শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা। ধুলাবালু ভরা নদী চরের রাস্তায় দেখা মিলল কিছু কৃষাণ-কৃষাণীর। তাদের বেশিভাগের মুখে মাস্ক নেই। হাতে নেই সুরক্ষার গ্লাভস। তবে কাস্তে, কোদাল আর লাঙল ঠিকই রয়েছে সঙ্গে।
দূরে চোখে পড়ল আরও কিছু নারী-পুরুষকে। তারা মাঠে ব্যস্ত কৃষি কাজে। আবাদি জমির পরিচর্যায় ঘাম ঝরা রোদে ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করছে।
চরাঞ্চলের শ্রমজীবী এসব মানুষের মধ্যে নেই করোনা আতঙ্ক। তাদের চোখে মুখে ফসল বাঁচানোর চিন্তা। এদের কেউ কেউ কৃষি শ্রমিক। অন্যের জমিতে কাজ করলেই চুলোয় ওঠে ভাতের হাঁড়ি। তাই করোনা সংক্রমণ নিয়ে এরা চিন্তিত নয়। এদের কপালে চিন্তার ভাজ দু'মুঠো ভাতের যোগান নিয়ে।
শনিবার (২৮ মার্চ) সকালে তিস্তা নদী বিস্তৃত রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের চরাঞ্চল ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।
সামাজিক দূরত্ব কিংবা সঙ্গরোধের বালাই নেই সেখানকার মানুষের মধ্যে। বাড়ির বাইরে মাঠে মাঠে চলছে আলু উত্তোলন। কেউবা ব্যস্ত আউশের চারা রোপণে। চরের উত্তপ্ত বালুর বুকে কেউ কেউ তুলছে বিষবৃক্ষ তামাকপাতা।
সচেতনতার অভাবের চেয়ে এখানকার অসহায়, দুস্থ ও শ্রমজীবী মানুষের পেটের ক্ষুধা মেটানোর অভাবটা একটু বেশি। তাই সরকারি নির্দেশনা কিংবা করোনা মোকাবিলায় সঙ্গরোধে থাকার বিষয়টি এখানে উপেক্ষিত।
মর্ণেয়ার চরে কথা হয় কৃষি শ্রমিক খতিবার মিয়ার সঙ্গে। তিনি করোনার কথা শুনতেই বললেন, ‘হামার এত্তি বিদেশি অসুক (রোগ/ভাইরাস) আইসপার নয়। হামরা কামলা দিয়া খাই। ঘরোত থাকলে পেট চলবে কেমন করি। কায়ো তো খাবার ব্যবস্থা করি দিলে না। ওই করোনা ওগের (রোগের) চ্যায়া প্যাটের ভোক (ক্ষুধা) বেশি ভয়ংকর ।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গঙ্গাচড়ার ছোট-বড় ২৭টি চরে প্রায় ১৩ হাজার পরিবারের বাস। আর নোহালী থেকে মর্ণেয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধে আশ্রিত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। শ্রম বিক্রিই নদীভাঙনে নিঃস্ব এসব পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকার পথ। তাই নিজেদের জীবিকার তাগিদে তাদের প্রতিদিনের সকালটা শুরু হয় কাজের সন্ধানে।
এসব এলাকার সচেতন মানুষরা বলছেন, শহরের বাসিন্দাদের মতো চরাঞ্চলের মানুষকে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সচেতন করতে হবে। একই সঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার আগেই তাদের খাদ্য নিশ্চিত করে চলাফেরা বন্ধ করে দিতে হবে।
ছালাপাক চরের স্কুল শিক্ষক মকবুল হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষ করোনা তো বোঝেই না, স্বাস্থ্য সচেতনও নয়। খেটে খাওয়া মানুষজন জীবিকার তাগিদে কাজে ছুটছেন। এখানে চলাফেরাতেও নেই কোনো সীমাবদ্ধতা। এসব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে করোনা সংক্রমণ রোধে সঙ্গরোধ বা সামাজিক দূরত্বও নিশ্চিত হবে। ঝুঁকিমুক্ত থাকবে গ্রামের মানুষও।’