এগারোসিন্দুর এক্সপ্রেসে ভ্রমণ নরক যন্ত্রণার নামান্তর

, জাতীয়

আশরাফুল ইসলাম, অতিথি লেখক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 08:38:25

শৈশবের মধুর দিনগুলোতে ট্রেনভ্রমণ, নৌভ্রমণ, বাসভ্রমণ নিয়ে চমৎকার রচনা লেখার দিনগুলো রূপকথা হয়ে গেছে। আজকের দিনে ভ্রমণের কষ্ট নরক যন্ত্রণার নামান্তর। বিশেষত ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রেলপথে এগারোসিন্দুর এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটিতে ভ্রমণের বিরূপ অভিজ্ঞতায় যাত্রীরা প্রতিনিয়ত হাহাকার করছেন।

ট্রেনের নামটি খুব খাসা। মুঘল সেনাপতির সাথে মসনদে-আলা বীর ঈশা খাঁর ঐতিহাসিক যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এগারোসিন্দুর থেকে ট্রেনটির নাম গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু ট্রেনটিতে ঐতিহ্য বা আভিজাত্যের বিন্দুমাত্র রেশ নেই। নেই কোন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগি। হাতেগোণা ফার্স্ট ক্লাশের মলিন কামরা আর গণ-কম্পার্টমেন্টের হতশ্রী অবস্থা দেখে আন্তঃনগর এক্সপ্রেস নয়, মনে হয় লোকাল কিংবা মালগাড়ি।

এহেন ট্রেনের টিকিট সব চলে যায় কালোবাজারির হাতে। কর্মচারীদের টাকা দিয়ে পথে পথে ওঠানামা করে উটকো লোকজন। স্ট্যান্ডিং টিকিটের নামে শত শত মানুষ গিজগিজ করে পুরো ট্রেনে। ছাদ ও পাদানির জায়গাগুলোও দখল করে নেয়া হয়। পরিবার-পরিজন নিয়ে দমবন্ধ এমন ট্রেনে নিত্য আসা-যাওয়া করেন কিশোরগঞ্জের লোকজন।

ট্রেনের গতি ও স্টপেজের কোন বালাই নেই। ১৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা আসা-যাওয়ার জন্য সময় লাগানো হয় চার থেকে পাঁচ ঘন্টা। পথে পথে পয়সা দিয়ে গাড়ি থামিয়ে ওঠানো-নামানো হয় যাত্রী ও মালামাল। এমনি বিরূপ পরিস্থিতিতে মুখ বুজে ভ্রমণ করতে বাধ্য হন জিম্মি নাগরিকগণ।

ট্রেনের সেবা ও সার্ভিসের মান আরও খারাপ। বাথরুমে থাকে না পানি। মলমূত্র, ময়লা পরিস্কার করা হয় না। বাথরুমের পাশের যাত্রীদের উৎকট দুর্গন্ধের হাত থেকে বাঁচতে সারা পথ মুখে রুমাল গুঁজে রাখতে হয়। অধিকাংশ কম্পার্টমেন্টেই নেই আলোর ব্যবস্থা। বাতিগুলো ফিউজ। বিদ্যুতের সংযোগ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন।

মুখভরা নামের এগারোসিন্দুর এক্সপ্রেসের এ হেন দুরবস্থা দেখার কেউ নেই। স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে গেলে বরং নাজেহাল হতে হয়। ব্ল্যাকার ও উটকো মানুষগুলোর সঙ্গে জোট পাকিয়ে রেলের লোকজন উল্টো যাত্রীদেরকেই ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।

কে জানে, কবে অবসান হবে কিশোরগঞ্জ-ঢাকা রেলভ্রমণের এই নৈরাজ্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর