বৃহত্তর খুলনায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৈদ্যুতিক বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাসে অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গেছে। কিছু জায়গায় গাছগাছালি উপড়ে পড়ে বৈদ্যুতিক তার খুঁটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে এ সব এলাকাগুলোতে মারাত্মক বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে এ অঞ্চলের প্রায় ৪ লাখ গ্রাহক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানার কিছু সময় পর থেকেই খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যাওয়া, বৈদ্যুতিক তারের উপরে গাছ উপড়ে পড়ায় জেলার ৯ উপজেলাতেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে খুলনা শহরে প্রায় ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়।
রোববার (১০ নভেম্বর) বিকেলে বিদ্যুৎ সংযোগ মেরামত করা হলে খুলনা মহানগরীর ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হয়। তবে ৯ উপজেলায় এখনো সমস্যার সমাধান না হওয়ায় শনিবার রাত থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হয়েছেন উপজেলাবাসী।
জানা যায়, শনিবার রাত থেকে ঝড়ের কারণে খুলনার বিভিন্ন জেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে বিকেল নাগাদ শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ ফিরে এলেও জেলার গ্রাম ও উপজেলায় প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎহীন আছে সব গ্রাহক।
বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখন পর্যন্ত পুনরায় সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। শহরের অনেক স্থানে তারের উপরে গাছ উপড়ে আছে। অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। অধিকাংশ এলাকায় মেরামতের কাজ চলছে। তবে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে ধীরে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ।
খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের ২২ জেলা নিয়ে গঠিত ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিক উদ্দিন জানিয়েছেন, বুলবুলের কারণে পাঁচটি জেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। ৩২টি ফিডারের আওতায় ১৫টি ফিডার চালুর উপযোগী হয়েছে। বাকি ফিডারের কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। রাতের মধ্যেই লক্ষাধিক গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে যাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
খুলনা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. আলতাফ হোসেন জানান, পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন অঞ্চলে ঝড়ে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি অনেক স্থানে ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৫ শতাধিক কর্মী বিদ্যুৎ সংযোগ সরবরাহের লক্ষে কাজ করছে। বর্তমানে তারা দাকোপ অঞ্চলে কাজ করছেন। তবে কখন নাগাদ বিদ্যুৎ আসতে পারে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি। তবে রাতের মধ্যেই অনেক গ্রাহক বিদ্যুৎ ফিরে পাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে প্রায় ৬০ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন বিভিন্ন মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সঠিক হিসাব নিরূপণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। লাইন পুনঃস্থাপন ও মেরামতের কাজে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মী কাজ করছে বলে জানা গেছে।