চীনা নাগরিক জিয়ানহুই গাও (৪৩) হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে হত্যার বর্ণনা দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান আব্দুল বাতেন।
আব্দুল বাতেন বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন আব্দুর রউফ (২৬) ও এনামুল হক (২৭)।
ডিবি প্রধান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলো তারা। ওই বিল্ডিং এর ছাদে বসবাস করতো। একত্রে চাকরির সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:চীনা নাগরিকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আটক ৩
এই বিল্ডিংয়ে বসবাসকারী বিত্তবান লোকদের জীবনযাত্রা দেখে তারা হতাশাগ্রস্থ হয় এবং নিজেদের মধ্যে আলাপ চারিতায় বারবার কিভাবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায় কথা বলেন।
একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে রউফ প্রস্তাব দেয় যে, চীনা নাগরিক গাও অনেক বড় ব্যবসায়ী, অনেক টাকা পয়সা নিয়ে আসা-যাওয়া করে, ফ্ল্যাটে একা থাকে। তাকে হত্যা করে টাকা নিতে পারলে জীবনে আর কিছু করা লাগবে না।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে। এদিকে তারা নিশ্চিত হয় যে বিল্ডিং এর সিসিটিভি ক্যামেরাতে ভিডিও রেকর্ড কাজ করে না।
আরও পড়ুন:চীনা নাগরিক হত্যা মামলায় এখনো গ্রেফতার নেই কেউ
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১০ ডিসেম্বর তারা নিজের ব্যবহৃত গামছা সঙ্গে নিয়ে গাওয়ের ফ্লাটের সামনে যায়। গাও দরজা খুললে তারা ইশারায় পানির কথা বলে। মুহূর্তেই তারা দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং এনামুল গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধরে।
অল্প সময়ের মধ্যেই গাও এর মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়। পাশেই ড্রইং রুমের টেবিলের ওপরে ছোট একটি ব্যাগ ছিল। রউফ ওই ব্যাগটি খুলে সেখানে থাকা ৩টি ১ হাজার টাকার বান্ডিল, কিছু খুচরা টাকা ও মোবাইল নেয়। সেখানে মোট সাড়ে ৩ লাখ টাকা ছিল।
বর্ণনায় ডিবির এই প্রধান কর্মকর্তা বলেন, টাকা নিয়ে মরদেহ ঘরে রেখে গামছা দিয়ে রক্ত মুছে ছাদে চলে যায় তারা। পরে এক সঙ্গে গোসল করে দুইজন। রাতেই বনানী সুপার মার্কেটের পাশে একটি চায়ের স্টলে বসে চা খায় এবং টাকাগুলো কি করবে তা নিয়ে আলোচনা করে। পরবর্তীতে টাকাগুলো তারা ভাগ করে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:চীনা নাগরিকের হত্যার বর্ণনা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্ত্রী
আব্দুল বাতেন বলেন, ওইদিন রাতে রউফ সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে ডিউটিতে ছিল। রাত ১১টার দিকে বিল্ডিংয়ের পিছনের দিকে বালু মাটিতে কাঠের টুকরো দিয়ে গর্ত করে ওপরে ওঠে। মরদেহ টেনে নিয়ে লিফট দিয়ে নামিয়ে মাটিচাপা দেয়।
ঘটনার একদিন পর গাও এর গাড়ির ড্রাইভার তার ব্যবহৃত স্যান্ডেলে রক্তের দাগ দেখে খোঁজা শুরু করে। একপর্যায়ে ড্রাইভার বিল্ডিং এর পিছনে মাটিচাপা অবস্থায় পায়ের গোড়ালি দেখে পুলিশকে খবর দেয়।