি কেজি ২৬ টাকা করে দাম নির্ধারণ করে খুলনায় সর্বমোট ১৯শ ১৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকৃত কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এ কারণে এবার সরাসরি তাদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য প্রতিটি উপজেলায় কৃষি বিভাগ প্রকৃত কৃষকের তালিকা করেছে। কৃষকরা সরাসরি গোডাউনে গিয়ে ধান বিক্রি করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তাদের পরিচয় পত্র, ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষকদের ধান বিক্রিতে সিন্ডিকেট বা মধ্যস্বত্বভোগীদের কোনো সুযোগ থাকবে না। এজন্য আমরা সরাসরি তাদের ব্যাংক একাউন্টে ধানের মূল্য পরিশোধ করব। পাশাপাশি তালিকাভূক্ত মিলারদের কাছ থেকেও চাল সংগ্রহ চলবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর