গত ঈদে মা রান্না করেছিল, এবার মা ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-24 14:19:36

প্রতিবার মায়ের হাতের রান্না করা খাবার খেয়ে ঈদের দিনটা শুরু হয়। রোজার ঈদে মজার মজার রান্না হয়েছিলো বাড়িতে। এবার মাকে নিয়ে হাসপাতালে আছি, সাতদিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন মা।

কথাগুলো কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বাসিন্দা মো. লিটনের। লিটন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০১ নাম্বার ওয়ার্ডে মা রেজিয়া খাতুনকে নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে আছেন। ঈদের দিনটা মায়ের সেবা করা,  স্যালাইন ওষুধ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে তার।

নিজের মন খারাপ হলেও মাকে বুঝতে দিচ্ছেন না লিটন। অসুস্থ মাকে সন্ত্বানা দিচ্ছেন ‘মা মন খারাপ কইরো না। সামনের বার ঈদে আমরা সবাই বাড়িতে থাকব। এখন তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হও’-এসব বলে।

ভৈরবের বাসিন্দা মো. লিটন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আমরা তিন ভাই দুই বোন। প্রতি ঈদে আমরা পাঁচ ভাই বোন এক সঙ্গে হই। মা আমাদের জন্য ঈদের দিন ভালোমন্দ রান্না করেন। মায়ের হাতের খাবার খেয়েই আমাদের ঈদের দিনটা শুরু হয়। কিন্তু এবার মা সাত দিন ধরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ঈদের দিন আমাদের জন্য রান্না করতে পারায় বার বার কান্না করছেন।’

লিটনদের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অনেক রোগী ও তাদের স্বজনদের এবারের কোরবানির ঈদ হাসপাতালেই কাটছে।

ঢামেকের ছয়টি ওয়ার্ডে সরেজমিনে দেখা যায়, রোগী ও স্বজনরা নিজ নিজ বাড়িতে ফোন করে আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ঈদের দিনে বাড়িতে থাকতে না পাড়ায় অনেকের মন খারাপ, আবার অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। শত অসুস্থতার মাঝেও রোগীরা বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ঈদ আনন্দের সঙ্গে শরিক হতে চেষ্টা করছেন।  

রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা মাহমুদা আক্তার গত ৬ দিনে ধরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি। তিন মেয়ের জননী মাহমুদা বার বার স্বামী ওয়াদুজ্জামানকে বলছেন, তুমি কি আমার মেয়েদের খবর নিছ। ঈদের দিন আমার সোনারা কি সেমাই খাইছে। তুমি চলে যাও মেয়েদের কাছে, আমার কিচ্ছু হবে না।

ডেঙ্গু আক্রান্ত মায়ের সন্তানের প্রতি এমন মমতা দেখে আশপাশের মানুষের চোখ ভারি হয়ে আসছিল। তখন ওয়াদুজ্জামান স্ত্রী মাহমুদাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, তুমি কোনো চিন্তা কর না আমি সব ব্যবস্থা করছি। তোমার মেয়েরা ভালো আছে, সেমাই খেয়েছে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত স্ত্রীর বিষয়ে ওয়াদুজ্জামান বলেন, গত ছয় দিন ধরে সে হাসপাতালে। বাড়িতে তিনটি মেয়ে। মেয়েরা কান্নাকাটি করে বারবার ফোন করছে মাকে নিয়ে যেতে।

ঢামেক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢামেক ৭১০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া কিছু রোগী হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে হস্তান্তর করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক বিদ্যুৎ কান্তি পাল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ঈদের সময় আমাদের চিকিৎসক ও নার্সদের কোনো ছুটি নাই। আমরা ২৪ ঘণ্টা ধরে ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগীদের সেবা দিচ্ছি। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় কোনো ধরণের গাফিলতি করা হচ্ছে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর