তাদের শ্রমে পরিচ্ছন্ন থাকে সড়ক

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’
  • আশিকুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাজীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

দাঁ হাতে সকাল শুরু হয় রোজিনা, আলেয়াসহ কয়েকজন নারী শ্রমিকের। কখনো ধারালো দাঁ দিয়ে সড়কের পাশের ঝোপঝাড়, আগাছা পরিষ্কার করেন। আবার কখনো কোদাল হাতে ভরাট করেন ছোট বড় গর্ত। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাদের এই কঠোর শ্রমে সড়ক পরিচ্ছন্নের কাজ করেন তারা। মাসে ৯ হাজার টাকা বেতনের এই শ্রমিকদেরও রয়েছে রঙিন স্বপ্ন। অল্প টাকা বেতনে চলে সংসার ও ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা। মায়েদের ঝড়ানো ঘাম আর কঠোর শ্রমে সুশিক্ষায় বেড়ে উঠবে সন্তান এমনটাই স্বপ্ন তাদের। 

গাজীপুরের সফিপুরে স্থানীয় সরকার (এলজিইডি) এর তত্ত্বাবধানে একটি আঞ্চলিক সড়ক পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ১০ জন নারী শ্রমিক। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মোট ৮ ঘণ্টা কাজ করেন তারা। বিনিময়ে মাথা পিছু বেতন পান ৯ হাজার টাকা।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, দাঁ হাতে নিয়ে সড়কের দুই পাশের আগাছা, ঝোপঝাড় পরিষ্কার করেন তারা। তীব্র তাপদাহে চারপাশ যখন হাসফাস করছে তখনো তাদের এই কর্মযজ্ঞ চলে। ঘাম ঝড়া ক্লান্ত শরীর নিয়ে কোন গাছের নিচে বিশ্রাম আর দুপুরের খাবার খেতে দেখা যায় তাদের।


তাদের একজন রোজিনা বেগম বার্তা২৪ কে বলেন, 'স্বামী অটোরিকশা চালায়। সংসারে দুই মেয়ে এক ছেলে। স্বামীর রোজগারে সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যায়। তাই আমি এই কাজ নিছি। রোদে গরমে সড়কে কাজ করতে খুব কষ্ট হয়। তারপরেও কষ্ট গায়ে মাখি না। এই টাকায় বাচ্চাদের পড়ালেখা করাই। একটু ভাল জামাকাপড় কিনে দেই। সন্তানরা একদিন বড় হলে আমাদের এই কষ্ট দূর হবে।'

বিজ্ঞাপন

তাদের একজন আলেয়া খাতুন বার্তা২৪ কে বলেন, 'আমাগো কাছে মাসে ৯ হাজার টেকা অনেক মনে হয়। এই টেকা থাইকা পোলাপাইন লইয়া মাসে একদিন গরুর মাংস খাই। পোলা মাইয়া রে স্কুলে পড়াই। আমাগো মতো গরিব মানুষের তো এত বড় স্বপ্ন নাই। যা আছে তা কোন মতে চইলা যায়।'

শ্রমিক দিবসে তাদের কি দাবি জানতে চাইলে, আলেয়া খাতুন বার্তা২৪ কে বলেন, 'আমরা কোন দিবস বুঝি না। পেটের দায়ে ঘাম ঝড়াই। কাম করি টেকা পাই। যে দিন বন্ধ পাই ওই দিনটা ঈদের মতো লাগে। তয় আমাগো একটাই চাওয়া সরকার আমাগো মতো অল্প বেতনের শ্রমিকদের দিকে একটু দয়া করুক।'

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা কালিয়াকৈর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন হান্নান বলেন, 'আমাদের দেশে অনেক নারী শ্রমিক আছেন যারা পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করেন। তবে বেতনের ক্ষেত্রে কিছুটা বৈষম্য রয়েছে। শ্রমিক দিবসে আমাদের মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষ থেকে নারীদের বেতন বৈষম্য সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।'