রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন আহমেদকে পুকুরে ফেলার ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস।
সোমবার (৪ নভেম্বর) সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করে ছয় দফা দাবি আদায়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, 'লাঞ্ছিতের ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক।' তবে দুই দিন পার হলেও অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার ঘটনার মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুর পর্যন্ত পুলিশ নয়জনকে গ্রেফতার করলেও মূল আসামিদের ধরতে পারেনি। তারা হলেন- পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাফি শাহরিয়ার (২৩), সোহেল রানা (২২), বাঁধন রায় (২০), আরিফুল ইসলাম (২৩), মেহদী হাসান রাব্বি (২১), মেহদী হাসান আশিক (২২), মেহদী হাসান হিরা (২৩) নবীউল উৎস (২০), নজরুল ইসলাম (২৩)।
গত শনিবার (২ নভেম্বর) ঘটনার পর রাতে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় অধ্যক্ষের দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়- কামাল হোসেন সৌরভ, মুরাদ হোসেন, শান্ত, বনি, হাসিবুল ইসলাম, সালমান টনি, হাবিবুল ও মারুফ হোসেন। মামলার এই আট আসামি এবং সিসিটিভির ফুটেজে যাদেরকে সামনের সারিতে দেখা গেছে, তারা এখনও পুলিশের নাগালের বাইরে। তাদেরকে গ্রেফতারে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ অধ্যক্ষ ও আন্দোলনকারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী পলিটেকনিকের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই শিক্ষক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'আমরা যা খোঁজ পাচ্ছি, তাতে ঘটনার মূলহোতা নগরীতে রয়েছেন। তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন। তারা এসে বিষয়টি আমাদেরকে বলছেন। কিন্তু পুলিশ কেন তাদেরকে খুঁজে পাচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়।'
একই বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, ঘটনার পরও কামাল হোসেন সৌরভসহ অপরাধীরা নগরীতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ওই দিন রাতের পর তারা আত্মগোপনে চলে যান। পুলিশ মামলা নেওয়ার পরও তাদেরকে গ্রেফতারে গা-ছাড়া ভাব দেখিয়েছে। পুলিশ ঘটনার সময় আশপাশে থাকা কিছু শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নিচের সারির কর্মীদের ধরে মূল আসামিদের আড়াল করার চেষ্টা করছে।
জানতে চাইলে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, 'আমি শুনেছি- সৌরভ (নেতৃত্বদানকারী ছাত্রলীগ নেতা) নগরীতে আত্মগোপন করে আছে। কেউ কেউ তাকে বাইক নিয়ে ঘুরতেও দেখেছে। যদি তা সত্যি হয়, তবে পুলিশে কেন তাকেসহ জড়িত মূলহোতাদের ধরতে পারছে না, তা বোধগম্য নয়।'
অধ্যক্ষ আরও বলেন, 'আমি মামলা করেছি- শুধু ব্যক্তি হিসেবে নয়, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে। তারা শুধু ব্যক্তি ফরিদ উদ্দীনকে লাঞ্ছিত করেনি, পলিটেকনিকের সর্বোচ্চ অভিভাবককে লাঞ্ছিত করেছে। বিষয়টি ভেবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবে বলে বিশ্বাস করি।'
তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংশয় উড়িয়ে দিয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, 'পুলিশ ঘটনার পর থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। মহানগর পুলিশ কমিশনারের সার্বিক দিকনির্দেশনায় মামলাটি তদন্ত ও আসামিদের গ্রেফতারে সার্বক্ষণিক অভিযানে রয়েছে।'
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, 'বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যাওয়ায়, ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আসামিরা আত্মগোপনে চলে গেছে। এজন্য তাদেরকে ধরতে কিছুটা সময় লাগছে। তবে তারা যেখানে থাকুক, দ্রুত পুলিশের হাতে ধরা পড়বে।'
এদিকে, দ্বিতীয় দিন সোমবার (৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাস চত্বরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি থেকে তারা ছয়দফা দাবি জানান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো হলো- অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের দ্রুত গ্রেফতার করে সুষ্ঠু বিচার, তাদের স্থায়ীভাবে ছাত্রত্ব বাতিল, পলিটেকনিকে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা, বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।