আজ ৩০ নভেম্বর, ঐতিহাসিক পলাশকান্দা ট্র্যাজেডি দিবস। ১৯৭১ এর এই দিনে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ, মনজু, মতি ও জসিম।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাস। গৌরীপুরসহ সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় পাক হানাদার বাহিনী তখন দিশেহারা। ঠিক সেই মুহূর্তে মুজিব বাহিনীর একটি গেরিলা দল ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী পাক হানাদার বাহিনীর কনভয়ে হামলা করার প্রস্তুতি নেয়। এ জন্য তারা গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জের সীমান্তবর্তী গ্রাম পলাশকান্দা গ্রামে অবস্থান নেয়।
মুজিব বাহিনীর কমান্ডার মো. মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দলে ছিলেন মো. তমিজ উদ্দিন, মরহুম আনোয়ারুল হক খায়ের, আব্দুল জলিল, নুরুল আমীন, আব্দুস সাত্তার, এ কে এম নজরুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, আনোয়ারুল ইসলাম মনজু, সিরাজুল ইসলাম, মোখলেছুর রহমান চাকদার, মতিউর রহমানসহ ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা।
কিন্তু পলাশকান্দা গ্রামের বাসিন্দা রাজাকার মজিদ মাস্টার মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা দলের অবস্থানের খবর পৌঁছে দেয় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে। সঙ্গে সঙ্গেই পাক হানাদার, রাজাকার ও আলবদরের সম্মিলিত বাহিনী পলাশকান্দায় মুজিব বাহিনীর ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হয়।
এ সময় মুজিব বাহিনীর দলটি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঈশ্বরগঞ্জের মাইজকা হানাদার ক্যাম্প আক্রমণের জন্য রওনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইতোমধ্যে হানাদার বাহিনী তিনদিকে ঘিরে ফেলে গুলি ছুঁড়তে থাকলে কমান্ডার মুজিবুর রহমান পাল্টা গুলি ছোড়ার আদেশ দেন। আকস্মিকভাবে আক্রান্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এ সময় দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুললেও পাক বাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। যুদ্ধরত অবস্থায় জসিম উদ্দিন হানাদার বাহিনীর ব্রাশ ফায়ারে শহীদ হন। এ সময় হানাদারের হাতে আহত অবস্থায় ধরা পড়ে আনোয়ারুল ইসলাম মনজু, মতিউর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম।
জানা গেছে, ধরা পড়া তিন মুক্তিযোদ্ধাকে হানাদার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে পরে ব্রহ্মপুত্রের নদীর চরে তাদের চোখ বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে উপরে ফেলে পরে হত্যা করে।
প্রতি বছর এই দিনটি গৌরীপুর শহীদ দিবস বা পলাশকান্দা ট্র্যাজেডি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, চাঁদের হাট, যুগান্তর স্বজন সমাবেশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।