মেয়রপ্রার্থী রেজাউল-শাহাদাতের যত সম্পদ

চট্টগ্রাম, জাতীয়

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম থেকে | 2023-09-01 16:08:29

সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

এরই মধ্যে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাচাইয়ের বাঁধও পার হয়েছে এ দুই দলের প্রার্থীরা।

কমিশনে দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ১৯ লাখ টাকা খরচ করবেন। আর এই খরচের অর্থ তিনি নিজের আয় থেকে এক লাখ টাকা, স্ত্রী দেবেন পাঁচ লাখ, এক ভাই সাড়ে তিন লাখ এবং অন্য দুই ভাই পাঁচ লাখ টাকা করে দেবেন বলে উল্লেখ করেছেন।

অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ২০ লাখ টাকা খরচ করবেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে নিজের ব্যক্তিগত ১০ লাখ টাকা আর দুই বোনের কাছ থেকে ঋণ করবেন পাঁচ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা। বিভিন্নভাবে তার ঋণের বোঝা থাকলেও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর ব্যাংক অথবা আর্থিক কোনও প্রতিষ্ঠানে ঋণ নেই।

বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন হলফনামায় বলেন, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কাছে তার তিন কোটি দুই লাখ ২৫ হাজার টাকা ঋণ আছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের কাছে ২৯ লাখ ৮১ হাজার ১৩২ টাকা এবং অন্যান্য খাতে তার আরও দুই লাখ ৪৬ হাজার ৩১৩ টাকা ঋণ আছে।

অন্যদিকে রেজাউল করিম তার হলফনামায় দাবি করেন, একক বা যৌথভাবে কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার কোনও ঋণ নেই।

দুইপ্রার্থীর যত আয়

ডা. শাহাদাত নানাখাতে তার মোট বার্ষিক আয় দেখান ২০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া থেকে আসে তিন লাখ ৫৩ হাজার ২৫ টাকা। চিকিৎসা, শিক্ষকতা ও পরামর্শক হিসেবে পান ১৭ লাখ ২১ হাজার টাকা।

অন্যদিকে রেজাউল করিম নিজের ও নির্ভরশীলদের মিলে তার বার্ষিক আয় ৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। বাড়ি, দোকানভাড়া ও অ্যাপার্টমেন্ট থেকে রেজাউলের বার্ষিক আয় চার লাখ ১৪ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে নির্ভরশীলদের আয় তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার থেকে আয় দুই লাখ এক হাজার টাকা।

যত সম্পদ নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর

রেজাউল করিম চৌধুরী হলফনামায় মোট ৭১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৮ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন।

তার মধ্যে, নিজ নামে আছে নগদ এক লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে তিন লাখ ৫১ হাজার ৪০৯ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ সাত লাখ আট হাজার ৫৩৯ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৯০ টাকা। পোস্টাল সেভিংসে নিজ নামে না থাকলেও স্ত্রীর নামে ২০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড আছে। রেজাউল করিমের নিজ নামে রয়েছে চার লাখ টাকা দামের একটি মোটর গাড়ি। স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর মধ্যে বিবাহসূত্রে নিজ নামে ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের ২০ তোলা স্বর্ণ ও স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৪০ তোলা স্বর্ণ আছে।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে, নিজের নামে কৃষি ও অকৃষি জমি নেই। তাবে তার স্ত্রীর নামে দুই গন্ডা দুই কড়া অকৃষি জমি আছে। দালান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পদের মধ্যে নিজ নামে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভূমির ওপর আবাসিক গৃহমূল্য এক লাখ টাকা ও যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত চার ভাগের এক অংশ। নিজ নামে চারটি অ্যাপার্টমেন্ট যার মূল্য এক কোটি ৯ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৭ টাকা।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের যত সম্পদ

ডা. শাহাদাত হোসেন চার কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার ২২৭ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন।

তার মধ্যে, নিজের নগদ টাকা আছে ১৫ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৭ টাকা, নিজের নামে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার বাবদ তিন লাখ ৭১ হাজার ৩৫০ টাকা। এছাড়া নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় শাহাদাতের দি ট্রিটমেন্ট সেন্টার নামে একটি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টার আছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক মূলধন তিন কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ৬০০ টাকা।

এছাড়াও নিজের নামে ১১ লাখ ৮০ হাজার মূল্যমানের কার (ফিল্ডার-টয়োটা) ও ২৭ লাখ ২০ হাজার মূল্যমানের ভি-৭৩ মডেলের পুরনো জিপ গাড়ি আছে।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে, ডা. শাহদাতের নিজ নামে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ আছে। এর মধ্যে নিজ নামে ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১৮ শতক এবং ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১ দশমিক ৫ কাঠা অকৃষি জমি আছে। নিজ নামে ৬৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকার আটতলা বিশিষ্ট একটি দালানের এক অংশ আছে। এ ছাড়া ৩৫ লাখ টাকা দামের একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে শাহাদাতের।

বিভিন্ন অভিযোগে ডা. শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে ৪৮টি মামলা থাকলেও রেজাউল করিম চৌধুরীর নামে কোনও মামলা নেই। নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জমা দেওয়া হলফনামায় এসব তথ্য উল্লেখ রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর