দেশব্যাপী ধর্ষণের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধা ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে কেউ বাদ যাচ্ছে না।
সর্বশেষ রোববার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাস থেকে নেমে ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে রাজধানী জুড়ে দিনভর চলে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে চরম নৈতিক অবক্ষয়, মাদকের বিস্তার, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতা।
সদ্য শেষ হওয়া বছরের হিসাব শেষে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৷ গড় হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ৪ জন করে।
২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৭৩২জন ৷ অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮১৮ জন নারী ৷ এদিকে ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে ৷ আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন নারী ৷
সংস্থাটি বলছে, এমন সংখ্যা সত্যি নারী নির্যাতনের ভয়াবহতার ইঙ্গিত দেয়৷
সংস্থাটির তথ্যে তুলে ধরা হয়েছে, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে চারজন নারীসহ ১৭ জন হত্যার শিকার হয়েছেন ৷ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৪ জন পুরুষও। তবুও থামছে না ধর্ষণ।
ধর্ষণ বা নির্যাতনের বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটে তার অনেক অংশই জানা যায় না ৷ আবার ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটলে জানা যায়, তবে শাস্তি হয় মাত্র শূন্য দশমিক তিন ভাগ ৷ আমার মনে হয় বিচারহীনতার জন্য এমন ঘটনা বার বার ঘটছে। পাশাপাশি নারীদের সামাজিকভাবে সুরক্ষা দেয়ার রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্র তা পালন করছে না ৷ ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে ৷
একই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, অনেকের ধারণা পোশাকের কারণে নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকেন। কিন্ত পোশাকের সঙ্গে ধর্ষণের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।
কেননা আমরা দেখেছি, বোরকা পরা নারী থেকে অবুঝ শিশুও ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণ রোধে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যে আইন আছে। তার সঠিক প্রয়োগের বিকল্প নেই।