নভেল করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কারো আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশের বড় চারটি প্রকল্পে কাজ করছেন করোনায় আক্রান্ত দেশ চীনের প্রায় ১ হাজার ১৪৮ জন। যার মধ্যে ৩৭৩ জন জানুয়ারি মাসে নববর্ষের ছুটিতে চীনে গেছেন।
জানা গেছে, দেশের অন্যতম বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ও মেট্রোরেল প্রকল্পে কর্মরত ১ হাজার ১৪৮ জন চীনা নাগরিকদের মধ্যে অনেকেই নববর্ষের ছুটিতে দেশে গেছেন। এরপরই সেখানে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিলে তাদের বাংলাদেশে ফেরা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বাংলাদেশে ফিরলেও তাদের অধিকাংশকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে এবং প্রকল্পের মূল কাজের বাইরে রাখা হয়েছে। আর প্রকল্পগুলোতে কর্মরতদের চীনে যাওয়া আসায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প
পদ্মা সেতু প্রকল্পে ৯৮০ জন চীনা নাগরিক কর্মরত রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৩২ জন নববর্ষের ছুটিতে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৩৩ জন ফিরেছে। এর মধ্যে ৮ জন কোয়ারেন্টাইন (নিবিড় পর্যবেক্ষণ) মুক্ত থাকলেও বাকিদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে । নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কর্মকাণ্ডের বাইরে রাখা হচ্ছে। আর যারা বাংলাদেশে রয়েছেন, তাদেরও চীনে যেতে মানা করা হয়েছে। সবার জন্য মাস্ক, গ্লাভস পরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর সব মিলিয়ে অগ্রগতি ৭৭ শতাংশ, মূল সেতু ৮৬ শতাংশ এবং ২৩টি স্প্যান বসেছে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদী শাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরের সড়ক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন করতে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ফরাসি দাতা সংস্থা (এএফডি), গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) অর্থায়নে বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। মূলত যাতায়াতে সময় কমাতেই প্রায় দুই হাজার ৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রতি ঘণ্টায় উভয় দিকে ৪০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট। এই প্রকল্পে ৭২ জন চীনা নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে একজন ছুটিতে রয়েছে। বাকি সবাই কর্মরত রয়েছেন।
মেট্রো রেল প্রকল্প
যানজট নিরসনে বর্তমান সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্পগুলোর একটি মেট্রোরেল প্রকল্প। এখন র্পযন্ত মেট্রো রেল প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪২ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও ৬৮ শতাংশ এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে কাজ ৩৬ শতাংশ হয়েছে। এখানে চীনা নাগরিক আছে ৫৮ জন, চীনে গেছে ৩১ জন। ফেরত এসেছে একজন, তিনি কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এই প্রকল্পে চীনা নাগরিকের জন্য কোনো প্রভাব পড়বে না।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
প্রথম ফেইজের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। এখানে মোট চাইনিজ নাগরিক কর্মরত আছেন ৩৮ জন। যার মধ্যে ২০ জন কাজ করছেন আর ছুটিতে আছেন ১৮ জন। এই প্রকল্পে ছুটিতে থাকা চাইনিজদের জন্য কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পদ্মা সেতু প্রকল্পের যেসব চীনা কর্মী দেশে গেছেন, তাদের ছুটি প্রলম্বিত হলে প্রকল্পের অগ্রগতিতে সমস্যা হতে পারে। তবে দুই মাসের মধ্যে কোনো সমস্যা হবে না, এরপরও তারা আসতে না পারলে কিছু সমস্যা হবে। আর বাকি প্রায় প্রকল্পগুলোতে কর্মরতদের জন্য সমস্যা হবে না।
প্রসঙ্গত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৪৯০ জন। আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে চব্বিশ হাজার ছাড়িয়েছে। এদিকে চীন বাদেও পৃথিবীর ২৫টি দেশে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা গেছে। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে চীনের বাইরে হংকং ও ফিলিপাইনে দুজন মারা গেছে।
এদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে উৎপত্তি হওয়া করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে কয়েকটি শহরে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীনা সরকার। শহরগুলোর সমস্ত লোকজনকে তাদের গৃহে অবস্থান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া গণপরিবহন ও জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি দেশ চীনে ভ্রমণ ও প্লেন চলাচল স্থগিত করেছে। এদিকে ২০টি দেশে আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করার পর ডব্লিউএইচও বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারি করেছে।