ইভিএম সংরক্ষণে বিপাকে মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তারা

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 04:05:21

নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যতটুকু সম্ভব ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। ইতোমধ্যে চাহিদা অনুযায়ী দেড় লাখ ইভিএম বুঝে পেয়েছে কমিশন। এর মধ্যে নতুন করে মাঠ পর্যায়ে ৩২ হাজার ৬৫৮টি ইভিএম পাঠানো হয়েছে। আর এসব মেশিন সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, ইসির দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনের সময়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বেশকিছু মেশিন পাঠানো হয়। এর বাইরেও যে সকল উপজেলায় ইভিএম পাঠানো হয়নি, সেখানে এক হাজার করে মেশিন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। সেই অনুযায়ী এসব ইভিএম মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেসব ইভিএমে রক্ষণাবেক্ষনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন। এমনকি এসব মেশিন সংরক্ষণের জন্য এখনও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘নির্বাচন অফিসে ইভিএমগুলো সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এসব মেশিন নিয়মিত চার্জ দিতে হয়। এছাড়াও রুমে এসি থাকাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা দরকার, যা আমাদের নেই। সংরক্ষণের জন্য স্টোর রুমও নেই। ফলে এসব মেশিন সংরক্ষণে হিমশিম খেতে হচ্ছে, এখনো পর্যন্ত কোন আর্থিক বরাদ্দ পাইনি।’

এদিকে ইসি থেকে ইভিএম মেশিন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেশকিছু দিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- মেশিনগুলো ঠাণ্ডা ও শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা, সংরক্ষণের পূর্বে ব্যাটারি পরিপূর্ণ চার্জ দিয়ে কন্ট্রোল ইউনিট ও ব্যাটারি আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা, ব্যবহার শেষে কন্ট্রোল ইউনিট হতে ব্যাটারি খুলে রাখা, প্রতিমাসে অন্তত: একবার ব্যাটারি পরিপূর্ণ চার্জ করে রাখা, ইভিএম সংরক্ষিত কক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

নির্দেশনায় বলা হয়, জেলায় পাঠানো ইভিএমগুলো আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের গোডাউন বা অন্য কোন সুবিধাজনক স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। স্থান সংকুলান না হলে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা তার অধিক্ষেত্রাধীন অন্য কোনো জেলা নির্বাচন অফিস বা সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভাগাভাগি করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবেন।

এ বিষয়ে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) লেফন্যান্ট কর্নেল মো: কামাল উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘যেসব জেলায় ইভিএম পাঠানো হয়নি, সেখানে এক হাজার করে ইভিএম মেশিন পাঠিয়েছি। জেলা নির্বাচন অফিসে জায়গা সংকুলান না হলে পাশের উপজেলা নির্বাচন অফিসে নিরাপদ স্থানে মেশিনগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনে কনফারেন্স রুমেও ইভিএম সংরক্ষণ করা যাবে।’

মেশিন সংরক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে কত বরাদ্দ দেওয়া হবে এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি।’

জানা গেছে, জেলা পর্যায়ে পাঠানো ৩২ হাজার ৬৫৮ ইভিএমের মধ্যে ঢাকায় এক হাজার ৪৭২টি, মানিকগঞ্জে এক হাজার ৬১০টি, মুন্সিগঞ্জে এক হাজার ৭৯৫টি, নারায়নগঞ্জে ৮৩৭টি, গাজীপুরে ৭৯৪টি, চট্টগ্রামে দুই হাজার ১২৮টি, কক্সবাজারে এক হাজার ৬০৮টি, ফেনীতে দুই হাজার ৬১টি, কুমিল্লায় এক হাজার ৯৫৭টি, নোয়াখালীতে দুই হাজার ২৬৬টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক হাজার ১২২টি, রংপুরে তিন হাজার ২২৯টি, ময়মনসিংহে দুই হাজার ৫২টি, গোপালগঞ্জে এক হাজার ৭৫৩টি, পটুয়াখালীতে এক হাজার ৪৮৫টি, খুলনায় এক হাজার ৭৬৩টি, সাতক্ষীরায় দুই হাজার ২২টি, বাগেরহাটে এক হাজার ৩৬১টি ও মেহেরপুরে এক হাজার ৩৪৩টি মেশিন পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেশে প্রথমবারের মতো ২০১০ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তৈরি করা ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রথা চালু করে এটিএম শামসুল হুদার কমিশন। গড়ে ২০ হাজার টাকার সেই ইভিএম ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সময় বিকল হয়ে যায়। সেই ইভিএম আর ঠিক করা সম্ভব না হওয়ায় পরে নির্বাচন কমিশন আবার ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ করে। পরে ওই ইভিএম আর ব্যবহার করা যায়নি।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন সেই মেশিন নষ্ট করে নতুন করে উন্নতমানের মেশিন তৈরির উদ্যোগ নেয়। ২০১৭ সালে বর্তমান ইসির উদ্যোগে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে আগের চেয়ে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করা হয়। যার প্রতিটির দাম দুই লাখ ১০ হাজার টাকা। সিটি নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে চালুর পর সংসদে ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করে সংস্থাটি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর