খুলনায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া, দমকা বাতাস ও বৃষ্টিপাতে কয়েক হাজার গাছগাছালি উপড়ে পড়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় তিন সহস্রাধিক ঘরবাড়ি। সর্বশেষ এ অঞ্চলে দু'জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
রোববার (১০ নভেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম থেকে জানা যায়, উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় প্রায় ১৫০০ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। কয়েক হাজার গাছগাছালি উপড়ে পড়েছে। কয়রায় ঝড়ের প্রভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকটি মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। এছাড়া উপকূলীয় দাকোপ উপজেলায় ১হাজার ৭৬৫টি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
দাকোপেও সহস্রাধিক গাছপালা উপড়ে গেছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী খুলনা জেলার দাকোপ ও দিঘলিয়ায় পৃথকভাবে গাছ চাপায় এক নারী ও এক পুরুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা কয়রায় দেড় হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এছাড়া উপকূলীয় উপজেলায় শত শত বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত কয়রায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি বলে জানা গেছে।
এছাড়া উপকূলীয় দাকোপে ১৭৬৫ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হবার সাথে কয়েক হাজার গাছপালা উপড়ে গেছে। দাকোপের দক্ষিণে প্রমীলা মন্ডল নামে এক নারী গাছ চাপায় নিহত হয়েছেন। এছাড়াও ৩১৫টি মৎস্য ঘের ও ৪২৫টি পুকুর ভেসে গেছে।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় গাছ চাপায় আলমগীর মিস্ত্রী নামে এক ব্যক্তি গাছ চাপায় নিহত হয়েছেন। এছাড়া বৃষ্টির পানিতে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (১০ নভেম্বর) ভোর থেকে খুলনায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে প্রবল বেগে দমকা বাতাস থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর তীব্রতা কমতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে ঝড়ের গতি কমে আসলে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও উপড়ে যাওয়া গাছপালার খবর আসতে শুরু করে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, খুলনার চারটি উপজেলায় এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪৯ হাজার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে দাকোপে ৫৫ হাজার, কয়রায় ৪৫ হাজার, বটিয়াঘাটায় ২০ হাজার, পাইকগাছায় ২০ হাজার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপকূলের মানুষেরা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। এদিকে, উপকূলীয় এলাকার বেঁড়িবাধগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
খুলনা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক হেলাল হোসেন জানান, উপকূলবর্তী ৪টি উপজেলা কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটায় সাইক্লোন পিপাডনেস প্রোগ্রামের ২ হাজার ৪৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষায় প্রস্তুত আছেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে খুলনাঞ্চলের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও গাছপালা উপড়ে পড়ার পাশাপাশি বেশ কিছু এলাকায় আমন ফসল নুয়ে পড়েছে, শীতকালীন শাক-সবজিসহ মৌসুমি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের কারণে নদীতে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে উপকূল পাড়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।