দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এখনো বাংলাদেশেই অবস্থান করছে। তবে সেটা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যাওয়ায় রোববার (১০ নভেম্বর) বিকেলের মধ্যে আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আর কালকে (সোমবার) আমরা একটা রোদ্রজ্জ্বল দিন পাব।
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং কালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বুলবুল দুর্বল হয়ে যাওয়ায় উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর মহাবিপদ সংকেত ১০ থেকে ৩ নম্বরে নামানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপটেন এ বি তাজুল ইসলাম, সচিব শাহ কামাল, আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ৫ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ৭ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে রূপান্তিরত হয়। তারপর ৮ নভেম্বর ৪ নম্বর সর্তকতা সংকেত দেওয়া হয়। ৯ নভেম্বর সকাল ৬টায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়। তারপর আমরা ঝড়ের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করেছি। এটা ৯ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে ৮৮ দশমিক ১ দ্রাঘিমাংশ এবং ২১ দশমিক ৩ অক্ষাংশ বরাবর আসার সময় পশ্চিম বাংলায় আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ঝড়টি দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের সুন্দরবন দিয়ে প্রবেশ করে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এখনো এটা বাংলাদেশের মধ্যে আছে। বিকেল নাগাদ এটি শেষ হয়ে যাবে। এখন বুলবুলের বাতাসের গড় গতিবেগ ৪০-৯০ কিলোমিটার, এটা আসলে খুবই কম। সিডর-আইলায় ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার। যার ফলে এবার ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক লোকজনকে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। এবার ৫ হাজার ৫৮৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২১ লাখ ৬ হাজার ৯১৮ জন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। তাদের নিরাপত্তা দিতে পেরেছি। তাদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এ ১৪টি জেলায় যখনই ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ লাখ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার প্রত্যেক জেলায় পৌঁছে দেওয়া হয়। লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই সেগুলো জেলা প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়। হতাহতের খবর খুব বেশি পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত অফিশিয়ালি প্রমিলা মণ্ডল (৫২) ও হামিদ কাজী (৬৫) নামে ২ জনের মৃত্যু খবর নিশ্চিত করেছি। প্রমিলা খুলনার দাকোপ উপজেলার সুভাষ মণ্ডলের স্ত্রী। তিনি বিনা অনুমতিতে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার পর রান্নাঘরে গাছচাপায় মারা গেছেন। আর পটুয়াখালীর হামিদ কাজীও আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ঘরের ওপর গাছ পড়ে মারা যান। গণমাধ্যমে ৪ জনের কথা বলা হয়েছে। আর ৩০ জন আহত হয়েছে। ৪ থেকে ৫ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্রে যে একজন মারা যাওয়ার খবর এসেছে, সে বিষয়ে সচিব বলেন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, তিনি মারা যাননি, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দুর্যোগ সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে এসেই স্থানগুলো পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সে হিসেবে আগামীকাল আমরা হেলিকপ্টারে করে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করব। এছাড়া জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রতিবেদন নেওয়া শুরু হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকে যার যার মন্ত্রণালয়ের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৪টি জেলার মধ্যে শুধু পটুয়াখালীতে কিছু আমন আছে। সেখানেও আমনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে শীতের সবজির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।