সিলেট সিটিতে জোটের প্রার্থী একাধিক, বিব্রত বিএনপি

, জাতীয়

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 06:35:29

 

ঢাকা: খুলনা, গাজীপুর সিটি করপোরেশন  নির্বাচন শেষে ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা সিটি  নির্বাচন। একই দিনে তিন সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় অনেকটা জাতীয় নির্বাচনের মতোই আমেজ বিরাজ করছে। কিন্তু অস্থিরতা রয়েছে ২০ দলীয় জোটে। এর মূলে রয়েছে প্রার্থী চূড়ান্ত নিয়ে জোটের শরিকদের ভিন্ন অবস্থান।

আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাজশাহী ও বরিশাল দুই সিটিতে জোটগত প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও সিলেট সিটিতে মেয়র পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি ২০ দলীয় জোট। এছাড়া শরিকদের  ভিন্ন প্রার্থী থাকার কারণে এখন প্রশ্ন সিলেট সিটিতে তাহলে কে হচ্ছেন জোটের প্রার্থী?

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি থেকে আমাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছি। অন্যদিকে জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। শরিকদের অনেকেই সমর্থন করেছে বিএনপির প্রার্থীকে। এখনও সময় আছে। সময় তো শেষ হয়ে যায়নি। ৯ জুলাই পর্যন্ত প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সুযোগ আছে আলোচনা করে সমঝোতায় আসা যাবে।

বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি থেকে একক প্রার্থী দিলেও আপত্তি করেননি জোটের শরিকরা। তবে সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি তাদের একক প্রার্থী ঘোষণা করলে বাধে বিপত্তি। জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী তাদের দলীয় মনোনীত প্রার্থী সিলেট জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে মেয়র পদে প্রস্তাব করে। এছাড়া খেলাফত মজলিসের রয়েছে একক প্রার্থী। 

বুধবার (৪জুন) বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতিত্ব করেন। তিনি জোটের শরিকদের শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রস্তাব করেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জোটগতভাবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে দেওয়া যায় কিনা। এ সময় জামাতের শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

জোটগতভাবে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বৈঠকে উপস্থিত অনেকেই বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন করলেও জামায়াতের অবস্থা অভিন্ন। তারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সিটি  নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। জামায়াত মনে করে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনী এলাকায় তাদের অবস্থা বিএনপি'র চেয়েও শক্ত। তাই তারা নির্বাচন থেকে সরে আসতে চায় না। জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতাও সম্মত হয়েছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা তার প্রতিনিধির মাধ্যমে বার্তা ২৪.কমকে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিগত নির্বাচনে জোট যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেগুলো মেনে নিয়েছে। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম যাতে সিলেট সিটি নির্বাচনে জামায়াতকে ছাড় দেওয়া হয়। এখন দেখা যাচ্ছে বিএনপি তাদের কথা রাখছেন না। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সিলেট সিটিতে আমাদের বিপুল ভোট ব্যাংক রয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের এখনো সময় রয়েছে। আশাকরি বিএনপি তা বুঝবে এবং আমাদের সমর্থন করবে।

জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের অন্য একজন বলেছেন, ২০ দলীয় জোট ও বিএনপি যদি জামায়াতে ইসলামীকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাপোর্ট না দেয় তাহলে আমরা এককভাবেই লড়ব। বিএনপি'র প্রার্থীর তুলনায় একটি ভোট হলেও বেশি পেয়ে দেখিয়ে দেব যে আমাদের অবস্থান কতটা শক্ত। 

জামায়াতে ইসলামীর এ ধরনের সিদ্ধান্তকে 'গোঁড়ামি' উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা বলেছেন, জামায়াত ইসলামী জোটে থাকায় অনেকটাই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে ২০ দলীয় জোট। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার ফাঁসি হওয়ায় এ অবস্থায় পড়তে হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির অনেক সমালোচিত হয়েছে। তারপরও আমরা তাদেরকে সঙ্গে রেখেছি। এ বিষয়টি অন্তত তাদের বোঝা উচিত। এই সংকটকালীন সময়ে বিরোধিতা না করে জোটের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হলে সকলের মঙ্গল। আশাকরি জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে জোটের মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন দেবে।

এদিকে জামায়াতে ইসলামী গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, সিলেট সিটি নির্বাচনে তাদের দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। এতে কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।  এটা তাদের দলীয় চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর