মাঝ রাতে অসহায় পোশাক কর্মীকে বাড়ি পৌঁছে দেন ইউএনও

, জাতীয়

রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) | 2023-08-26 17:12:27

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে পোশাক কারখানা। তাই দুই সন্তান নিয়ে বাড়ি রওনা হন পোশাক কর্মী রোজিনা আক্তার (২৮)। যানচলাচলে কড়াকড়ি থাকায় অনেক সংগ্রাম করে বাড়ির কাছাকাছি আসতে আসতে তাদের অনেক রাত হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় সঙ্গে থাকা টাকাও।

তাই নির্জন মাঝ রাতে বাড়ির পথে চলতে গিয়ে ভয় চেপে ধরে অসহায় রোজিনার মনে। অজানা আতঙ্কে ধড়ফড় করতে থাকে বুক।

ঠিক তখনি তাদের গতিরোধ করেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন। সব কিছু শুনে ইউএনও মাঝ রাতেই নিজের গাড়িতে করে সন্তানসহ রোজিনাকে বাড়ি পৌঁছে দেন।

সোমবার (৭ এপ্রিল) রাতে এই ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের রাজিবপুর-মধুপুর আঞ্চলিক সড়কে।

রোজিনার বাবার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের রাজিবপুর ইউনিয়নের সুতিভরাট গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আমিনুল হকের মেয়ে। উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের মগটুলা গ্রামের আবুল বাশারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সংসারে তাদের ইমরান (২) ও জাহিদুল (৬) নামে দুই সন্তান রয়েছে।

জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে রোজিনা আক্তার গাজীপুর জেলার মালেকাবাড়ির একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তার স্বামী কাজ করেন ওই এলাকার একটি চালের দোকানে।

মূলত করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারি ছুটি ঘোষণায় বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পোশাক কারখানা। তখন পরিবারসহ রোজিনা বাড়ি চলে আসেন।

এদিকে বাড়ি ফেরার কিছুদিন পর পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণা দিলে পরিবার নিয়ে রোজিনা অনেক কষ্টে গাজীপুর যান। কর্মস্থলে যোগ দিয়েই বেতন পাবেন এমন আশা যখন রোজিনার চোখেমুখে তখন ফের পোশাক কারখানা বন্ধের ঘোষণা আসে।

এরপর অনাহারে থাকার শঙ্কায় স্বামী আবুল বাশার ৪শ টাকা ধার করে স্ত্রী রোজিনা ও দুই সন্তানকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তবে টাকার অভাবে আবুল বাশার নিজে তাদের সঙ্গে আসতে পারেননি।

সোমবার (৬ এপ্রিল) সকাল ৯টায় ব্যাগে প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে দুই সন্তানসহ বাড়ি রওনা হন রোজিনা। পথে বিভিন্ন যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে আসেন তিনি। ঈশ্বরগঞ্জের মধুপুর বাজারে পৌঁছাতেই অনেক রাত হয়ে যায় তার। কিন্তু বাড়ি তখনো ৬ কিলোমিটার দূরে। হাতে কোনো টাকা নেই। এই অবস্থায় অনেক অপেক্ষার পর যানবাহন না পেয়ে ভয় ও আতঙ্ক নিয়েই হাঁটতে শুরু করেন রোজিনা।

এ সময় ঈশ্বরগঞ্জ ইউএনও জাকির হোসেন তার গতিরোধ করেন। এরপর সবকিছু শুনে ইউএনও নিজের গাড়িতে করে রোজিনা ও তার সন্তানদের ৬ কিলোমিটার দূরে বাড়িতে পোঁছে দেন। সেই সঙ্গে রোজিনাকে চাল, ডালসহ কিছু খাদ্যসামগ্রীও তুলে দেন।

রোজিনা আক্তার বলেন, ‘সারা দিন না খেয়ে ছিলাম। মধুপুর বাজারে আসতেই অনেক রাত হয়ে যায়। হাতে কোনো টাকা ছিল না। ইউএনও স্যারের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি নিজের গাড়িতে করে আমাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। ক্ষুধার্ত থাকার কথা শুনে খাবারও দিয়েছেন। স্যারের ব্যবহারে যাত্রাপথের সব কষ্ট ভুলে গেছি।’

ঈশ্বরগঞ্জ ইউএনও জাকির হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গাড়িতে চড়ে রাত্রিকালীন এলাকা পরিদর্শন করছিলাম। পথিমধ্যে নির্জন সড়কে পোশাক কর্মীকে দেখে গাড়ি থামাই। পরে তার কথা শুনে মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই খাদ্যসামগ্রী দিয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেই। বাড়ি পৌঁছানোর পর ওই পোশাক কর্মী বোনটির মুখে যে হাসি ফুটে উঠেছে সেটাই আমার পরম পাওয়া।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর