বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'বুলবুল' সুন্দরবনের ওপর দিয়ে দুর্বল হয়ে খুলনা উপকূল অতিক্রম করেছে। সুন্দরবনের গাছপালায় বাধাপ্রাপ্ত হয়েই মূলত দুর্বল হতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। যে বনরাজি পরম মমতায় আমাদের আগলে রাখে, কেমন আছে সে? কেমন আছে সুন্দরবন?
রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় খোদ বনবিভাগই দিতে পারেনি এ প্রশ্নের উত্তর। বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানেন না, কেমন আছে সুন্দরবন! ঝড়ের কারণে বনের অভ্যন্তরে গাছ, পশু, পাখির কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা জানা নেই বনবিভাগের।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রভাগ যখন সুন্দরবন উপকূল অতিক্রম করে তখনই তার গতি কমে যায়। ঘূর্ণিঝড়টি সর্বোচ্চ ১৪০ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে এলেও সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানে মাত্র ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে। যা মূল ভূখন্ডে প্রবেশের পর পরিণত হয় স্থল নিন্মচাপে। মূলত সুন্দরবনের বাধাতেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দুর্বল হতে শুরু করে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ।
বন বিভাগ সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন পর্যন্ত সুন্দরবনের গাছ, পশু-পাখিরা কেমন আছে জানা নেই বনবিভাগের। সকালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ঝড়ের মাত্রা থেমে গেলেও বনবিভাগের কর্মকর্তারা ফরেস্ট স্টেশন থেকে বের হতে পারেনি। ফরেস্ট স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বের হতে পারেনি বলছেন কর্মকর্তারা।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বার্তাটোয়েন্টিফোর. কমকে বলেন, সুন্দরবন তো অনেক বড় জায়গা। মাত্র তো ঝড় শেষ হলো, সময় লাগবে সার্ভে করতে। এখন পর্যন্ত ফরেস্ট অফিসের কর্মকর্তারা বের হতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, বন পরিদর্শন করে আমাদের কাছে তারা রিপোর্ট জমা দেবে। বনের ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্যও আমাদের কাছে নেই।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আসলে যারা বনের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা স্টেশনে আছেন। কাল তারা বের হবেন বনের ক্ষয়ক্ষতির অবস্থা জানতে। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি সুন্দরবনে যে ফরেস্ট স্টেশনগুলো আছে সেসব কার্যালয়ের পুরাতন টিন, কাঠের ঘরে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে সেটি খুব বেশি না।
তিনি আরো বলেন, এবারের ঘূর্ণিঘড় বুলবুলের গতিপথ পরিবর্তনে সুন্দরবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের সবারই উচিত বন সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা। সুন্দরবন বাঁচলে, আমরা বাঁচবো।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন নয়নাভিরাম সুন্দরবনের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বনভূমি ৪ হাজার ৮৩২ বর্গ কিলোমিটার এবং জলাভূমি ১ হাজার ১৮৫ বর্গকিলোমিটার। এই বনভূমি ও জলাভূমিতে বাস করে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা'র সময়েও একইভাবে সুন্দরবনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল ঝড়গুলো। এবারও একইভাবে সুন্দরবন ঢাল হয়ে রক্ষা করলো দেশকে।