অপারেশনে সুতা রেখে সেলাই, জাকিয়ার অসহনীয় যন্ত্রণার ৪ বছর

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-09-01 04:08:04

২০১৫ সালের আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন কলেজছাত্রী জাকিয়া সুলতানা। এক্স-রে করে জানা যায়, তার পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। যা ঠিক করতে অপারেশনের প্রয়োজন। পরে রাজশাহীর জমজম ইসলামী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. গোলাম কিবরিয়া ডনকে দিয়ে পায়ের অপারেশন করান তিনি।

ভাঙা হাড় কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ভেতরে যন্ত্রণা কমে না জাকিয়ার। বিষয়টি চিকিৎসককে জানালে, তিনি বলেন, হাড়ে চিড় ধরায় মাংসের সঙ্গে লেগে যন্ত্রণা হতে পারে। দ্রুতই তা সেরে যাবে। তবে গত চার বছরেও কমেনি জাকিয়ার পায়ের যন্ত্রণা। বরং ক্রমেই তা বাড়তে শুরু করে। মাঝে-মধ্যে চিৎকার দিয়ে উঠতেন তিনি।

যন্ত্রণা অসহনীয় পর্যায়ে গেলে ঢাকার গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি হন জাকিয়া। সোমবার (০২ সেপ্টেম্বর) রাতে তার পায়ে দ্বিতীয় দফায় অপারেশন করেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আর. আর কৈয়ারী। অপারেশনে জাকিয়ার পায়ের ভেতরে মেলে সেলাইয়ের দুই টুকরো সুতা। যা মাংসের সঙ্গে লেগে যন্ত্রণা সৃষ্টি করছিল।

সোমবার রাতেই ছবিসহ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ভুক্তভোগী জাকিয়ার বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম তাহের।

মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টেম্বর) সকালে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘প্রথম অপারেশনের পর থেকেই তীব্র যন্ত্রণা পোহাচ্ছিল আমার মেয়ে। আমরা অনেক চিকিৎসককে দেখিয়েছি, কেউ বুঝেই উঠতে পারছিলেন না, কী সমস্যা। অবশেষে এখানে এসে দ্বিতীয় দফা অপারেশনে সুতা বের হয়েছে।’

ভুক্তভোগী জাকিয়া সুলতানা মঙ্গলবার সকালে মোবাইল ফোনে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘ভয়ংকর যন্ত্রণা সহ্য করে কেটেছে এই চার বছর। মাঝে-মধ্যে এতো যন্ত্রণা হতো যে ছোটাছুটি করে বেড়াতাম। মনে হতো ভেতরে কোনো বড় আকারের বিষধর পিঁপড়া কামড়ে ধরে রেখেছে। অপারেশনের পর আর সেই যন্ত্রণা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ সমস্যার কারণে আমি পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারতাম না। পড়তে বসলে হঠাৎ যন্ত্রণা তীব্র হলে আর পড়া হতো না। খেতে বসেও যন্ত্রণায় উঠে পড়তাম। হাঁটাহাঁটি শুরু করতাম বাড়ির ভেতরে। ভয়ংকর সময় পার করেছি।’

জাকিয়ার বাবা সাইদুল ইসলাম তাহের রাজশাহী নগরীর তেরখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা।

চিকিৎসকের এমন অবহেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ওই চিকিৎসককে বারবার যন্ত্রণার কথা বলা হলেও তিনি দম্ভ করে নানা কথা বলতেন। তার মতো কেউ অপারেশন করতে পারবে না বলেও দাবি করতেন। অথচ তার অবহেলায় আমার মেয়েকে চারটা বছর দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আমি ওই চিকিৎসকের বিচার চাই।’

এদিকে, এ বিষয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী জমজম ইসলামী হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে দাবি করা হয়- ডা. গোলাম কিবরিয়া ডন আর এখন এখানে রোগী দেখেন না। অপারেশনও করেন না। তার মোবাইল ফোন নম্বর চাইলে যে নম্বর দেওয়া হয়, তাতে কয়েক দফা কল করে বন্ধ পাওয়া যায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর