সিলেট যেন মৌসুমি ভিক্ষুকদের হাট!

সিলেট, জাতীয়

নূর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-26 04:26:40

ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট নগরী এখন যেন মৌসুমি ভিক্ষুকদের হাট। নগরীর সব পয়েন্টে ২-৪ জন করে ভিক্ষুকের দেখা মেলে। ফলে ভিক্ষুকদের নিয়ে চরম বিব্রতকর অবস্থায় ক্রেতারা। তবে ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করছে না প্রশাসন।

নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, কুদরত উল্লাহ মার্কেট, আম্বরখানা, সুবদিবাজার, পাঁচ ভাই, পানসি রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ভিক্ষুকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। শুকরিয়া মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ভিক্ষুকের উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে ভিক্ষা না দিলে কাপড় ধরে টানাটানি করে। ফলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।’

ব্যবসায়ী রোটারিয়ান আব্দুল মুহিত দিদার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সিলেট শহরে এখন অনেক মৌসুমি ভিক্ষুকের দেখা মেলে। বিভিন্ন পয়েন্টে ঝাঁকে ঝাঁকে ভিক্ষুকরা বসে থাকে। বিশেষ করে নামাজের সময় হলে তারা মসজিদের সামনে ভিড় করে। মুসল্লিরা বেরিয়ে গেলে আবার বিভিন্ন মার্কেটের সামনে চলে যায়। আর রাত হলেই হযরত শাহজালালের (রহ.) মাজারসহ বিভিন্ন কলোনিতে চলে যায়। সকাল হলে আবার ভিক্ষায় নেমে পড়ে।’

মধুবন সুপার মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভিক্ষুক সালেহা বেগম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমার বাড়ি কুমিল্লায়। থাকি মেজরটিলার একটি কলোনিতে। সামনে ঈদ, টাকা পয়সা দরকার। এ জন্য ভিক্ষা করছি। তবে আমি নিয়মিত ভিক্ষা করি না। মাঝে মাঝে ভিক্ষায় বের হই।’

পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মদরিছ আলী। তার বেশভূষা দেখলে মনে হবে তিনি একজন দরবেশ। এসেছেন উত্তরবঙ্গ থেকে। তবে জেলার নাম বলতে রাজি হননি। কয়জন একসঙ্গে এসেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিব্রত হয়ে বলেন, ‘বাবা, সবার কাছে চাই না, দু-একজনের কাছে ১০/২০ টাকা চাই।’

হুইল চেয়ারে বসে টাকার হিসাব করছিলেন কলমদর আলী। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সঙ্গে ছিলেন আরও চার জন নারী। মোবাইল বের করে ছবি তুলতেই অনেকটা বেকায়দায় পড়েন তারা। পরে কলমদর আলী নামে এক ভিক্ষুক বলেন, ‘মহিলারা হিসেব জানে না। তাই আমি টাকা গুনে দিচ্ছিলাম।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বন্দরবাজারের পরিত্যক্ত ফুট ওভারব্রিজ মৌসুমি ভিক্ষুকদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ব্রিজটি কেউ ব্যবহার না করায় কয়েক ঘণ্টা পর পর ভিক্ষুকরা একত্রিত হয়ে ভাগ বাটোয়ারা করে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার ভিক্ষায় নেমে পড়েন।

দরগাহমহল্লা রাজারগলির বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা সায়েরা বেগম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আজকাল ভিক্ষুকরা বাড়িতে হানা দেয়। কাউকে না পেলে সুযোগ বুঝে কাপড় নিয়ে পালায়। তবে ঈদের আগে ভিক্ষুকদের উৎপাত বেড়ে যায়।’

ভিক্ষুকদের নিয়ে কাজ করে পরিবর্তন নামের একটি সংগঠন। সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি শাহানা চৌধুরী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘উৎসব এলে নগরীতে ভিক্ষুক বেড়ে যায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের নির্দেশনায় সিলেটে স্থায়ী এবং ভাসমান ভিক্ষুকের জরিপ করা হচ্ছে। শিগগিরই ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের প্রস্তাবনা দেওয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর