মরে গেলেই বেঁচে যাই!

, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-23 23:41:05

মাস দেড়েক আগে আগুনে পুড়ে সর্বস্ব হারানো মানুষগুলোকে করোনার কারণে এখন পুরোপুরি বেকার জীবন যাপন করতে হচ্ছে। কি করে চলছে তাদের জীবন একবার ভেবে দেখার অনুরোধ করেছেন তারা।

মিরপুর ট ব্লক (ঝিলপাড়) বস্তিবাসীরা সরকার ও প্রশাসনের প্রতি এমন অনুরোধ জানিয়েছেন। ১১ মার্চ আগুনে পুড়ে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে পরিবারগুলো। যখন নতুন করে উঠে দাঁড়াবার সংগ্রামে নেমেছিলেন, তখনই মহামারি করোনার কবলে পড়তে হয়েছে তাদেরকে। বিশেষ করে দিনমজুরদের অবস্থা অবর্ণনীয়।

অনেকে এখনও অন্যের ঘরে আশ্রিত। কেউ আবার খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করছে। অল্পসংখ্যক ঘর উঠেছে। তাতে কেউ কেউ উঠতে শুরু করেছেন। বেশিরভাগ ঘরের যায়গা এখনও ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সরকার থেকে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা পেয়েছেন ঘর মালিকরা। আর সর্বস্ব হারানো এই পরিবারগুলোর ভাগ্যে জুটেছে ২০ কেজি করে চাল।

সেই চাল দিয়ে আর কতদিন চলে। চার-পাঁচ সদস্যের পরিবারগুলো এখন ত্রাহি অবস্থা। যারা দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন তাদের কষ্ট ভাষাতীত। অনেক বিধবা মহিলা বাসা-বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন। তারাও এখন পুরোপুরি বেকার। করোনার ভয়ে বাসা মালিকরা তাদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।

ত্রাণের আশার প্রহর গুনে যাচ্ছেন। তারা কিংবা তাদের আশপাশে এখনও কেউ ত্রাণ পাননি। অনেকের চুলায় আগুন জ্বলছে না। জীবন কাটছে তাদের অনাহারে অর্ধাহারে। দোকানে মিলছে না বাঁকি।

আগুনে পুড়ে যায় পুরো বস্তি

মমতাজ বেগম জানালেন ঘরে তার সন্তান সম্ভব্য মেয়ে। কোনো খাবার নেই। দোকানে গিয়েছিলাম চাল বাকি আনতে। দোকানদার ফেরত দিয়েছে, বলেছে আগের বকেয়া শোধ করতে। কি করবো বুঝতে পারছি না। জীবনে অনেক কষ্ট গেছে কিন্তু কারো কাছে হাত পাতিনি। এখনও কারো কাছে হাত পাততে লজ্জা লাগছে। এতো কষ্ট আর ভালো লাগে না। এরচেয়ে করোনা হয়ে মরে গেলেই বেঁচে যাই। বলতে বলতে তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। আঁচল দিয়ে চোখ মুছে কান্না আড়াল করার চেষ্টা করেন।

মালিক নতুন করে টিনের ঘর করে দিয়েছেন তাতে দু’দিন হলো ফের উঠেছেন মনির হোসেন। ভোলা জেলার বাসিন্দা কাঠ মিস্ত্রি মনির হোসেন আগুনে সব হারিয়েছেন। কিছুই বের করতে পারেন নি ঘর থেকে। তিনিও এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি। বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার জানা মতে এই বস্তির কোনো বাসিন্দা এখন ত্রাণ পাননি। দূরে দূরে কিছু লোককে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। তবে এদিকে এখন আসেনি।

ত্রাণের জন্য আকুতি এসব অসহায় মানুষের

হাড়ির ভাত নাকি একটি টিপলে বুঝা যায় সেদ্ধ কেমন হয়েছে। ঢাকার ত্রাণ বিতরণের অবস্থাও অনেক করুণ। নেতারা তাদের পরিচিতদের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে কিছু ত্রাণ। আর কর্মীরাও নেমেছেন স্বজন প্রীতিতে। আবার নির্বাচিত কাউন্সিলররা দেখছেন তাদের ভোটারদের। যারা পাচ্ছেন তারাই হয়তো ঘুরে ফিরে পাচ্ছেন। হয়তো এটাও ঠিক, একমাস আগে যিনি ১০ কেজি চাল পেয়েছেন তারতো আবারও পাওয়ার কথা। না হলে এখন তার চলবে কি করে। আবার এক সংস্থার সঙ্গে আরেক সংস্থার কোনো সমন্বয় নেই। যে যার মতো বিতরণ করছেন। আবার রাতের আধারে বাসায় পৌঁছে দেওয়া পদ্ধতি স্বজনপ্রীতিকে আর উস্কে দিয়েছে।

ভাসমান, কিংবা যাদের চেনা জানা নেই, তারা চরম মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন। নেতাদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিলেও কোনই সহায়তা মিলছে না। সারা দেশে সংকট হওয়ায় আত্মীয় স্বজনের কাছে হাত পাতবেন সেই দরজাও বন্ধ। তাই অনেকে অনাহারে অর্ধাহারে নিজের চোখের জল ফেলে যাচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন একমাত্র সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বিতরণ করলে তারা ত্রাণ পাবেন। না হলে তাদের ভাগ্যে ত্রাণ জুটবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর