লাল ইটের গাঁথুনির ভবন আর সবুজ গালিচার ক্যাম্পাস ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজ। টানা চতুর্থবার দেশসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করা কলেজটিতে লেগেই থাকে উৎসব-আমেজ। প্রায়ই ঝাড়বাতি আর রঙ-বেরঙের সাজে সাজানো হয় কলেজ ক্যাম্পাস। তবে এবারের উৎসবের আমেজ যেন সবকিছু ছাড়িয়ে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) কলেজটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম এইচএসসি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী। প্রতীক্ষিত এই আয়োজনে প্রাক্তনদের বরণে সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে কলেজ প্রশাসন। কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তনদের এই মিলনমেলাকে ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরে দেখা যায়, প্রাক্তনরা এরই মধ্যে চলে এসেছেন। অনুষ্ঠানের আগের রাতে ক্যাম্পাসে এসে স্মৃতি রোমান্থ করছেন। বর্তমান ও প্রাক্তনদের মেলবন্ধনে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে গোটা কলেজ ক্যাম্পাস। ব্রিটিশ আমলের সেই লাল ইটের প্রশাসন ভবনকে প্রাক্তনদের স্মৃতির পাতায় ফুটিয়ে তুলতে ক্যাম্পাসের একেবারে সামনের অংশে প্রশাসন ভবনের আদলে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। যে মঞ্চে বরণ করে নেওয়া হবে তাদের।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী কলেজের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কার্যক্রম ও সফলতাকে তুলে ধরা হবে অ্যালামনাই থিম সং এর মাধ্যমে। ক্যাম্পাসের স্মৃতিবিজড়িত আবেগঘন দিনগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে থাকবে স্মৃতিচারণ ও ফটোসেশন পর্ব। কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে থাকবে একাধিক সাংস্কৃতিক পর্ব। যেখানে ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল আন্দোলনে রাজশাহী কলেজের স্বর্ণালী ইতিহাস, বাঙালি সংস্কৃতি ও উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হবে। ছাত্রাবাসের স্মৃতিচারণের জন্যে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ভবন চত্বরে আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে রাজশাহী কলেজ একাল-সেকাল মঞ্চ।
রাজশাহী কলেজের এইচএসসি অ্যালামনাই পুনর্মিলনিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী ঘোষণা করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সকাল সাড়ে ৮টায় বের করা হবে বর্ণাঢ্য র্যালি। পরে সকাল সাড়ে ১০টায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রধান অতিথি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, আয়েন উদ্দিন, আবদুল কুদ্দুস, ফিরোজ কবির, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য এমপি আদিবা আনজুম মিতা, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হুমায়ুন কবির খোন্দকার প্রমুখ।
পুনর্মিলনী আয়োজক কমিটি সূত্র জানায়, প্রায় নয় হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছেন। তারা এরই মধ্যে কলেজে এসেছেন। এখন শুধু মূল উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষার পালা। এই আয়োজনে ব্যয় হচ্ছে দুই কোটি টাকারও বেশি। দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে থাকছে আলোচনা, স্মৃতিচারণ, ছাত্রাবাসের স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, আতসবাজিসহ নানা আয়োজন। বিশালাকার মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ। এই মঞ্চ মাতাবেন ব্যান্ড তারকা জেমস। এছাড়া আসছে ব্যান্ড দল চিরকুট। গাইবেন স্থানীয় শিল্পীরাও।
রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, রাজশাহী কলেজ দেশের তৃতীয় পুরাতন কলেজ। দেশ ভাগের আগে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং রাজশাহী কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে বদলি-পদায়ন হতো। তাই এই কলেজকে প্রেসিডেন্সি কলেজের সমতুল্য ধরা হয়। তারা এটি প্রমাণও করেছেন।
তিনি বলেন, গত চার বছর ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তালিকায় দেশসেরা এই কলেজ। আর গত তিন বছর ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়েও এই কলেজ শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে। পরের র্যাংকিং এখনও ঘোষণা হয়নি। তবে তারা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন রাজশাহী কলেজই আবার দেশসেরা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে আগে থেকেই সিসি ক্যামেরা আছে। তবে অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মঞ্চসহ সব জায়গায় আরো বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এক কথায় ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটা জায়গা সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা থাকবে।
জানা যায়, ১৮৭৩ সালে রাজশাহী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯৯৫ সাল থেকে মাঝে ১৫ বছর এইচএসসি শাখা বন্ধ ছিল কলেজটিতে। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে আবার এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করা হয়। সর্বশেষ ব্যাচগুলো বিভিন্ন সময় ব্যাচের উদ্যোগে পুনর্মিলনী করেছে। তবে এবারই প্রথম প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সাবেক সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে অ্যালামনাই আয়োজন করা হচ্ছে।